ইমরান খানকে এখন জেলে আটকে রাখা হয়েছে বিয়ের ‘দুর্বল’ মামলায়: তেহরিক-ই-ইনসাফ
পাকিস্তানের সাবেক প্রধানমন্ত্রী ইমরান খানকে তার বিরুদ্ধে করা সবচেয়ে 'দুর্বল' মামলায় কারাগারে আটকে রাখা হয়েছে বলে দাবি করেছেন তার দল পাকিস্তান তেহরিক-ই-ইনসাফের (পিটিআই) নেতারা।
চলতি বছরের জানুয়ারিতে ইমরান খান এবং তার স্ত্রী বুশরাকে ইসলামি শরীয়াহ আইন লঙ্ঘন করে বিয়ে করার অভিযোগে অভিযুক্ত করে দেশটির একটি আদালত।
তাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ ছিল, 'আগের স্বামীর সঙ্গে বিচ্ছেদের পর বুশরা ইদ্দত (তালাকের পর তিন মাস পর্যন্ত অন্য কাউকে বিয়ে না করা) পালন না করেই ইমরানের সঙ্গে বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হয়েছেন, যা মুসলিম রীতি তথা ইসলামি শরীয়াহ পরিপন্থি।'
অবশ্য ইমরান ও বুশরা উভয়ই এ অভিযোগ অস্বীকার করেন।
আদালত সেসময় 'অ-ইসলামিক নিকাহ' মামলায় ইমরান খান এবং তার স্ত্রী বুশরা বিবিকে সাত বছরের কারাদণ্ড দেন এবং পাঁচ লাখ রিয়াল জরিমানা করেন।
২০২২ সালের এপ্রিলে অনাস্থা ভোটে প্রধানমন্ত্রী থেকে ক্ষমতাচ্যুত হন ইমরান। তারপর থেকে তার বিরুদ্ধে প্রায় ১৭০ টি মামলা করা হয়েছে। ইতোমধ্যে তার বিরুদ্ধে করা সবচেয়ে গুরুতর অনেকগুলো মামলায় তিনি খালাস বা জামিন পেয়েছেন।
সর্বশেষ গত সপ্তাহে ২০২২ সালে রাষ্ট্রীয় গোপনীয়তা আইনে করা কূটনৈতিক তারবার্তা (সাইফার) ফাঁসের মামলায় খালাস দেওয়া হয়েছে ইমরান খানকে।
ইমরান খানের ঘনিষ্ঠ সহযোগী এবং পাকিস্তান তেহরিক-ই-ইনসাফ (পিটিআই) দলের সবচেয়ে জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা সৈয়দ জুলফিকার বুখারি দ্য ইন্ডিপেন্ডেন্টকে বলেন, '[তার বিরুদ্ধে] যতগুলো মামলা করা হয়েছে, তার মধ্যে এটিই (অ-ইসলামিক নিকাহ) সবচেয়ে দুর্বল।'
তিনি বলেন, 'মামলাগুলো সবই দুর্বল ছিল, তবে এটি সবচেয়ে দুর্বল। শুধু স্ত্রীকে বিয়ে করার অপরাধে তিনি এখন কারাগারে বন্দি।'
বুখারি আরও বলেছেন, 'অন্য মামলাগুলোও ছিল তামাশা। আদালত এসব মামলা (যেসব মামলায় ইমরান খানকে কারারুদ্ধ করা হয়েছিল) ছুঁড়ে ফেলে দিয়েছেন। আর বিরোধীরা এগুলোকেই মূল পাওয়া হিসেবে মনে করছেন।'
পিটিআইয়ের আরেক জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা গওহর আলী খান বলেন, 'এটি রাজনৈতিক নিপীড়নের উদ্দেশ্যে করা একটি ভুয়া মামলা।'
গত বছরের এপ্রিলে মুহম্মদ হানিফ নামে এক ব্যক্তি ইমরান ও বুশরার বিয়ের বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে আদালতে পিটিশন দেন। পরে ইসলামাবাদের অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ আদালতের বিচারক মুহাম্মাদ আজম খান মামলাটি দেওয়ানি আদালতের বিচারকের কাছে স্থানান্তর করেন। সেই সঙ্গে এই বিয়ের বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে করা একটি নালিশি মামলা অগ্রহণযোগ্য বলে দেওয়া দেওয়ানি আদালতের এক রায় খারিজ করে দেন।
