ফ্রান্সের নির্বাচনে অপ্রত্যাশিতভাবে কট্টর ডানদের হারিয়ে দিল বামপন্থিরা
ফ্রান্সের পার্লামেন্ট নির্বাচনের দ্বিতীয় দফার ভোটে কট্টর ডানপন্থি দল ন্যাশনাল র্যালির (আরএন) জয়যাত্রাকে আটকে দিয়েছে বামপন্থি জোট।
ডানদের হতাশ করে রোববার (৭ জুলাই) অনুষ্ঠিত দ্বিতীয় দফার ভোটে অধিকাংশ আসনে জয় পেয়েছে বাম জোট।
তবে কট্টর ডানপন্থি সরকারকে ক্ষমতায় আসা থেকে ঠেকাতে পারলেও ফ্রান্স ঢুকে গেছে রাজনৈতিক গোলকধাঁধার মধ্যে। কেননা কোনো দলই নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা পায়নি। ফলে দেশটির পার্লামেন্টে অচলাবস্থা তৈরি হয়েছে।
বামপন্থি নিউ পপুলার ফ্রন্ট জয় পেয়েছে ১৮২ আসনে, আর প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল মাখোঁর মধ্যপন্থি এনসেম্বল জোট জয় পেয়েছে ১৬৮ আসনে।
প্রথম দফার ভোটে সবচেয়ে বেশি আসন পাওয়া কট্টর ডানপন্থি আরএন এবার নেমে গেছে তৃতীয় স্থানে। মেরিন লা পেনের নেতৃত্বাধীন দলটি দ্বিতীয় দফার ভোটে ১৪৩ আসনে জয় পেয়েছে।
বামপন্থি নিউ পপুলার ফ্রন্টের প্রথম স্থান দখল করা ছিল অপ্রত্যাশিত। এ নির্বাচনে বর্তমান প্রেসিডেন্ট মাখোঁও বড় ধাক্কা খেয়েছেন।
ফ্রান্সের পার্লামেন্ট এখন বিভক্তি অনেক বড় হলো। এর ফলে ইউরোপিয়ান ইউনিয়নসহ বিদেশেও ফ্রান্সের প্রভাব দুর্বল হয়ে পড়বে।
নির্বাচনের এ ফলাফলে পর পার্লামেন্ট তিনটি বড় গ্রুপে ভাগ হয়ে যাবে—বাম, মধ্য ও কট্টর ডানপন্থি। এই তিন দলের একসঙ্গে কাজ করার ঐতিহ্য নেই।
নির্বাচনে প্রথম হওয়া নিউ পপুলার ফ্রন্টের এজেন্ডার মধ্যে রয়েছে জ্বালানি ও খাদ্যের মতো নিত্যপণ্যের দামে লাগাম টানা, ন্যূনতম মাসিক মজুরি নিট ১,৭৩২ ডলারে উন্নীত করা, সরকারি খাতের কর্মীদের বেতন বাড়ানো ও ধনীদের ওপর সম্পদ কর বসানো। দলটি ফল পাওয়ার প্রায় সঙ্গে সঙ্গেই বলেছে, তারা দেশ পরিচালনা করতে চায়।
নির্বাচনে প্রথম হতে না পারলেও বর্ণবাদ ও ইহুদিবিদ্বেষের জন্য কুখ্যাত কট্টর ডানপন্থি আরএনের উত্থান ও ক্রমবর্ধমান জনপ্রিয়তা দেখে অনেকেই আতঙ্কিত হয়েছেন।
ফ্রান্সের পার্লামেন্টে মোট আসনসংখ্যা ৫৭৭টি, নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা পেয়ে এককভাবে সরকার গঠনের জন্য জয় দরকার ২৮৯ আসনে।
এখন গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন হচ্ছে, বাম জোট ঐক্যবোধ থেকে সিদ্ধান্ত নিতে পারবে কি না।
ক্রমবর্ধমান জীবন যাপনের ব্যয় ও সরকারি সেবার মান কমার পাশাপাশি অভিবাসন ও নিরাপত্তা সংকটের কারণে ভোটাররা এবার মাখোঁর দিক থেকে মুখ ফিরিয়ে নিয়েছে।
সরকার গঠনের জন্য প্রয়োজন ২৮৯টি আসন। সেটি কেউ না পাওয়ায় বাম জোটকে সরকার গঠন করতে হলে অন্যদের সমর্থন নিতে হবে। ফলে দেশটিতে ঝুলন্ত পার্লামেন্ট গঠনের সম্ভাবনাই এখন বেশি।
এর আগে গত রোববার অনুষ্ঠিত প্রথম দফার ভোটে সবচেয়ে বেশি ৩৩ শতাংশ ভোট পেয়েছিল কট্টর ডান আরএন। তবে আরএনের লা পেন বলেছেন, তার দলের জয় শুধু বিলম্বিত করা হয়েছে। আজকের এই ফলের মধ্যে তিনি আগামী দিনের বিজয়ের বীজ দেখতে পাচ্ছেন।