জাপানের নতুন প্রধানমন্ত্রী কে এই শিগেরু ইশিবা
জাপানের ক্ষমতাসীন দল লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টি (এলডিপি) শিগেরু ইশিবাকে তাদের নতুন নেতা হিসেবে নির্বাচিত করেছে। ফলে তিনিই হচ্ছেন জাপানের পরবর্তী প্রধানমন্ত্রী।
চারবারের ব্যর্থ চেষ্টার পর পঞ্চমবারে এসে দলের প্রধান হলেন ইশিবা। দলটি গত ৭০ বছরেরও বেশি সময় ধরে জাপানের ক্ষমতায় রয়েছে।
ইশিবা এমন সময়ে এলডিপির হাল ধরতে যাচ্ছেন, যখন কি না দলটি এক অস্থির সময় পার করছে। অন্তর্কোন্দল আর কেলেঙ্কারিতে জর্জরিত দলটির অবস্থান এখন অনেকটাই দুর্বল।
১৯৮৬ সালে প্রথমবারের মতো জাপানের পার্লামেন্ট মেম্বার নির্বাচিত হন ইশিবা। দেশটির প্রতিরক্ষামন্ত্রী ও কৃষিমন্ত্রী হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেছেন তিনি।
এর আগেও চারবার দলের প্রধান হওয়ার জন্য দৌড়েছিলেন ইশিবা। কিন্তু বর্তমান প্রধানমন্ত্রী ফুমিও কিশিদাসহ আগেরবার যারা প্রধান হয়েছেন, তাদের টপকাতে পারেননি তিনি। দলের মধ্যে বিরোধী কণ্ঠস্বর হিসেবেও বেশ পরিচিত তিনি।
ইশিবা পারমাণবিক শক্তির ব্যবহার বৃদ্ধির মতো নীতির বিরোধিতা করেছেন। সেইসঙ্গে জাপানে বিবাহিত নারী-পুরুষের আলাদা পদবি ব্যবহারের অনুমতি না দেওয়ার বিষয়ে নিজ দলেও সমালোচনা করেছেন তিনি।
আজ শুক্রবার এলডিপি কার্যালয়ে দলপ্রধান হিসেবে নির্বাচিত হওয়ার আগে ইশিবা উপস্থিত দলের সদস্যদের বলেন, 'আমি সন্দেহাতীতভাবে অনেকের অনুভূতিতে আঘাত করেছি, অপ্রীতিকর অভিজ্ঞতার সৃষ্টি করেছি ও অনেককেই কষ্ট দিয়েছি। আমি সব ভুলের জন্য ক্ষমা চাইছি।'
ইশিবা জাপানের গ্রামীন এলাকা টটোরি প্রিফেকচারের শিন্তো মন্দির থেকে তার ক্যাম্পেইন শুরু করেছিলেন এবং সমর্থকদের উদ্দেশে বলেছিলেন যে এটাই তার 'শেষ প্রচেষ্টা'। তার বাবা একসময় এ অঞ্চলেরই গভর্নর ছিলেন।
জাপানের পিছিয়ে থাকা এলাকাগুলোর উন্নয়নে ইশিবা রাজধানী টোকিও থেকে কিছু মন্ত্রণালয় ও সরকারি সংস্থাগুলো স্থানান্তরের প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। সেইসঙ্গে ঝুঁকিপ্রবণ অঞ্চলে জরুরি আশ্রয়ব্যবস্থা তৈরির জন্য একটি সংস্থা গঠনেরও প্রস্তাব দিয়েছেন।
বাইরে গ্রহণযোগ্যতা, দলের অভ্যন্তরে শত্রুতা
ফুমিও কিশিদার পদত্যাগ চাওয়া, পাশাপাশি বিভিন্ন বিষয়ে দলের অন্য নেতাদের সঙ্গে সুর মিলিয়ে কথা না বলার কারণে দলের অনেকেই ইশিবার প্রতি বিরক্ত। তার এই স্পষ্টবাদী অবস্থান জনসাধারণের মাঝে গ্রহণযোগ্যতা বাড়ালেও দলের কারো কারো কাছে তাকে শত্রুতে পরিণত করেছে।
আর এই শত্রুতাই আজ শুক্রবারের নির্বাচনে ইশিবার প্রার্থী মনোনীত হওয়ার জন্য প্রয়োজনীয় ২০টি মনোনয়ন পাওয়া কঠিন করে তুলেছিল।
ইশিবা যখন সরকারের বাইরে ছিলেন, তখনও জাপানের জন্মহার হ্রাসসহ বিভিন্ন বিষয় নিয়ে ইউটিউবসহ সোশ্যাল মিডিয়া ও গণমাধ্যমে সোচ্চার থাকার মধ্য দিয়ে সবসময়ই জনসমক্ষে থেকেছেন।
মার্কিন কূটনীতি
ইশিবা দায়িত্ব নেওয়ার পর জাপান তার যুক্তরাষ্ট্র নীতিতে পরিবর্তন আনতে পারে। তিনি এমন ইঙ্গিত আগেই দিয়েছেন।
ইশিবাকে এলডিপির একজন প্রধান চিন্তাবিদ এবং জাতীয় নিরাপত্তা বিষয়ক বিশেষজ্ঞ হিসেবে বিবেচনা করা হয়। তিনি জাপানকে এমন একটি রাষ্ট্র হিসেবে চান, যেখানে দীর্ঘদিনের মিত্র যুক্তরাষ্ট্রের ওপর দেশটিকে কম নির্ভর করতে হবে।
অবশ্য বিশেষজ্ঞরা এ বিষয়ে বলেছেন, ইশিবার এমন অবস্থান ওয়াশিংটনের সঙ্গে টোকিওর সম্পর্ককে জটিল করে তুলতে পারে।
ক্যাম্পেইনের সময় ইশিবা একটি 'এশিয়ান ন্যাটো' গঠনে নেতৃত্ব দেওয়ার জন্য জাপানকে আহ্বান জানিয়েছিলেন। তার এই ধারণাকে তাৎক্ষণিকভাবে প্রত্যাখ্যান করে যুক্তরাষ্ট্র।
জাপানের ওকিনাওয়ায় সবচেয়ে বেশি মার্কিন সৈন্য রয়েছে। ইশিবা বলেছিলেন যে মার্কিন সৈন্যরা যেসব ঘাঁটি ব্যবহার করবে, সেগুলোর ওপর তিনি আরও বেশি নজরদারি করবেন। তিনি এও চান যে জাপানকে এশিয়ায় পারমাণবিক অস্ত্র ব্যবহার সম্পর্কে মতামত দেওয়ার সুযোগ দেবে ওয়াশিংটন।
নীতিতে পরিবর্তন
ইশিবা কিছু নীতিগত অবস্থান শিথিল করেছেন, যা নিয়ে দলের সদস্যরা তার সঙ্গে দ্বিমত করেছিলেন। বিশেষ করে তিনি বলেছেন যে তিনি জাপানে কিছু পারমাণবিক রিঅ্যাক্টর চালু রাখবেন। যদিও ইশিবা নিজেই আগে পারমাণবিক শক্তির বিরোধিতা ও নবায়নযোগ্য শক্তির উৎসের প্রতি সমর্থন করতেন।
অনুবাদ: রেদওয়ানুল হক