কুয়েতে অগ্নিকাণ্ড: প্রাণ হারানো অধিকাংশ শ্রমিক ভারতের
বুধবার (১২ জুন) কুয়েতের দক্ষিণাঞ্চলে বিদেশি শ্রমিকদের একটি আবাসিক ভবনে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় ৪৯ জনের মৃত্যু হয়েছে। নিহতদের মধ্যে অন্তত ৪২ জন ভারতীয় বলে জানা গেছে।
কুয়েতি গণমাধ্যমের খবরে বলা হয়েছে, শ্রমিকদের আবাসস্থল আল-মাঙ্গাফ ভবনে আগুন লাগার খবর ভোর সাড়ে ৪টায় আল-আহমাদি প্রশাসনকে জানানো হয়েছিল। ঘুমিয়ে থাকা অবস্থায় ধোঁয়ায় শ্বাসরুদ্ধ হয়ে বেশিরভাগ বাসিন্দার মৃত্যুর হয়েছে এই অগ্নিকাণ্ডে।
এদিকে, কুয়েতের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, এ ঘটনায় নিহতদের সংখ্যা ৪৯ জন। নিহতদের মধ্যে অন্তত ৪২ জন ভারতীয়। এছাড়া মিসর, নেপাল, পাকিস্তান ও ফিলিপাইনের নাগরিকদেরও মৃত্যু হয়েছে এই অগ্নিকাণ্ডে।
ইঞ্জিনিয়ারিং ও নির্মাণ সংস্থা এনবিটিসির ১৯৫ জন শ্রমিক এই ভবনটিতে থাকতেন। এনবিটিসির আংশিক মালিকানা রয়েছে এক ভারতীয় নাগরিকের কাছে। সংস্থার শ্রমিকদের রাখার জন্যই এই ভবনটি ভাড়া নেওয়া হয়েছিল। ভারতের কেরালা, তামিলনাড়ু এবং উত্তরের বেশ কিছু রাজ্য থেকে শ্রমিক এনে এখানে রাখা হয়েছিল বলে জানা গেছে। নিহতদের অধিকাংশই ভারতের কেরালা রাজ্যের। তাদের বয়স ২০ থেকে ৫০ বছরের মধ্যে বলে জানা গেছে।
এদিকে, এই অগ্নিকাণ্ডে ৫০ জনেরও বেশি লোক আহত হয়েছেন। কুয়েতের আমির শেখ মেশাল আল-আহমেদ আল-জাবের আল-সাবাহ নিহতদের পরিবারের প্রতি সমবেদনা জানিয়ে একটি বার্তা দিয়েছেন। একইসঙ্গে, অগ্নিকাণ্ডের কারণ খুঁজে বের করতে এবং দোষীদের চিহ্নিত করতে কর্তৃপক্ষকেও নির্দেশ দিয়েছেন তিনি।
এদিকে ঘটনার পর্যালোচনা করতে গতকালই গুরুত্বপূর্ণ বৈঠক করেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। প্রধানমন্ত্রীর ত্রাণ তহবিল থেকে নিহত প্রত্যেক ভারতীয়ের পরিবারকে ২ লাখ টাকা করে ক্ষতিপূরণ দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
উল্লেখ্য, কুয়েতের মোট জনসংখ্যার ২১ শতাংশই ভারতীয়— যা সংখ্যায় প্রায় ১০ লাখ। সেখানে যত কর্মী রয়েছেন, তার মধ্যে ৩০ শতাংশ ভারতীয়— যা সংখ্যায় প্রায় ৯ লাখের মতো।
এই দুর্ঘটনায় মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে পোস্ট করে জানিয়েছেন, দুর্ঘটনায় হতাহতদের মধ্যে পশ্চিমবঙ্গ থেকে যাওয়া কোনো শ্রমিক রয়েছেন কি-না, তা দেখতে রাজ্যের মুখ্য সচিব এবং দিল্লিতে পশ্চিমবঙ্গের রেসিডেন্ট কমিশনারকে তিনি নির্দেশ দিয়েছেন। কেউ যদি হতাহত হয়ে থাকেন, তাহলে তাকে বা তার পরিবারপকে পূর্ণ সাহায্য করার নির্দেশ দিয়েছেন তিনি।
এই নিয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে মমতা লেখেন, 'এই মুহূর্তে রাজ্যের যে সমস্ত বাসিন্দারা কুয়েতে রয়েছে, তাদের সম্পর্কে তথ্য জানতে রাজ্য সরকার বিদেশমন্ত্রকের (পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়) সঙ্গে যোগাযোগ রেখে চলছে। রাজ্যের মুখ্যসচিব ভগবতী প্রসাদ গোপালিকাকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে, যাতে তিনি বিদেশমন্ত্রকের সঙ্গে যোগাযোগ করেন। এই পরিস্থিতিতে কুয়েতে থাকা ভারতীয়দের যদি কোনো সাহায্যের প্রয়োজন হয়, তার জন্য ব্যবস্থা করা হবে। কুয়েতে থাকা বাংলার নাগরিকদের পাশেই রয়েছে রাজ্য সরকার।'