পিটিশনে মুহম্মদ হানিফ দাবি করেন, বুশরার সঙ্গে তার আগের স্বামী মানেকার বিচ্ছেদ হয় ২০১৭ সালের নভেম্বরে। কিন্তু ইদ্দত পালন না করেই ২০১৮ সালের ১ জানুয়ারি বুশরা ইমরান খানের সঙ্গে বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হন, যা মুসলিম রীতি তথা ইসলামি শরিয়ার পরিপন্থি।
অন্যদিকে বুশরা বিবি জানান, আগের স্বামীর সঙ্গে তার বিচ্ছেদ হয়েছিল ২০১৭ সালের আগস্টে।
শুনানি চলাকালীন এবং চূড়ান্ত রায় ঘোষণা উভয় সময়ই পাকিস্তানের একটি আদালত বুশরা বিবির ঋতুচক্রের বিবরণ যাচাই করে তার দাবি খারিজ করে দেন।এবং ইমরান খানের সঙ্গে তার বিয়েকে 'অ-ইসলামিক নিকাহ' বলে রায় দেন।
গত বছরের নভেম্বরে ডন পত্রিকার এক প্রতিবেদনে বলা হয়, মানেকা বলেছেন যে ২০১৭ সালের ১৪ নভেম্বর তিনি বুশরা বিবিকে তালাক দেন এবং ২০১৮ সালের ফেব্রুয়ারির আগেই তার মন পরিবর্তন হয়ে যায়। তিনি ফের বুশরা বিবির সঙ্গে সংসার করার কথা ভাবেন। কিন্তু বুশরা ও খান ইদ্দতকালীন সময়ের মধ্যেই বিয়ে করায় তিনি আর তার স্ত্রীকে ফেরত নিতে পারেননি।
গত ১৬ জানুয়ারি রাওয়ালপিন্ডির আদিয়ালা কারাগারে বিচারক ইমরানকে অভিযোগ পড়ে শোনান। তখন ইমরান নিজেকে নির্দোষ দাবি করেন। তবে বুশরা সেখানে উপস্থিত ছিলেন না।
ইমরানের আইনজীবী ইন্তিসার পাঞ্জুথা এটিকে আগামী মাসে অনুষ্ঠেয় সাধারণ নির্বাচন থেকে ইমরানকে দূরে সরিয়ে রাখার রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত প্রচেষ্টা হিসেবে উল্লেখ করেন।
পাকিস্তানে সুশীল সমাজের সদস্য, নারী অধিকারকর্মী এবং আইনজীবীরা আদালতের এই রায়কে 'নারীর মর্যাদা ও গোপনীয়তার অধিকারের উপর আঘাত' বলে সমালোচনা করেছেন।
'মানুষের ব্যক্তিগত জীবনে রাষ্ট্রের হস্তক্ষেপের' বিরুদ্ধে দেশটিতে বিক্ষোভও হয়েছে।
কুরআন অনুসারে, একজন ঋতুমতী নারীকে পুনরায় বিয়ের আগে তিনটি মাসিক চক্র পার করতে হবে। আর অ-ঋতুমতী নারীর ক্ষেত্রে অবশ্যই তিন চন্দ্র মাস অপেক্ষা করতে হবে। বিধবাদের ক্ষেত্রে চার মাস ১০ দিন বিলম্ব করতে হয়। সন্তানের পিতৃত্ব সম্পর্কিত অনিশ্চয়তা দূর করার লক্ষ্যে এই নিয়ম মেনে চলা হয়।
ইমরান এর আগে আরও দুটি বিয়ে করেছিলেন। তার সেই দুই স্ত্রী ছিলেন জেমাইমা গোল্ডস্মিথ ও রেহাম খান। কিন্তু তাদের সাথে ইমরানের সংসার বেশিদিন টেকেনি।
খান ১৯৯৫ সালে তার ক্রিকেট ক্যারিয়ারের শীর্ষে থাকার সময় জেমাইমা গোল্ডস্মিথকে বিয়ে করেছিলেন। বিয়ের ৯ বছর পরে এই দম্পতির বিবাহবিচ্ছেদ হয়। তাদের দুটি ছেলে সন্তান আছে।
এরপর ২০১৫ সালে সাংবাদিক ও সাবেক বিবিসি আবহাওয়া উপস্থাপক রেহাম খানের সঙ্গে দ্বিতীয় বিয়ে করেন খান। কিন্তু এক বছরেরও কম সময়ের মধ্যে এই সম্পর্কের অবসান হয়।
সবশেষে ২০১৮ সালে বুশরা বিবিকে বিয়ে করেন ইমরান খান।
ভাবানুবাদ: তাবাসসুম সুইটি