ভোরের পাখি হওয়া, নাকি রাতের প্যাঁচা, কোনটি ভালো?
যুক্তরাষ্ট্রের কোনো কোম্পানির এমন প্রধান নির্বাহী নেই বললেই চলে যারা সকাল বেলায় দেরিতে ঘুম থেকে ওঠা পছন্দ করেন। অ্যাপলের প্রধান টিম কুক প্রতিদিন ভোর ৪টা থেকে ৫টার মধ্যে ঘুম থেকে ওঠেন। ডিজনির প্রধান নির্বাহী বব আইগারও তাই। এক সমীক্ষা অনুযায়ী, যুক্তরাষ্ট্রের বড় বড় কোম্পানির দুই-তৃতীয়াংশ প্রধান নির্বাহীই ভোর ৬টার মধ্যে ঘুম থেকে ওঠেন। অর্থাৎ কর্পোরেট শাখায় যারা সফল হতে চান, তাদের জন্য বার্তাটি একদম স্পষ্ট: আপনি তন্দ্রাচ্ছন্ন হলেন, তো হেরে গেলেন।
বার্টা'বি নামের এক ব্যক্তি বিষয়টি নিয়ে পরীক্ষা করে দেখেছেন যে খুব ভোরে ওঠার অনেকগুলো সুবিধা রয়েছে। এতে কাজের জন্য অনেকটা সময় পাওয়া যায়। অফিসে মূল কাজ শুরু হওয়ার আগে কিংবা হুট করেই যাতে কাজের চাপ না বাড়ে, সেজন্য আগেভাগেই আনুষঙ্গিক কিছু কাজ গুছিয়ে আনা যায়, অফিসের মিটিং কিংবা কোনো প্রেজেন্টেশন থাকলে সেটার জন্য প্রস্তুতি নেওয়ার যথেষ্ট সময় পাওয়া যায়, চ্যালেঞ্জিং সমস্যাগুলো নিয়ে চিন্তা করা যায়। আর এভাবেই ভোরে ওঠার অভ্যাস একজনকে অন্যদের চেয়ে এগিয়ে রাখে।
তবে সকালের এ শান্ত সময়টা যে কেবল একাকী কাজের মধ্যেই ডুবে থাকতে হবে তা নয়। কিছু টিকটক ভিডিওতে প্রভাবশালী ব্যক্তিদের এই সময়টায় নানা কাজে ব্যস্ত থাকতে দেখা গেছে। যেমন- বরফ শীতল পানিতে গোসল করা, আত্মবিশ্বাস ও মনের দৃঢ়তা বাড়ায় এমন বাক্য পাঠ করা, কফি বানানো ইত্যাদি।
২০১২ সালে টরন্টো বিশ্ববিদ্যালয়ের রেনি বিস ও লিন হ্যাশারের এক গবেষণায় উঠে এসেছে যে যারা ভোরে ওঠেন, তারা বেশি সুখী ও সুস্থ বোধ করেন। তবে যারা প্যাঁচার মতো রাত জাগেন এবং যাদের কম ঘুমানোর প্রবণতা রয়েছে, এসব অভ্যাস তাদের স্বাস্থ্য ও মেজাজের পাশাপাশি উৎপাদনশীলতার ওপরও বিরূপ প্রভাব ফেলে।
আবার দেরিতে ঘুম থেকে ওঠার কারণে নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে অফিসে পৌঁছাতে দেরিও হয়ে যেতে পারে, যা বেশিরভাগ কর্মক্ষেত্রেই ভালো চোখে দেখা হয় না। ২০২২ সালে ওরেগন স্টেট ইউনিভার্সিটির জেসিকা ডায়েচ ও তার দলের সদস্যরা গবেষণা করে রাতজাগা ব্যক্তিদের মধ্যে 'অলস', 'শৃঙ্খলাহীন' ও 'অপরিণত' স্বভাব লক্ষ্য করেন।
ফিনল্যান্ডের ওলু বিশ্ববিদ্যালয়ের অ্যান্ড্রু কনলিন ও তার দলের কয়েকজন গবেষণায় দেখেছেন, যেসব পুরুষ দেরিতে ঘুম থেকে ওঠেন, তারা ভোরে ওঠা পুরুষদের তুলনায় চার শতাংশ কম অর্থ উপার্জন করেন।
অনেক সুবিধা থাকলেও ভোরের পাখির মতো তাড়াতাড়ি ঘুম থেকে ওঠার কিছু অসুবিধাও রয়েছে। যেমন- অনেকেই ভোরে ঘুম থেকে উঠে আগেভাগেই অফিসে পৌঁছে কাজে বসে যান। এরপর বস যখন অফিসে আসেন, তখন কর্মীদের সবাই উপস্থিত না থাকায় যারা আগেভাগে এসেছেন, বস তাদের নিয়েই প্রয়োজনীয় কাজকর্ম শুরু করেন। তাই কখনো কখনো আগেভাগে আসা কর্মীদের অতিরিক্ত দায়িত্ব নিতে হয়। এতে কাজের চাপ বেড়ে যাওয়ায় অনেক ক্ষেত্রেই এসব কর্মীকে লম্বা সময় ধরে কাজে ব্যস্ত থাকতে হয়।
ঘুমাতে যাওয়া ও ঘুম থেকে ওঠার ব্যাপারটি মানুষের দেহের কিছু জিনের ওপর নির্ভর করে। তাই রাতের বেলায় ঘরের আলো নিভিয়ে দিয়ে কিংবা অ্যালার্ম ঘড়ি কিনে আনলেই যে কেউ রাতারাতি সকালে ওঠা ব্যক্তিতে পরিণত হবেন তা কিন্তু নয়। উল্টো হঠাৎ করে সার্কাডিয়ান রিদম বা দেহঘড়ি পরিবর্তনের ফল নেতিবাচকও হতে পারে। কারণ হঠাৎ একদিন ঘুম থেকে আগেভাগে উঠে পড়লেও দীর্ঘদিনের দেরিতে ওঠার অভ্যাসের কারণে সকালের ওই সময়টায় তন্দ্রা বা ঝিমুনি আসতে পারে। আর তাই অফিসে গিয়ে চোখে ঘুম নিয়ে কম্পিউটারের সামনে বসে থেকেও কাজের অগ্রগতি খুব একটা হবে বলে আশা করা যায় না।
বেশিরভাগ মানুষই ঘুম থেকে খুব সকালেও ওঠেন না, আবার অনেক বেলা করেও ঘুমান না। তারা এ দুয়ের মাঝামাঝি। আবার অনেকেই দুপুরে ঘুমাতে পছন্দ করেন। এসব কারণেই বেশিরভাগ অফিস সকাল ৯টা থেকে বিকাল ৫টা পর্যন্ত হয়ে থাকে আর কর্মীরা চান যে অফিসগুলোতে ঘুম বা বিশ্রামকক্ষ থাকুক।
অনুবাদ: রেদওয়ানুল হক