উ. কোরিয়ার আবর্জনা ভর্তি বেলুনের জবাবে কে-পপ ও কে-ড্রামাভর্তি বেলুন পাঠাল দ. কোরিয়া
এবার দক্ষিণ কোরিয়ার অধিকারকর্মীরা ইউএসবি স্টিকে কে-পপ এবং কে-ড্রামা বহনকারী বেলুন পাঠিয়েছে উত্তর কোরিয়ায়।
এর আগে, 'ময়লা ও মল' ভর্তি করে দক্ষিণ কোরিয়ায় অন্তত ২৬০টি বেলুন পাঠিয়েছিল উত্তর কোরিয়া।
অধিকার সংগঠন 'ফাইটার্স ফর আ ফ্রি নর্থ কোরিয়া' (এফএফএনকে)- বৃহস্পতিবার সকালে ইউএসবি স্টিকে কে-পপ এবং কে-ড্রামা বহনকারী বিশালাকার বেলুনগুলো শূন্যে ভাসিয়েছে।
ভিডিওতে দেখা গেছে, বেলুনগুলো ভেসে যাচ্ছে, কোনোটায় বিশাল বিশাল পোস্টার লাগানো এবং বাকিগুলোতে ছোট প্লাস্টিকের ব্যাগ লাগানো।
এফএফএনকে জানিয়েছে, এসব প্যাকেটের ভেতরে উত্তর কোরিয়ার নেতা কিম জং উনের বিষোদ্গার করা দুই লাখ লিফলেট, দক্ষিণ কোরিয়ার মিউজিক ভিডিও কে-পপ এবং টেলিভিশন অনুষ্ঠান কে-ড্রামার পাঁচ হাজার ইউএসবি স্টিক এবং দুই হাজারটি এক ডলারের নোট ছিল।
এফএফএনকে-র মতো বিভিন্ন সংস্থা বেশ কয়েক বছর ধরে এ ধরনের বেলুন পাঠাচ্ছে। এসব বেলুনে উত্তর কোরিয়া সরকারের নিষিদ্ধ করা বিভিন্ন জিনিস (দ. কোরীয় পপ সংগীত ও মিউজিক ভিডিওযুক্ত ইউএসবি), খাবার, ওষুধ, রেডিও, সচেতনতামূলক লিফলেট প্রভৃতি ভর্তি থাকে।
এসবের জবাবে গত মে মাসে দক্ষিণ কোরিয়ায় বিশাল বিশাল আবর্জনা ভর্তি বেলুন পাঠায় উত্তর কোরিয়া। এসব বেলুনে আবর্জনা, মাটি, কাগজ, প্লাস্টিক প্রভৃতি ছিল।
উত্তর কোরিয়ার উপ-প্রতিরক্ষামন্ত্রী কিম কাং ইলের বরাত দিয়ে দেশটির রাষ্ট্রীয় সংবাদমাধ্যম কেসিএনএ জানিয়েছে, পিয়ংইয়ং দাবি করেছে যে তারা ১৫ টন আবর্জনাবাহী মোট সাড়ে তিন হাজার বেলুন উত্তর কোরিয়ায় পাঠিয়েছে।
এই বেলুনগুলো গত সপ্তাহে দক্ষিণ কোরিয়ার বিভিন্ন এলাকায় এসে পৌঁছায়।
দক্ষিণ কোরিয়ার ৯ প্রদেশের ৮টিতেই উত্তর কোরিয়ার পাঠানো এসব বেলুন পাওয়া গেছে। এসব বেলুনে যা পাওয়া গেছে, তা পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে দেখছে দক্ষিণ কোরিয়া।
এ ঘটনার পর সাধারণ মানুষকে ঘরে থাকতে সতর্ক করে দিয়েছে দক্ষিণ কোরিয়ার কর্তৃপক্ষ।
সাদা রঙের এসব বেলুন এবং এগুলোর সঙ্গে বেঁধে রাখা প্লাস্টিকের ব্যাগ না ধরতেও বাসিন্দাদের সতর্ক করেছে দক্ষিণ কোরিয়ার সেনাবাহিনী। কারণ এসব ব্যাগে 'নোংরা বর্জ্য ও আবর্জনা' রয়েছে।
গত সোমবার পর্যন্ত দক্ষিণ কোরিয়ার সামরিক বাহিনী প্রায় এক হাজার বেলুন উদ্ধার করেছে।
অন্যদিকে, দক্ষিণ কোরিয়ার অধিকারকর্মীরা বলছেন, তারা উত্তর কোরিয়ায় বেলুন পাঠানো বন্ধ করবেন না।
তবে ২০২০ সালের ডিসেম্বরে উত্তর কোরিয়াবিরোধী প্রোপ্যাগান্ডামূলক লিফলেট পাঠানোকে অপরাধ ঘোষণা করে একটি আইন পাশ করে দক্ষিণ কোরিয়ার পার্লামেন্ট।
কয়েক বছর আগে দক্ষিণ কোরিয়ায় পালিয়ে আসা উত্তর কোরিয়ার নাগরিক এবং এফএফএনকে নেতা পার্ক স্যাং-হাক তাদের পাঠানো এসব সামগ্রীকে 'সত্য ও স্বাধীনতার চিঠি' বলে বর্ণনা করেছেন।
তিনি বলেন, উত্তর কোরিয়ার একজন মানুষ হিসেবে এই বেলুনগুলো তাকে এক ঝলক বাইরের পৃথিবীকে দেখিয়েছে। তিনি ১৯৯২ সালের স্মৃতিচারণ করে জানান, একদিন পাবলিক স্কয়ারে প্রথমবার 'আমি আকাশে একটি বিশাল বেলুন দেখেছিলাম।'
তিনি বলেন, 'সেই বেলুনটা হঠাৎ বিকট শব্দে ফেটে গেল, তারপর আকাশ থেকে লিফলেট পড়ল। আমি জানতাম যে আমার জন্য এই জিনিসগুলো দেখা নিষিদ্ধ, তাই আমি একটা লিফলেট আমার পকেটে নিয়ে এসেছিলাম। পরে বাথরুমে গিয়ে লিফলেটটা পড়েছিলাম।'
তিনি যে লিফলেটটি নিয়েছিলেন তাতে উত্তর কোরিয়া থেকে পালিয়ে যাওয়া মানুষদের গল্প ছিল। যাদের মধ্যে কেউ কেউ দক্ষিণ কোরিয়ায় যাওয়ার আগে চীনে গিয়েছিল।
এই ঘটনার আট বছর পর ২০০০ সালে পার্ক উত্তর কোরিয়া থেকে পালিয়ে দক্ষিণ কোরিয়ায় যান। ২০০৬ সালে তিনি উত্তর কোরিয়ার উদ্দেশে বেলুন পাঠানোর মিশন শুরু করেন।
ভাবানুবাদ: তাবাসসুম সুইটি