দক্ষিণ কোরিয়ায় ‘ময়লা ও মলভর্তি’ বেলুন ফেলল উত্তর কোরিয়া!
'ময়লা ও মল' ভর্তি করে দক্ষিণ কোরিয়ায় অন্তত ২৬০টি বেলুন ফেলেছে উত্তর কোরিয়া। এ ঘটনার পর সাধারণ মানুষকে ঘরে থাকতে সতর্ক করে দিয়েছে দক্ষিণ কোরিয়ার কর্তৃপক্ষ।
সাদা রঙের এসব বেলুন এবং এগুলোর সঙ্গে বেঁধে রাখা প্লাস্টিকের ব্যাগ না ধরতেও বাসিন্দাদের সতর্ক করেছে দক্ষিণ কোরিয়ার সেনাবাহিনী। কারণ এসব ব্যাগে 'নোংরা বর্জ্য ও আবর্জনা' রয়েছে।
বুধবার (২৯ মে) দক্ষিণ কোরিয়ার সেনাবাহিনী বেলুনের সঙ্গে বাঁধা প্লাস্টিকের ব্যাগের ছবি প্রকাশ করেছে। অন্যান্য ছবিতে দেখা গেছে, দক্ষিণ কোরিয়ার মাটিতে এসে পড়া বেলুনের ভেতরে থাকা ময়লা আশপাশে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে রয়েছে। এর মধ্যে একটি ব্যাগে লেখা রয়েছে: 'মল'।
দক্ষিণ কোরিয়ার ৯ প্রদেশের ৮টিতেই উত্তর কোরিয়ার পাঠানো এসব বেলুন পাওয়া গেছে। এসব বেলুনে যা পাওয়া গেছে, তা পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে দেখছে দক্ষিণ কোরিয়া।
১৯৫০-এর দশকের কোরিয়া যুদ্ধের পর থেকেই দুই কোরিয়া পাল্টাপাল্টি প্রোপ্যাগান্ডামূলক কর্মসূচির অংশ হিসেবে একে অপরকে বেলুন পাঠিয়ে আসছে।
দক্ষিণ কোরিয়ার সেনাবাহিনী এর আগে বলেছে, উত্তর কোরিয়ার পাঠানো এসব বেলুনে কোনো ধরনের প্রোপ্যাগান্ডামূলক কোনো লিফলেট আছে কি না, তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে।
কিছুদিন আগে উত্তর কোরিয়া হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেছিল, তাদের সীমান্ত এলাকায় সম্প্রতি বেলুনে করে 'ঘন ঘন লিফলেট ও অন্য ময়লা-আবর্জনা' পাঠানো হচ্ছে। তারা এর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেবে। সেই হুঁশিয়ারির অল্প কিছুদিন পরই দক্ষিণে এসব বেলুন পাঠাল উত্তর কোরিয়া।
গত রোববার রাষ্ট্রায়ত্ত গণমাধ্যমে এক বিবৃতিতে উত্তর কোরিয়ার উপপ্রতিরক্ষামন্ত্রী দ্বিতীয় কিম ক্যাং বলেন, 'অচিরেই [দক্ষিণ কোরিয়ার] সীমান্ত এলাকা ও অভ্যন্তরে পরিত্যক্ত কাগজ ও ময়লা-আবর্জনার স্তূপ পাঠানো হবে। তখন তারা বুঝবে, এসব পরিষ্কার করতে কতটা কষ্ট হয়।'
দক্ষিণ কোরিয়ার আনুষ্ঠানিক নাম রিপাবলিক অভ কোরিয়া (আরওকে), উত্তরের আনুষ্ঠানিক নাম ডেমোক্রেটিক পিপলস রিপাবলিক অভ কোরিয়া (ডিপিআরকে)।
চলমান পরিস্থিতে গত মঙ্গলবার বিকেলে দক্ষিণ কোরিয়ার রাজধানী সিউল ও সীমান্ত এলাকার বাসিন্দারা তাদের প্রাদেশিক কর্তৃপক্ষগুলোর কাছ থেকে টেক্সট মেসেজ পান। বাসিন্দাদের 'ঘরের বাইরের কাজকর্ম থেকে বিরত' থাকতে বলা হয় ওই মেসেজে।
তাছাড়া 'অজ্ঞাত কোনো বস্তু' দেখলেও নিকটস্থ সামরিক ঘাঁটি বা থানায় জানানোর জন্য অনুরোধ করা হয় তাদের।
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে শেয়ার করা ছবিতে দেখা গেছে, স্বচ্ছ, সাদা বেলুনের ভেতরে টয়লেট পেপার, কালো মাটি, ব্যাটারিসহ অন্যান্য জিনিসপত্র রয়েছে।
কিছু ছবিতে পুলিশ ও সামরিক কর্মকর্তাদের দেখা গেছে।
দক্ষিণ কোরিয়ার বার্তাসংস্থা ইয়ুনহাপ এক প্রতিবেদনে বলেছে, কিছু বেলুনের ভেতর থাকা কালচে বর্জ্য দেখে মনে হয়েছে 'সেগুলো মল'।
দক্ষিণ কোরিয়ার সেনাবাহিনী বেলুন পাঠানোর ঘটনাকে 'আন্তর্জাতিক আইনের সুস্পষ্ট লঙ্ঘন' আখ্যা দিয়ে নিন্দা জানিয়েছে। পাশাপাশি উত্তর কোরিয়াকে এই 'অমানবিক ও সংবেদনহীন কাজ' অবিলম্বে বন্ধ করতে বলেছে।
দক্ষিণ কোরিয়ার অধিকারকর্মীরা পিয়ংইয়ংয়ে বেলুনে করে প্রোপ্যাগান্ডামূলক লিফলেট ছাড়াও নগদ টাকা, নিষিদ্ধ মিডিয়া কনটেন্ট ও চকো পাই স্নিকার পাঠান। অর্থাৎ উত্তর কোরিয়ায় নিষিদ্ধ সব জিনিসই পাঠান তারা।
এর আগে চলতি মাসের গোড়ার দিকে দক্ষিণ কোরিয়াভিত্তিক অধিকারকর্মীদের একটি দল দাবি করে, সীমান্তবর্তী এলাকায় পিয়ংইয়ং-বিরোধী প্রোপ্যাগান্ডামূলক লিফলেট এবং কোরীয় পপ সংগীত ও মিউজিক ভিডিওযুক্ত ইউএসবি-ভর্তি ২০টি বেলুন পাঠিয়েছে তারা।
২০২০ সালের ডিসেম্বরে উত্তর কোরিয়াবিরোধী প্রোপ্যাগান্ডামূলক লিফলেট পাঠানোকে অপরাধ ঘোষণা করে একটি আইন পাশ করে দক্ষিণ কোরিয়ার পার্লামেন্ট। কিন্তু সমালোচকেরা এই আইনের সমালোচনা করে বলেন, এতে বাক্স্বাধীনতা ও মানবাধিকার খর্ব হতে পারে।