পৃথিবীর উষ্ণতা বাড়ায় নাটকীয় হারে ‘সবুজ’ হচ্ছে অ্যান্টার্কটিকা
হিমের রাজ্য, যতদূর চোখ যায় সাদা বরফ আর তুষারের বিস্তার– অ্যান্টার্কটিকা মহাদেশের এমন বর্ণনাই শুনেছি আমরা। তবে পৃথিবীর উষ্ণতা ক্রমে বাড়তে থাকায়, গলে যাচ্ছে বরফের আবরণ। দক্ষিণ মেরু মহাদেশের ভূখণ্ডে বাড়ছে উদ্ভিদের আচ্ছাদন। বিশেষ করে, গত কয়েক দশকে এই সবুজায়নের হার দশগুণ বেড়েছে।
কৃত্রিম উপগ্রহ বা স্যাটেলাইট থেকে তোলা ছবি বিশ্লেষণেই উঠে এসেছে এমন বাস্তবতা। যেমন ১৯৮৬ সালে তোলা একটি ছবিতে যেখানে মাত্র এক বর্গমাইল এলাকায় দেখা যায় সবুজ আচ্ছাদন, ২০২১ সালে তোলা ছবিতে তা বেড়ে দাঁড়ায় প্রায় ১২ বর্গকিলোমিটারে। গবেষকরা জানিয়েছেন, উদ্ভিদের এই বিস্তার, বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই যা মসজাতীয় উদ্ভিদের— ২০১৬ সালের পর থেকে খুবই দ্রুত হারে হচ্ছে।
অ্যান্টার্কটিকার ভূমি পাথুরে, যার বেশিরভাগটাই তুষারচাপা পড়ে থাকে। তবে বৈশ্বিক উষ্ণায়নের কারণে শীতের সময়টুকু বাদে কিছু এলাকায় এখন আর বছরজুড়ে বরফ ও তুষারের আচ্ছাদন থাকছে না। সেখানেই জন্মাচ্ছে এসব উদ্ভিদ। এই ঘটনাকে দক্ষিণের মহাদেশে বৈশ্বিক উষ্ণতার প্রভাব বিস্তারের লক্ষণ হিসেবে দেখা হচ্ছে। বিজ্ঞানীরা সতর্ক করে বলেছেন, এতে করে অ্যান্টার্টিকার অকলুষিত বাস্তুসংস্থানে আগ্রাসী প্রজাতির বিস্তার বাড়বে, যারা এখানকার নয়।
আর্কটিক বা উত্তর মেরু অঞ্চলেও সবুজায়নের খবর জানা গেছে। এমনকি ২০২১ সালে গ্রিনল্যান্ডের বিশাল হিমবাহের চূড়ায় প্রথমবারের মতো তুষারপাত না হয়ে বৃষ্টি হয়েছে।
যুক্তরাজ্যের এক্সেটার বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক এবং এই গবেষণায় নেতৃত্ব দেওয়া ড. থমাস রোলান্ড বলেন, "অ্যান্টার্কটিকার ভূপ্রকৃতির বেশিরভাগ অংশে তুষার, বরফ ও পাথরের আধিপত্য। তবে ছোট্ট একটি অঞ্চলে উদ্ভিদের আচ্ছাদন নাটকীয়ভাবে বেড়েছে – মানবিক কর্মকাণ্ডের ফলে হওয়া জলবায়ু পরিবর্তন যে পৃথিবীর সুদূরের দুর্গম অঞ্চলকেও ছাড় দিচ্ছে না, এতে তাই প্রমাণ হচ্ছে।"
প্রভাবিত অংশটি অ্যান্টার্কটিক পেনিনসুলা বা উপদ্বীপে। এই উপদ্বীপের আয়তন মাত্র ৫ লাখ বর্গকিলোমিটার। অন্যদিকে অ্যান্টার্কটিক মহাদেশের সম্পূর্ণ আয়তন ১ কোটি ৪২ লাখ বর্গকিলোমিটার। অর্থাৎ ইউরোপ মহাদেশের চেয়ে ৪০ শতাংশ বড়।
কার্বন নিঃসরণ বন্ধ করা না গেলে – ভবিষ্যতে এ অঞ্চলে উষ্ণায়ন আরো বাড়বে বলে সতর্ক করেন ড. থমাস রোলান্ড। তিনি বলেন, এতে অ্যান্টার্কটিকার ভূপ্রকৃতি ও জীবমণ্ডলে ব্যাপক পরিবর্তন হবে। তাঁদের করা গবেষণাটি সম্প্রতি প্রকাশ করা হয়েছে ন্যাচার জিওসায়েন্স জার্নালে।