যুক্তরাষ্ট্রের মিত্র ভারত ও জাপানকে ‘জেনোফোবিক’ বললেন জো বাইডেন
মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন জাপান এবং ভারতকে 'জেনোফোবিক' [বিদেশিদের ব্যাপারে অহেতুক ভয় বা তাদের ঘৃণা করা] বলে অভিহিত করেছেন। পাশাপাশি তিনি দেশ দুটোকে রাশিয়া এবং চীনের মতো "অভিবাসী চায় না" এমন দেশ হিসেবে অভিহিত করেছেন।
জাপানের প্রধানমন্ত্রী ফুমিও কিশিদার রাষ্ট্রীয় সফরের সময় মার্কিন-জাপান জোটকে "অলঙ্ঘনীয়" বলার করার কয়েক সপ্তাহ পরেই জাপানেকে নিয়ে এমন সমালোচনা করলেন বাইডেন।
ভারতের মানবাধিকার ও ধর্মীয় স্বাধীনতা নিয়ে মার্কিন উদ্বেগ থাকা সত্ত্বেও দেশটির সাথে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক রয়েছে।
হোয়াইট হাউজ জানিয়েছে, বাইডেন কোন দেশকে আঘাত করে এ কথা বলেননি।
বুধবার সন্ধ্যায় তহবিল সংগ্রহের জন্য আয়োজিত একটি প্রচারণা অনুষ্ঠানে প্রধানত এশিয়ান-আমেরিকান শ্রোতাদের সাথে কথা বলতে গিয়ে বাইডেন বলেছিলেন, নভেম্বরের মার্কিন নির্বাচন "স্বাধীনতা, আমেরিকা ও গণতন্ত্র" এর জন্য।
তিনি দেশ দুটিকে 'জেনফোবিক' বলার কারণ হিসেবে বলেন, "কেন? কারণ আমরা অভিবাসীদের স্বাগত জানাই। এটা নিয়ে ভাবুন। কেন চীন অর্থনৈতিকভাবে এত স্থবির হয়ে পড়েছে? কেন জাপানের সমস্যা হচ্ছে? কেন রাশিয়া? কেন ভারত? কারণ তারা জেনোফোবিক। তারা অভিবাসী চায় না।"
বিবিসি মন্তব্যের জন্য জাপান, ভারত, চীন এবং রাশিয়ার মার্কিন দূতাবাসের সাথে যোগাযোগ করলেও তাৎক্ষণিক কোন উত্তর পায়নি।
বেশ কয়েকজন বিশিষ্ট মার্কিন ব্যক্তিবর্গ তার এ মন্তব্যটির সমালোচনা করেছেন।
সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম এক্স-এ ট্রাম্প প্রশাসনের সাবেক মার্কিন উপ-সহকারী প্রতিরক্ষা সচিব এলব্রিজ কোলবি লিখেছেন, "জাপান এবং ভারত 'আমাদের দুটি অত্যন্ত শক্তিশালী ও গুরুত্বপূর্ণ মিত্র।' আমাদের তাদের সাথে সম্মানের সাথে কথা বলা উচিত কারণ এটি তাদের প্রাপ্য। আমাদের মিত্রদের প্রতি সংকীর্ণ প্রগতিশীল দৃষ্টিভঙ্গি রাখা বোকামি।"
যদিও জাপান, ভারত এবং চীনে তুলনামূলকভাবে কম বিদেশি কর্মী রয়েছে, রাশিয়া অভিবাসী শ্রমিকের ওপর অনেক বেশি নির্ভরশীল। তাদের বেশিরভাগই মধ্য এশিয়া থেকে রাশিয়ায় কাজের জন্য যান।
জাপান এবং চীনে অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি মন্থর হলেও, আন্তর্জাতিক নিষেধাজ্ঞার মধ্যেই ইউক্রেনের সাথে যুদ্ধ অব্যাহত থাকায় গত বছর রাশিয়া অর্থনীতি কিছুটা পুনরুদ্ধার করতে পেরেছে।
ভারত ইতোমধ্যেই অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির অভিজ্ঞতা অর্জন করেছে এবং ২০২৩ সালে যুক্তরাজ্যকে ছাড়িয়ে বিশ্বের পঞ্চম বৃহত্তম অর্থনীতিতে পরিণত হয়েছে।
হোয়াইট হাউজ অভিযোগ অস্বীকার করে বলেছে, বাইডেনের মন্তব্য অবমাননাকর ছিল না। মার্কিন জাতীয় নিরাপত্তা মুখপাত্র জন কিরবি বলেছেন, বাইডেন মার্কিন অভিবাসন নীতি সম্পর্কে বিস্তারিত বলতে গিয়েই এ মন্তব্য করেছেন।
ওয়াশিংটন ডিসি-ভিত্তিক আমেরিকান এন্টারপ্রাইজ ইনস্টিটিউটের দক্ষিণ এশিয়া বিশেষজ্ঞ সদানন্দ ধুমে বিবিসিকে বলেছেন, বাইডেনের মন্তব্য সম্ভবত ভারতে ভালোভাবে গ্রহণ করা হবে না কারণ দেশটিতে "জাতীয়তাবাদী উত্থান" চলছে।
তিনি বলেন, চীনের সাথে তুলনাকে হয়ত ভারত ভালোভাবে নিবে না।
এপ্রিলের শেষের দিকে মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরের একটি প্রতিবেদনে ভারতে "উল্লেখযোগ্য" মানবাধিকার লঙ্ঘনের কথা জানানো হয়েছিল। এর জবাবে ভারত সরকার বলেছিল, প্রতিবেদনটি "গভীরভাবে পক্ষপাতদুষ্ট এবং ভারতের প্রতি খুবই দুর্বল বোঝাপড়ার প্রতিফলন।"
সদানন্দ ধুমে বলেছেন, মন্তব্যটির দীর্ঘ মেয়াদে 'চায়ের কাপে ঝর তোলা' এবং 'মার্কিন-ভারত সম্পর্ককে উল্লেখযোগ্যভাবে প্রভাবিত করার' সম্ভাবনা নেই।
জাপানে কয়েক দশক ধরে বিশ্বের সবচেয়ে সীমাবদ্ধ অভিবাসন নীতি থাকলেও এটি সম্প্রতি বিদেশি কর্মীদের দেশে প্রবেশের সুবিধা দিয়ে ক্রমাগতভাবে কমে আসা জনসংখ্যা সংকটকে মোকাবেলা করার চেষ্টা করছে।
বাইডেন ২০২০ সালের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের প্রচারণার সময় সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পকে জেনোফোবিক বলে সমালোচনা করলেও তিনি অভিবাসনের বিষয়ে আরও সীমাবদ্ধ অবস্থান গ্রহণ করেছেন। যুক্তরাষ্ট্র-মেক্সিকো সীমান্ত নিয়ে তার নীতিতে অনেকেই অসন্তুষ্ট।
অনুবাদ: তাসবিবুল গনি নিলয়