পাকিস্তানের তুলনায় ভারতের পারমাণবিক অস্ত্র বেশি, চীনের আরও বেশি
সুইডিশ থিংক ট্যাংক স্টকহোম ইন্টারন্যাশনাল পিস রিসার্চ ইনস্টিটিউট-এর (এসআইপিআরআই) প্রতিবেদন অনুসারে, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, রাশিয়া, ফ্রান্স, চীন, ভারত এবং পাকিস্তান সহ নয়টি পারমাণবিক অস্ত্রধারী দেশ তাদের পারমাণবিক অস্ত্রাগারের আধুনিকীকরণ অব্যাহত রেখেছে।
প্রতিবেদনে আরো বলা হয়েছে, কয়েকটি পারমাণবিক অস্ত্রধারী দেশ ২০২৩ সালে নতুন পারমাণবিক-সক্ষম অস্ত্র ব্যবস্থা স্থাপন করেছে।
এসআইপিআরআই জানিয়েছে, চীনের পারমাণবিক অস্ত্রাগারে ২০২৩ সালের জানুয়ারিতে ৪১০টি পারমাণবিক অস্ত্র থাকলেও ২০২৪ সালের জানুয়ারিতে পারমাণবিক অস্ত্র সংখ্যা বেড়ে ৫০০টি হয়েছে। ভবিষ্যতে চীনের পারমাণবিক অস্ত্রের সংখ্যা আরো বাড়তে থাকবে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে, মোতায়েন করা অস্ত্রগুলোর মধ্যে প্রায় ২ হাজার ১০০টি ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্রের ওপর উচ্চ অপারেশনাল (উচ্চ মাত্রার কার্যক্ষমতা) সতর্কতা ছিল, যার প্রায় সবই রাশিয়া বা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের।
এসআইপিআরআই জানিয়েছে, নয়টি পারমাণবিক অস্ত্রধারী দেশ— মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, রাশিয়া, যুক্তরাজ্য, ফ্রান্স, চীন, ভারত, পাকিস্তান, উত্তর কোরিয়া এবং ইসরায়েল তাদের পারমাণবিক অস্ত্রাগারের আধুনিকীকরণ অব্যাহত রেখেছে।
২০২৪ সালের জানুয়ারিতে বিশ্বব্যাপী আনুমানিক ১২ হাজার ১২১টি পারমাণবিক অস্ত্রের মধ্যে প্রায় ৯ হাজার ৫৮৫টি অস্ত্র সম্ভাব্য ব্যবহারের জন্য সামরিক মজুত হিসেবে রাখা ছিল। এই অস্ত্রগুলোর মধ্যে প্রায় ৩ হাজার ৯০৮টি ক্ষেপণাস্ত্র এবং বিমানের সাথে মোতায়েন করা হয়েছিল।
ভারত, পাকিস্তান এবং উত্তর কোরিয়া ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্রে একাধিক পারমাণবিক অস্ত্র স্থাপন করার প্রযুক্তি ব্যবহার করছে, যা ইতোমধ্যে রাশিয়া, ফ্রান্স, যুক্তরাজ্য, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং চীনের হাতে রয়েছে। এ ধরনের প্রযুক্তি মোতায়েন করা অস্ত্রগুলোর লক্ষ্যবস্তুকে আরো নির্ভুল হামলা চালানোর সক্ষমতা দেয়।
এসআইপিআরআই জানিয়েছে, পৃথিবীর মোট পারমাণবিক অস্ত্রের মধ্যে প্রায় ৯০ শতাংশই রয়েছে রাশিয়া এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের কাছে।
এসআইপিআরআই জানিয়েছে, ২০২৩ সালে পারমাণবিক অস্ত্রধারী দেশগুলোর পারমাণবিক অস্ত্রের মজুদ তুলনামূলকভাবে স্থিতিশীল থাকলেও রাশিয়া ২০২৩ সালের জানুয়ারির তুলনায় প্রায় ৩৬টি অতিরিক্ত পারমাণবিক অস্ত্র মোতায়েন করেছে৷
রাশিয়া ২০২২ সালে ইউক্রেনে আক্রমণে চালানোর পর থেকেই রাশিয়া এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র উভয়ের মধ্যে পারমাণবিক শক্তি সংক্রান্ত স্বচ্ছতা হ্রাস পেয়েছে৷
২০২৪ সালের জানুয়ারিতে ভারতের কাছে ১৭২টি পারমাণবিক অস্ত্র ছিল, যেখানে পাকিস্তানের কাছে ছিল ১৭০টি ৷ ভারত ২০২৩ সালে তার পারমাণবিক অস্ত্রাগারকে কিছুটা প্রসারিত করেছিল। ভারত ও পাকিস্তান উভয় দেশই নতুন পারমাণবিক অস্ত্র সরবরাহ ব্যবস্থার উন্নতি অব্যাহত রেখেছে৷
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, পাকিস্তান ভারতের পারমাণবিক হামলার মূল লক্ষ্যবস্তু হলেও চীনে লক্ষ্যে পৌঁছাতে সক্ষম দীর্ঘ-পাল্লার পারমাণবিক অস্ত্র বানানোর ওপর জোর দিচ্ছে ভারত।
এই দশকের শেষ নাগাদ চীনের কাছে সম্ভবত রাশিয়া বা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের মতো অনেক আন্তঃমহাদেশীয় ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র (আইসিবিএমএস) থাকতে পারে। যদিও দেশটির পারমাণবিক অস্ত্রের মজুদ রাশিয়া বা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের তুলনায় কম থাকবে বলে প্রতিবেদনে ধারণা করা হচ্ছে।
এসআইপিআরআই এর ওয়েপন্স অব ম্যাস ডেস্ট্রাকশন (গণবিধ্বংসী অস্ত্র) প্রোগ্রাম এর একজন বিশেষজ্ঞ এবং ফেডারেশন অব আমেরিকান সায়েন্টিস্টস (এফএএস) এর নিউক্লিয়ার ইনফরমেশন প্রজেক্টের পরিচালক হ্যান্স এম ক্রিস্টেনসেন বলেন, "চীন তার পারমাণবিক অস্ত্রভাণ্ডারকে অন্য যেকোনো দেশের তুলনায় দ্রুত সম্প্রসারণ করছে।"
তিনি বলেন, বেশিরভাগ পারমাণবিক অস্ত্রধারী দেশেরই তাদের পারমাণবিক শক্তি বাড়ানোর পরিকল্পনা বা পদক্ষেপ রয়েছে।
অনুবাদ: তাসবিবুল গনি নিলয়