১১০ দিনে ২০০ ফ্লাইটে চড়ে তিনি চুরি করেছেন লাখ লাখ টাকার মালামাল
একেই হয়তো বলে 'রথ দেখা, আবার কলাও বেচা'। ভ্রমণের সাথে উপরি কামাইয়ের এমন পন্থা বেঁছে নেয় ভারতের এক চোর। ১১০ দিনে ভারতের অভ্যন্তরে চলাচলকারী ২০০ ফ্লাইটে সওয়ার হয়ে যে হাতিয়েছে লাখ লাখ টাকার মূল্যবান মালামাল।
২০২৩ সালের সংঘটিত এসব চুরির অধিকাংশই হয়েছে বিমানবন্দরগুলোতে।
চুরির শিকার হয়েছিলেন হায়দ্রাবাদের এক নারীও। হাতব্যাগ থেকে ৭ লাখ রুপির ( ৯ লাখ ৮০ হাজার টাকা) গহনা চুরি হওয়ার অভিযোগ করেন তিনি পুলিশের কাছে। এরপরে পুলিশ আরেকটি অভিযোগ পায়। সেখানে ভারতীয় বংশদ্ভুত যুক্তরাষ্ট্রের এক নাগরিক জানান, তাঁর কেবিন ব্যাগ থেকে ২০ লাখ টাকার মূল্যবান মালসামান খোয়া গেছে।
এবার পুলিশকে নড়েচড়ে বসতেই হয়। বিভিন্ন বিমানবন্দরের ধারণকৃত সিসিটিভি ফুটেজ দেখে তাঁরা রাজেশ কাপুর নামের এক ব্যক্তিকে শনাক্ত ও গ্রেপ্তার করে।
দিল্লি, হায়দ্রাবাদ ও অমৃতসর বিমানবন্দরের দীর্ঘসময়ের সিসিটিবি ফুটেজ বিশ্লেষণ করে দিল্লির প্রয়াগরাজ এলাকা থেকে তাঁকে গ্রেপ্তার করা হয়।
ভারতের বিমানবন্দরগুলো দেশটির অন্যতম নিরাপত্তাবেষ্টিত স্থাপনা। সেখানে এক বছর ধরে কীভাবে এই অপরাধ করা হয়েছে গ্রেপ্তারকৃত রাজেশ পুলিশকে তার বিস্তারিত জানিয়েছেন।
দিল্লি পুলিশের ডেপুটি কমিশনার ঊষা রাংরানি জানান, রাজেশ কানেক্টিং ফ্লাইটে চলাচলকারী যাত্রীদের টার্গেট করতো। যেমন যে মহিলার গহনা চুরি হয়েছে, তিনি গত বছরের এপ্রিলে হায়দ্রাবাদ থেকে দিল্লিতে আসছিলেন ইন্দিরাগান্ধী আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে এয়ারইন্ডিয়ার যুক্তরাষ্ট্রগামী একটি ফ্লাইট ধরতে।
একইভাবে ভার্জিন্দারজিত সিং নামের ওই মার্কিন নাগরিক অমৃতসর থেকে দিল্লি কানেক্টিং ফ্লাইটে আসছিলেন জার্মানির ফ্রাঙ্কফুটগামী ফ্লাইট ধরতে।
ডেপুটি কমিশনার আরও বলেন, রাজেশ বিমানবন্দরে আসা বয়স্ক ও নারীদের আচার-আচরণ ভালোভাবে লক্ষ করতো। এরপর চুপিসারে তাঁদের ব্যাগেজ ডিক্লারেশন স্লিপ পড়ে ব্যাগে কী ধরনের মূল্যবান জিনিস আছে তার ধারণা নিত।
সিসিটিভি ফুটেজে দেখা যায়, টার্গেট সম্পর্কে ভালো করে দেখেশুনে নিশ্চিত হওয়ার পরে রাজেশ বেশিরভাগ সময়েই বোর্ডিং গেটের কাছে এসে এসব কাজ করতো।
পুলিশ জানায়, অভিযুক্ত রাজেশ নিজের আসন পরিবর্তন করে দিতে এয়ারলাইনকে অনুরোধ করতেন, যাতে চুরির জন্য যাকে সে লক্ষ্যস্থির করেছে, তার পাশে আসন পায়। কখনো-সখনো কাকতালীয়ভাবে কাঙ্ক্ষিত সিট সে পেয়েও যায়, আবার কখনোবা তা না পেলে কোনো অজুহাত দেখিয়ে আগের আসন বদলে ওই যাত্রীর পাশে চলে আসত।
এরপর মাথার ওপরে ব্যাগ রাখার জায়গায় নিজের ব্যাগ রাখার ছলে ওই যাত্রীর ব্যাগ থেকে চটপট গহনা বা অন্যান্য মূল্যবান জিনিস হাতিয়ে নিত। ফ্লাইটে অন্য যাত্রীরা যখন উঠছে, তারমধ্যেই এই কাজটি সেরে নিত সে।
শনাক্ত করার পরে অভিযুক্তের ফোন নম্বর এয়ারলাইন্সগুলোর থেকে সংগ্রহ করে পুলিশ। দেখা যায়, বুকিংয়ের সময় সে ভুয়া নম্বর দিয়েছিল। আর ওই নম্বরগুলো অন্য কারো নামে নিবন্ধিত। এভাবেই প্রমাণ না রাখার চেষ্টা করেছিল রাজেশ।
'গেস্ট হাউসের মালিক'
দিল্লির প্রয়াগরাজে 'রিকি ডিলাক্স' নামের একটি গেস্ট হাউসের মালিক রাজেশ। নয়াদিল্লি রেলস্টেশনের কাছেই তাঁর গেস্ট হাউস। তিনি এই ভবনের তৃতীয় তলায় থাকতেন, আর অন্য তলাগুলো ছিল গ্রাহকদের থাকবার জন্য। দিল্লি পুলিশ জানায়, তাঁর মানি এক্সচেঞ্জ ব্যবসা এবং দিল্লিতে একটি মোবাইল সারাইয়ের দোকানও রয়েছে।
বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই দিল্লি, চেন্নাই, হায়দ্রাবাদ, চন্ডিগর, ব্যাঙ্গালোর, মুম্বই ও অমৃতসর বিমানবন্দরের নারী যাত্রীদের ব্যাগ থেকে মূল্যবান জিনিস চুরি করে রাজেশ। প্রয়াগরাজে তাঁর বাড়ি থেকে বিপুল পরিমাণ স্বর্ণ ও রূপার গহনা উদ্ধারও করেছে পুলিশ। তবে এরমধ্যেই বেশকিছু গহনা দিল্লির কাজলবাগের এক স্বর্ণকারের কাছে বিক্রির কথাও সে স্বীকার করেছে পুলিশের কাছে।
পুলিশ আরো জানায়, এই চোর আগে ট্রেনে চুরি করতো, একবার ধরা পড়ার পরে সে গা ঢাকা দেয়। এরপর বিমানবন্দরে চুরির নতুন কায়দা বের করে।
অনুবাদ: নূর মাজিদ