গাজা যুদ্ধের ইতি টানতে হামাসের ইয়াহিয়া সিনওয়ারকে খুঁজে হত্যা করতে চায় যুক্তরাষ্ট্র
গাজায় হামাসের প্রধান ইয়াহিয়া সিনওয়ারকে খুঁজে বের করার চেষ্টা করছে যুক্তরাষ্ট্র। এর মাধ্যমে মানবতাবিরোধী এ যুদ্ধে ইসরায়েলের 'নিরঙ্কুশ বিজয়' নিশ্চিত করতে চায় হোয়াইট হাউস, তাহলেই চলমান লড়াইয়ে ইতি টানা যাবে বলে মনে করছে বাইডেন প্রশাসন। আন্তর্জাতিক গণমাধ্যম মিডল ইস্ট আইকে এমনটাই জানিয়েছেন মার্কিন কর্মকর্তারা।
যুক্তরাষ্ট্রের এই মিশন রাজনৈতিকভাবে সংবেদনশীল হওয়ায় দেশটির সাবেক ও বর্তমান কর্মকর্তারা নাম না প্রকাশের শর্তে মিডল ইস্ট আইয়ের (এমইই) সাথে কথা বলেন। তাঁরা জানান, যুক্তরাষ্ট্রের ধারণা গাজার কোনো গভীর সুড়ঙ্গে অবস্থান করছিলেন ৬১ বছরের সিনওয়ার। তাঁকে খুঁজে বের করতে ওই অঞ্চলে অনুসন্ধান তৎপরতা জোরালো করেছে যুক্তরাষ্ট্র।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক আরেক কর্মকর্তা জানান, বাইডেন প্রশাসন ধারণা করছে সিনওয়ার সুড়ঙ্গপথে মিশরের সিনাই উপত্যকায় পালিয়ে গিয়ে থাকতে পারেন। এমনকী সিরিয়া বা লেবাননে পালানোর সম্ভাবনা আছে বলেও মনে করে ওয়াশিংটন।
এবিষয়ে জানতে চলতি সপ্তাহের শুরুতে হোয়াইট হাউসের সঙ্গে যোগাযোগ করেছিল এমইই। এসময় তাঁদের মার্কিন জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা জেক সুলিভানের সাথে কথা বলার পরামর্শ দেওয়া হয়। তবে সুলিভান জানান, সিনওয়ারের বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্রের হাতে থাকা গোয়েন্দা তথ্য নিয়ে তিনি কোনো মন্তব্য করবেন না।
সাবেক ও বর্তমান মার্কিন কর্মকর্তারাও সুনির্দিষ্ট কোনো গোয়েন্দা তথ্যের ইঙ্গিত দেননি, অবশ্য এটি স্বীকার করেন যে, সিনওয়ারের সবশেষ অবস্থান সম্পর্কে গোয়েন্দা তথ্যের ঘাটতি রয়েছে।
তাঁদের মতে, সিনওয়ারের এক মাস আগের গাজায় সবশেষ অবস্থান সম্পর্কে জানতো বাইডেন প্রশাসন, কিন্তু বর্তমানে তিনি কোথায় আছেন – সেটি তাঁদের জানা নেই।
জাতীয় নিরাপত্তা সংক্রান্ত বিষয়ে প্রাক্তন চার মার্কিন প্রেসিডেন্টকে পরামর্শ দিয়েছেন সাবেক সিআইএ কর্মকর্তা ব্রুস রিডেল। তিনি এমইই'কে বলেন, সিনওয়ারের সবশেষ অবস্থান সম্পর্কে তথ্যের অস্পষ্টতা খুবই বাজে ধরনের।
গোয়েন্দা তথ্যের দিক থেকে এক মাস পিছিয়ে থাকার বিষয়ে তাঁর মন্তব্য, "আমরা এই মুহূর্তের (রিয়েল-টাইম) তথ্যের ধারেকাছেও নেই।"
গত মাসেই হামাস জানায়, গাজায় দখলদার ইসরায়েলি বাহিনীর বিরুদ্ধে লড়াইয়ের এলাকাগুলো পরিদর্শন করেছেন সিনওয়ার। এমনকী বিদেশে অবস্থানকারী হামাস নেতাদের সাথেও যোগাযোগ করেছেন।
প্যান-আরব গণমাধ্যম দ্য নিউ আরবকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে হামাসের এক কর্মকর্তা বলেন, সিনওয়ার সবসময় সুড়ঙ্গে অবস্থান করেননি, যেমনটা ইসরায়েলের দাবি। বরং তিনি মাঠ পর্যায়ের দায়িত্ব পালনও করছেন।
বাইডেন প্রশাসন মনে করছে, সিনওয়ারকে হত্যা বা আটক করা গেলে, ইসরায়েলের ওপর যুদ্ধ বন্ধ করার চাপ তৈরি করা যাবে। এজন্যই তাঁর অনুসন্ধান নতুন উদ্যমে শুরু করেছে মার্কিন গোয়েন্দারা।
গত সপ্তাহে মার্কিন গণমাধ্যম সিএনএনকে প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন বলেন, "আমি বিবিকে (ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু) বলেছি, আমেরিকায় আমরা যে ভুল করেছি, আপনি তাঁর পুনরাবৃত্তি করেন না। আমরা বিন লাদেনকে ধরতে চেয়েছিলাম। এবার আপনাকে সিনওয়ারকে ধরতে সাহায্য করব।"
আল কায়েদা নেতার সাথে সিনওয়ারের অনুসন্ধানের তুলনা করে কাজটি যুক্তরাষ্ট্র ও ইসরায়েলের জন্য এই মুহূর্তে কতোটা কঠিন হয়ে পড়েছে তারই ইঙ্গিত মেলে।
পাকিস্তানে অবস্থানরত ওসামা বিন লাদেনকে খুঁজে বের করে হত্যা করতে ১০ বছর সময় লেগেছিল আমেরিকার।
অনুবাদ: নূর মাজিদ