ভয়াবহ খরায় খাদ্যাভাব মেটাতে ২০০ হাতি মেরে ক্ষুধার্ত মানুষকে মাংসের জোগান দেবে জিম্বাবুয়ে
কয়েক দশকের মধ্যে সবচেয়ে ভয়াবহ খরার মুখে পড়েছে জিম্বাবুয়ে। এর জেরে দেখা দিয়েছে তীব্র খাদ্য সংকট। তাই মানুষের মুখে খাবার তুলে দিতে বিপুল ২০০ হাতি মারার অনুমতি দিয়েছে দেশটির কর্তৃপক্ষ।
জিম্বাবুয়ে পার্কস অ্যান্ড ওয়াইল্ডলাইফ অথরিটি-র (জিমপার্কস) মুখপাত্র তিনাশে ফারাও জানান, দেশের অর্ধেক মানুষ তীব্র ক্ষুধার ঝুঁকিতে রয়েছে। এই পরিস্থিতিতে তারা ২০০ হাতি মারার লক্ষ্য নিয়েছেন।
ভয়াবহ খরায় খাদ্য সংকটে পড়ে আফ্রিকার আরেক দেশ নামিবিয়া হাতি, জলহস্তি, জেব্রাসহ ৭০০-র বেশি প্রাণী মারার ঘোষণা দেওয়ার হাতি মারার এ ঘোষণা দিল জিম্বাবুয়ে।
তবে প্রাণী অধিকারকর্মী ও সংরক্ষণবিদরা এ উদ্যোগের সমালোচনা করেছেন।
তিনাশে ফারাও জানান, জিম্বাবুয়েতে মোট হাতির সংখ্যা ৮৪ হাজার। দেশটির হাতি ধারণক্ষমতা ৪৫ হাজার। অর্থাৎ 'ধারণক্ষমতার প্রায় দ্বিগুণ' হাতি রয়েছে দেশটিতে।
বিশ্বে বোতসোয়ানার পর জিম্বাবুয়েতে দ্বিতীয় সর্বোচ্চসংখ্যক হাতি রয়েছে।
পরিবেশমন্ত্রী সিথেমবিসো নিয়োনি গত সপ্তাহে বলেছেন, 'জিম্বাবুয়েতে আমাদের প্রয়োজনের চেয়ে বেশি এবং আমাদের বনের ধারণক্ষমতার চেয়ে বেশি হাতি রয়েছে।'
তিনি আরও বলেন, হাতির সংখ্যা অনেক বেশি হয়ে গেলে তাদের টিকে থাকার উপাদান কমে যায়। ফলে মানুষ ও বন্যপ্রাণীর মধ্যে সংঘর্ষ বাড়ছে।
মন্ত্রী জানান, জিমপার্কসকে ইতিমধ্যে হাতি মারার প্রক্রিয়া শুরু করতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
যেসব এলাকায় মানুষ ও হাতির মধ্যে সংঘর্ষ বেশি হয়, সেখানে এসব হাতি মারা হবে বলে জানিয়েছেন জিমপার্কসের মহাপরিচালক ফুলটন মাংওয়ানিয়া। এসব এলাকার মধ্যে রয়েছে জিম্বাবুয়েরর বৃহত্তম প্রাকৃতিক রিজার্ভ হোয়াংগে।
জিমপার্কসের তথ্যমতে, হোয়াংগেতে ৬৫ হাজারের বেশি প্রাণীর বাস, যা এর ধারণক্ষমতার চারগুণ।
জিম্বাবুয়ে সর্বশেষ খাওয়ার জন্য হাতি মেরেছে ১৯৮৮ সালে।
পরিবেশমন্ত্রী নিয়োনি ভয়েস অভ আমেরিকাকে বলেছেন, 'নামিবিয়া যা করেছে, সেরকম কিছু করার জন্য আমরা জিমপার্কস ও কিছু কমিউনিটির সঙ্গে আলোচনা করছি—যাতে আমরা হাতি মেরে নারীদের মাংস দিতে পারি। কিছু কমিউনিটির জন্য প্রয়োজনীয় প্রোটিন নিশ্চিত করতে পারি।'
এর আগে চলতি মাসের শুরুর দিকে দেশের ক্ষুধার্ত মানুষের মাংসের জোগান দিতে হাতি, জলহস্তি, জেব্রাসহ ৭০০-র বেশি প্রাণী মারার ঘোষণা দিয়েছে নামিবিয়া।
নামিবিয়ার পরিবেশ, বন ও পর্যটন মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, ইতিমধ্যে সরকারি ত্রাণ কর্মসূচির জন্য বিভিন্ন প্রজাতির ১৫৭টি প্রাণী শিকার করা হয়েছে। এই প্রাণীগুলো থেকে মোট ৫৬ হাজা ৮৭৫ কেজি মাংস সরবরাহ করা হয়েছে।
দক্ষিণ আফ্রিকা অঞ্চলের অন্যান্য দেশের সঙ্গে জিম্বাবুয়ে ও নামিবিয়াও চলমান ভয়াবহ খরার কারণে জরুরি অবস্থা ঘোষণা করেছে।
জাতিসংঘের হিসাবে, জিম্বাবুয়ের প্রায় ৪২ শতাংশ মানুষ দারিদ্র্যসীমার নিচে বাস করে।
কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, নভেম্বর থেকে মার্চ পর্যন্ত যে সময় খাবার কম পাওয়া যায়, তখন প্রায় ৬ মিলিয়ন মানুষের খাদ্য সহায়তা লাগবে।
বিবিসির প্রতিবেদনে জানানো হয়েছে, ভয়াবহ খয়ায় শুকিয়ে গেছে জিম্বাবুয়ের অনেক নদীর পানি। নদীগর্ভ খুঁড়েও মিলছে না পর্যাপ্ত পানি, খাবারেরও তীব্র সংকট।
খাদ্য সরবরাহেও ঘাটতিতে পড়ে জিম্বাবুয়ের ৭.৭ মিলিয়ন মানুষ এখন ক্ষুধার মুখে।
পানির অভাবে ফসল নষ্ট হয়ে গেছে কৃষকদের।
এ বছর দক্ষিণ আফ্রিকা অঞ্চলের বেশিরভাগ জায়গায় বৃষ্টি হয়নি। অথচ এ মহাদেশের কৃষি খাত পানির জন্য সেচের চেয়ে বৃষ্টির ওপর বেশি নির্ভরশীল।
ফলে চলমান খরায় দক্ষিণ আফ্রিকান অঞ্চলের এক-তৃতীয়াংশ দেশ বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে।
সবচেয়ে খারাপ খবর হচ্ছে, পানি সংকট এখনও চূড়ায় পৌঁছায়নি। এ অঞ্চলের সবচেয়ে উষ্ণ এবং শুষ্ক মাস—অক্টোবর—আসেইনি।
বৃষ্টিপাতের মৌসুম নভেম্বর ও ডিসেম্বরে বৃষ্টি পড়লেও ভুট্টা চাষ করে ফসল সংগ্রহের জন্য আগামী মার্চ পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হবে। ফলে সামনের কয়েক মাস তীব্র ক্ষুধার মুখোমুখি হওয়ার ঝুঁকিতে রয়েছে এ অঞ্চলের মানুষ।