ফিলিপাইনের ছোট এক শহরের মেয়রকে কেন চীনের গুপ্তচর বলা হচ্ছে?
ফিলিপাইনের ছোট শহর বামবানের মেয়র এলিস গুওর বিরুদ্ধে চীনের গুপ্তচর হওয়ার অভিযোগ আনা হয়েছে।
ফিলিপাইন অফশোর গ্যাম্বলিং অপারেশন (পোগো) নামে অনলাইনে জুয়া খেলার একটি প্রতিষ্ঠানের সাথে তার সম্পৃক্ততা পাওয়া গেছে যার অধিকাংশ গ্রাহক চীনের নাগরিক। গত মার্চে দেশটির আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী বামবান শহরে অবস্থিত প্রতিষ্ঠানটির কার্যালয়ে অভিযান চালানোর পরেই এটির সাথে তার সম্পৃক্ততার বিভিন্ন তথ্য পাওয়া যায়।
কার্যালয়টি যেখানে অবস্থিত ছিল তার অর্ধেক জমির মালিকানা ছিল এলিস গুওর নামে। কিন্তু এলিসের দাবি, দুই বছর আগে মেয়র নির্বাচনে অংশ নেওয়ার পূর্বেই তিনি জমিটি বিক্রি করে দিয়েছিলেন।
ফিলিপাইনের সাবেক প্রেসিডেন্ট রদ্রিগো দুতার্তের সময় এসব প্রতিষ্ঠান ফিলিপাইনে অধিক মাত্রায় বিস্তার লাভ করেছিল। ২০২২ সালে প্রেসিডেন্টের দায়িত্ব ছেড়ে দেয়া দুতার্তের চীনের সাথে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক ছিল।
৩৫ বছর বয়সী এলিস যিনি নিজেকে বামবানের অধিবাসী বলে দাবি করেছেন, এ মাসের শুরুতে সিনেটে তার নামে আসা অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে জবাবদিহিতা করেছেন।
সিনেটরদের প্রশ্নের জবাবে এলিস জানিয়েছেন, ১৭ বছর হওয়ার পরেই তার জন্ম নিবন্ধন করানো হয়েছে। কিন্তু কেন এত দেরিতে জন্ম নিবন্ধন করেছেন সে সম্পর্কে তিনি বিস্তারিত জানাতে পারেননি।
তিনি আরো জানিয়েছেন, তিনি বাড়িতেই হোম স্কুল প্রোগ্রামের অধীনে পড়াশোনা করেছেন। কিন্তু তিনি প্রোগ্রামের নাম জানাতে পারেননি এবং যেসব শিক্ষক তাকে পড়িয়েছেন তাদের মধ্যে শুধু একজনের নাম জানাতে পেরেছেন। তিনি জানিয়েছেন, বাড়িতেই তাদের শুকরের খামার ছিল যেখানে তিনি তার ছোটবেলা কাটিয়েছেন।
তিনি বলেছেন তার বাবা ফিলিপাইনের নাগরিক। কিন্তু ব্যাবসায়িক নথি অনুসারে তার বাবাকে চীনের নাগরিক হিসেবে শনাক্ত করা হয়েছে।
সিনেটের শুনানির পর সিনেটর রিসা হন্টিভেরোস তার (এলিস) ব্যক্তিগত ও ব্যবসায়িক ইতিহাস সম্পর্কে অস্পষ্টতা থাকায় চীনের সাথে এলিসের সম্ভাব্য সম্পর্ক থাকতে পারে বলে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন।
ফিলিপাইনের প্রেসিডেন্ট বংবং মার্কোসও তাকে নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করে বলেছেন, তার নাগরিকত্বের বিষয়টি সঠিকভাবে জানার উদ্দেশ্যে ইমিগ্রেশন ব্যুরোর সহযোগিতায় তদন্ত চলছে।
এদিকে এলিস গুও সিনেটরদের আশ্বস্ত করে বলেছেন, তিনি ফিলিপাইন অফশোর গ্যাম্বলিং অপারেশনকে সমর্থন বা রক্ষা করছেন না।
এলিসের অতীত সম্পর্কে খুব কমই জানা গেছে যা গ্রামীণ ফিলিপাইন অঞ্চলে একটি অস্বাভাবিক ঘটনা। এসব অঞ্চলের স্থানীয় প্রশাসনিক কর্মকর্তারা প্রায়ই সুপরিচিত রাজনৈতিক পরিবারের সদস্য হয়ে থাকেন। তিনি বর্তমানে একজন নির্বাচিত মেয়র হিসেবে প্রথম মেয়াদে দায়িত্ব পালন করছেন।
ফিলিপাইনের নির্বাচন কমিশন থেকে জানানো হয়েছে, এলিস হয় ২০২১ সালে অথবা মেয়র পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার ও জেতার এক বছর আগে বামবানে ভোট দেয়ার জন্য নিবন্ধন করেছিলেন।
এমনকি তার পারিবারিক নাম গুও সাধারণত চীনা বংশোদ্ভূত ফিলিপাইনের নাগরিকদের মধ্যে দেখা যায় না। স্পেনের উপনিবেশ হওয়া সত্ত্বেও ফিলিপাইনের সাথে কয়েক শতাব্দীর বাণিজ্য সম্পর্কের জন্য চীনের সাথে শক্তিশালী সাংস্কৃতিক সংযোগ রয়েছে দেশটির।
গুপ্তচরবৃত্তির অভিযোগ নিয়ে এলিস কোনো মন্তব্য করেননি। গত সপ্তাহে সিনেটে জবাবদিহিতা করার পর তিনি সংবাদমাধ্যমে সাক্ষাৎকার দেননি।
ফিলিপাইনের প্রেসিডেন্ট বংবং মার্কোস বলেছেন, এলিসকে নিয়ে তদন্তের লক্ষ্য হলো বিদেশি নাগরিকদের দেশটির সরকারি পদ থেকে সড়িয়ে ফেলা।
নির্বাচন কমিশন এবং ফিলিপাইনের সলিসিটর জেনারেল (বিচার বিভাগের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ পদাধিকারী) এলিস গুওর বিরুদ্ধে আসা অভিযোগ তদন্ত করছে। তদন্তে তার বেআইনিভাবে সরকারি পদে অধিষ্ঠিত থাকার বিষয়টি প্রমাণিত হলে তাকে পদ থেকে অপসারণ করা হতে পারে।
অনুবাদ: তাসবিবুল গনি নিলয়