হোয়াইট হাউসের বিবৃতিতে নেই বাংলাদেশ প্রসঙ্গ: ভারত বলছে আলোচনা হয়েছে
ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যম এক্স-এ বাংলাদেশ বিষয়ে আলোচনা হয়েছে বলে জানিয়েছেন। তবে হোয়াইট হাউস থেকে প্রকাশিত বিবৃতিতে বাংলাদেশ বিষয়ে কোনো প্রসঙ্গ নেই। এ কারণে সমালোচনার মুখে পড়েছে ভারত।
গত সোমবার ভারতীয় প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সঙ্গে ফোনে কথা বলেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন। তাদের এ আলাপের ওপর ভিত্তি করে গত সোমবারই হোয়াইট হাউস এক বিবৃতি প্রকাশ করে। মোদি তার এক্স অ্যাকাউন্টে এবং ভারতীয় পররাষ্ট্রমন্ত্রণালয়ের বিবৃতিতে বাংলাদেশ প্রসঙ্গে কথা হয়েছে বলে উল্লেখ করা হয়েছে। সেখানে বাংলাদেশের হিন্দুসহ অন্যান্য সংখ্যালঘু নাগরিকদের নিরাপত্তার বিষয়ে কথা হয়েছে বলে জানানো হয়েছে। কিন্তু হোয়াইট হাউসের বিবৃতিতে বাংলাদেশের কোনো প্রসঙ্গই আনা হয়নি।
হোয়াইট হাউসের বিবৃতিতে বলা হয়, মোদির সঙ্গে সাম্প্রতিক পোল্যান্ড ও ইউক্রেন সফর নিয়ে কথা হয়েছে বাইডেনের। পাশাপাশি আগামী সেপ্টেম্বরে অনুষ্ঠিত হতে যাওয়া জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদের বৈঠক নিয়েও তিনি মোদির সঙ্গে কথা বলেছেন।
বিবৃতির তথ্য অনুযায়ী, পোল্যান্ড ও ইউক্রেনে ঐতিহাসিক সফরের জন্য ভারতের প্রধানমন্ত্রীর প্রশংসা করেছেন বাইডেন। কয়েক দশকের মধ্যে এই প্রথম ভারতের কোনো প্রধানমন্ত্রী এমন সফর করেছেন। শান্তি প্রতিষ্ঠার বার্তা, জ্বালানি খাতসহ ইউক্রেনের জন্য চলমান মানবিক সহায়তা অব্যাহত রাখার বিষয়ে নরেন্দ্র মোদির দেওয়া বার্তার প্রশংসা করেছেন জো বাইডেন। একই সঙ্গে জাতিসংঘ সনদের ভিত্তিতে আন্তর্জাতিক আইন অনুযায়ী সংঘাতের শান্তিপূর্ণ সমাধানের জন্য দুই নেতা তাদের অব্যাহত সমর্থনের বিষয়ে ফোনালাপে প্রতিশ্রুতি দেন।
হোয়াইট হাউসের বিবৃতিতে আরও বলা হয়েছে, যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ও ভারতের প্রধানমন্ত্রী ভারত ও প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলে শান্তি ও সমৃদ্ধি রক্ষায় ভূমিকা রাখতে কোয়াডের মতো আঞ্চলিক জোটের মাধ্যমে একসঙ্গে কাজ করতে তাদের প্রতিশ্রুতি ব্যক্ত করেছেন।
অপরদিকে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম প্ল্যাটফর্ম এক্স-এ (সাবেক টুইটার) নিজের অ্যাকাউন্টে বাইডেনের সঙ্গে আলাপের বিষয়টি জানিয়ে পোস্ট করেন মোদি।
ওই পোস্টে মোদি বলেন, আজ মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের সঙ্গে ফোনালাপে ইউক্রেনের পরিস্থিতিসহ আঞ্চলিক ও বৈশ্বিক নানা বিষয়ে বিশদভাবে মতবিনিময় হয়েছে তার।
ওই পোস্টে মোদি আরও লেখেন, বাংলাদেশ পরিস্থিতি নিয়েও বাইডেনের সঙ্গে আলোচনা করেছেন তিনি এবং বাংলাদেশে দ্রুত স্বাভাবিক অবস্থা ফিরিয়ে আনার প্রয়োজনীয়তার ওপর জোর দিয়েছেন। পাশাপাশি বাংলাদেশের সংখ্যালঘু, বিশেষ করে হিন্দুদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার বিষয়ে আলোচনা হয়েছে বলেও ওই পোস্টে উল্লেখ করেন মোদি।
নরেন্দ্র মোদির কার্যালয় থেকে প্রকাশিত বিবৃতিতেও বলা হয়েছে, মোদি এবং বাইডেন বাংলাদেশের চলমান পরিস্থিতি নিয়ে আলোচনা করেছেন এবং দ্রুত স্বাভাবিক অবস্থা পুনঃপ্রতিষ্ঠা করার বিষয়ে জোর দিয়েছেন। তাছাড়া বিশেষ করে হিন্দুদের মতো সংখ্যালঘুদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার প্রয়োজনীয়তার ওপর জোর দিয়েছেন।
তবে সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমে মোদির এমন বক্তব্যের সমালোচনার জবাবে ভারতীয় সরকারের পক্ষ থেকে জানিয়েছে, "নরেন্দ্র মোদির বাইডেনের সঙ্গে কথোপকথন নিয়ে আমাদের প্রেস রিলিজ সম্পর্কে সামাজিক মাধ্যমে বেশ কিছু মন্তব্য দেখা গেছে। এগুলো সম্পূর্ণভাবে ভুল। আমাদের প্রেস রিলিজে উল্লেখিত সব বিষয়, যার মধ্যে বাংলাদেশের পরিস্থিতিও আলোচনা করা হয়েছে। এটি কথোপকথনের একটি সঠিক প্রতিফলন।"
ওই সূত্র আরও জানিয়েছে, "আলাপ-আলোচনার পর আলাদা প্রেস রিলিজ প্রকাশ করা একটি সাধারণ প্রক্রিয়া, যা আলোচিত সব বিষয় প্রতিফলিত নাও হতে পারে। শুধু যৌথ প্রেস রিলিজ বা যৌথ বিবৃতির ক্ষেত্রে উভয় পক্ষ থেকে একই ধরনের প্রেস রিলিজ প্রকাশ করা হয়।"
সূত্র জানিয়েছে, "যে-সব ক্ষেত্রে আলাদা প্রেস রিলিজ প্রকাশ করা হয়, সেসব ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট দেশের আগ্রহের বিষয়গুলিকে গুরুত্ব দেওয়া হয়। তবে, এটি কোনো প্রমাণ নয় যে, কোনো প্রেস রিলিজে অনুপস্থিত কোনো বিষয় আলোচনা করা হয়নি।"