বুকার জয়ী অরুন্ধতী রায়কে কি ১৪ বছর আগে করা মন্তব্যের জন্য জেলে যেতে হবে?
ভারতীয় কর্তৃপক্ষ কাশ্মীর নিয়ে ২০১০ সালে করা মন্তব্যের জন্য নন্দিত ঔপন্যাসিক অরুন্ধতী রায়ের বিচারের অনুমোদন দিয়েছে।
দিল্লি প্রশাসনের একজন শীর্ষ কর্মকর্তা এবং প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির বিজেপি দলের সদস্য ভি কে সাক্সেনা অরুন্ধতী রায় এর বিরুদ্ধে বিচারিক ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশ নিয়েছেন। ভি কে সাক্সেনা বর্তমানে লেফটেন্যান্ট গভর্নরের দায়িত্ব পালন করছেন।
অরুন্ধতী রায় তার উপন্যাস "দ্য গড অফ স্মল থিংস" এর জন্য ১৯৯৭ সালে বুকার পুরস্কার জিতেছেন। তিনি ভারতের রাজনৈতিক পরিস্থিতি ও চলমান বিভিন্ন বৈষম্য নিয়ে সবসময় সোচ্চার ছিলেন।
সাক্সেনার অফিসের আধিকারিকদের বরাত দিয়ে প্রেস ট্রাস্ট অব ইন্ডিয়া জানিয়েছে, অরুন্ধতী রায় এবং কাশ্মীরের সেন্ট্রাল ইউনিভার্সিটির সাবেক অধ্যাপক শেখ শওকত হুসেনের বিরুদ্ধে কাশ্মির নিয়ে উসকানিমূলক বক্তব্য দেওয়ার অভিযোগে বেআইনি কার্যকলাপ (প্রতিরোধ) আইনে (ইউপিএ) ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
অরুন্ধতী এবং অন্যদের বিরুদ্ধে মূল ফৌজদারি অভিযোগ আনার এক দশক পর গত অক্টোবরে সাক্সেনা মামলাটিকে আদালতে পেশ করার অনুমোদন দেন। ২০১০ সালে অরুন্ধতী তার একটি মন্তব্যে বলেছিলেন, কাশ্মীর ভারতের "অবিচ্ছেদ্য" অংশ নয়। তার মন্তব্যকে উসকানিমূলক বলে সেটি কাশ্মীরের বিচ্ছিন্নতার পক্ষ নেয় দাবি করে তার বিরুদ্ধে অভিযোগ আনা হয়েছিল।
২০১০ সালে তার মন্তব্যের পর বিজেপির মহিলা সংগঠনের প্রায় ১৫০ জন সদস্য তার দিল্লীর বাড়ি ঘেরাও করে তার মন্তব্য প্রত্যাহার করতে এবং তার দেশ ছেড়ে চলে যাওয়ার দাবিতে বিক্ষোভ করেছিলেন।
মূল অভিযোগের এক দশকেরও বেশি সময় পরে আসা এই সিদ্ধান্তটির ভারতের কমিউনিস্ট পার্টি (মার্কসবাদী) সহ অন্যান্যরা সমালোচনা করেছেন। তারা বলেছেন, ইউএপিএ ভিন্নমতকে দমন করতে এবং সরকারের সমালোচকদের লক্ষ্যবস্তু করতে ব্যবহৃত হয়।
বিশ্লেষকদের মতে, যে আইনের অধীনে অরুন্ধতীর বিচারের অনুমতি দেওয়া হয়েছে সেই ইউএপিএ আইনটি অসাংবিধানিক এবং অগণতান্ত্রিক। আইনজীবী, কর্মী, সাংবাদিক, পুরোহিত, কবি, শিক্ষাবিদ, সুশীল সমাজের সদস্য এবং কাশ্মীরি নাগরিকসহ সমালোচকদের চুপ করানোর জন্য এই সন্ত্রাসবিরোধী আইনটি মোদি সরকার প্রায়ই ব্যবহার করেছে বলে তারা মনে করেন।
অরুন্ধতী রায়ের স্পষ্টবাদী কণ্ঠ, সক্রিয়তা এবং মোদী সরকারের সমালোচনা তাকে ভারতের রাজনৈতিক মেরুকরণে একজন গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিত্বে পরিণত করেছে।
অনুবাদ: তাসবিবুল গনি নিলয়