নিরাপত্তা পরিষদ যুদ্ধবিরতির প্রস্তাব অনুমোদনের পরও গাজায় ইসরায়েলের অভিযান চলবে
গাজায় যুদ্ধবিরতির প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে একটি যুদ্ধবিরতি প্রস্তাব পাশ করেছে জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদ। কিন্তু, এটি মানতে অস্বীকৃতি জানিয়েছে ইসরায়েল, এবং একইসঙ্গে গাজায় চলমান সামরিক অভিযান অব্যাহত রাখার অঙ্গীকার ব্যক্ত করেছে।
সোমবার নিরাপত্তা পরিষদের ১৫ সদস্যের মধ্যে ১৪টি সদস্য দেশ এই প্রস্তাব অনুমোদন দেয়। যুক্তরাষ্ট্রের সমর্থিত এ প্রস্তাবে ভোটদানে বিরত ছিল স্থায়ী সদস্য রাশিয়া। বিপুল সংখ্যাগরিষ্ঠতা নিয়ে এটি অনুমোদিত হলেও– ইসরায়েল জানিয়েছে, প্রস্তাব অনুযায়ী হামাসের সঙ্গে ;অর্থহীন' আলোচনায় জড়িত হতে রাজী নয় তেল আবিব।
জাতিসংঘে ইসরায়েলের প্রতিনিধি রাউত শাপির বেন-নাফতালি সোমবার নিরাপত্তা পরিষদের বৈঠকে বলেন, গাজা যেন আর কখনো ইসরায়েলের জন্য হুমকি না হতে পারে সেটি তাঁর দেশ নিশ্চিত করতে চায়।
তেল আবিবের জ্যেষ্ঠ এই কূটনীতিক বলেছেন, হামাসের কাছে থাকা সব বন্দি ফেরত না আসা পর্যন্ত এবং হামাসের (লড়াইয়ের) সামর্থ্য পুরোপুরি ধ্বংস হওয়ার আগপর্যন্ত এই যুদ্ধ শেষ হবে না। তাঁর অভিযোগ, ফিলিস্তিনের প্রতিরোধ গোষ্ঠীটি যুদ্ধবিরতি নিয়ে 'সুদীর্ঘ আলোচনার' সুযোগ নিচ্ছে।
জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদ প্রথমবারের মতো একটি যুদ্ধবিরতির পরিকল্পনা গ্রহণের পর এমন প্রতিক্রিয়া জানায় ইসরায়েল।
প্রস্তাব অনুযায়ী, শান্তি পরিকল্পনাটি তিন ধাপে বাস্তবায়িত হবে। যেখানে হামাসের হাতে থাকা সব ইসরায়েলি জিম্মির মুক্তির ব্যাপারেও শর্ত দেওয়া হয়েছে। বিনিময়ে যুদ্ধবিরতি কার্যকর এবং গাজা থেকে সমস্ত সেনা প্রত্যাহার করতে হবে ইসরায়েলকে। গত ৩১ মে প্রথম এই প্রস্তাব জনসম্মুখে আনেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন।
নিরাপত্তা পরিষদে এটি ব্যাপকভাবে অনুমোদন লাভের অর্থ দাঁড়াচ্ছে, এখন বিশ্বের অন্যান্য সংস্থার পাশাপাশি নিরাপত্তা পরিষদও সংঘাত বন্ধে– ইসরায়েল ও হামাসের ওপর আরো চাপ দিতে পারবে।
যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিঙ্কেন বর্তমানে মধ্যপ্রাচ্য সফর করছেন। শুরুতেই তিনি যান ইসরায়েলে। সেখানে ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর সাথে বৈঠক হয় তাঁর। নেতানিয়াহু যুদ্ধবিরতি ও জিম্মিদের মুক্তির লক্ষ্যে প্রস্তাবিত চুক্তিকে সমর্থন দেবেন বলে ব্লিঙ্কেনকে আশ্বস্ত করেছিলেন।
ব্লিঙ্কেন জানান, ইসরায়েলি নেতার থেকে তিনি এই চুক্তির বিষয়ে 'স্পষ্ট আশ্বাস' পেয়েছেন। হামাস এতে রাজী হলে– তখন ইসরায়েল এটিকে গ্রহণ করবে।
এর আগে নেতানিয়াহু বারবার জনসম্মুখে বলেছেন, গাজায় সামরিক অভিযান অব্যাহত থাকবে, এবং হামাসকে ধ্বংস করা ও সব বন্দিকে মুক্ত করার আগপর্যন্ত তা চলবে।
এদিকে জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদের যুদ্ধবিরতি প্রস্তাবটি গ্রহণ করেছে হামাস।
হামাসের জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা সামি আবু জুহরি আজ (১১ জুন) বার্তাসংস্থা রয়টার্সকে জানিয়েছেন, হামাস যুদ্ধবিরতির ব্যাপারে বিস্তারিত আলোচনার জন্য প্রস্তুত।
তিনি বলেন, ইসরায়েল যুদ্ধবিরতি প্রস্তাব মেনে চলে কিনা তা অনেকটাই ওয়াশিংটনের ওপর নির্ভর করে।
জাতিসংঘে আনা প্রস্তাবটিতে যুক্তরাষ্ট্র জানিয়েছিল, ইসরায়েল এতে সম্মতি দিয়েছে। কিন্তু, জাতিসংঘে ইসরায়েলের প্রতিনিধি বা খোদ বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর জনসম্মুখে দেওয়া বক্তব্যেও এপর্যন্ত তাঁর কোনো আভাস পাওয়া যায়নি। বরং এখনো পর্যন্ত তেল আবিবের পক্ষ থেকে এটি না মানারই সুস্পষ্ট বার্তা দেওয়া হচ্ছে।