হিমালয়ে আটকা পড়া দুই পর্বতারোহী তিনদিন পর উদ্ধার
ভারতের উত্তরাঞ্চলে হিমালয়ের চৌখাম্বা পর্বতে অভিযানে গিয়ে আটকে পড়া দুজন পর্বতারোহীকে তিনদিন পর উদ্ধার করা হয়েছে।
ব্রিটিশ পর্বতারোহী ফে ম্যানার্স এবং তার সঙ্গী যুক্তরাষ্ট্রের মিশেল ডভোরাক চৌখাম্বা পর্বতে অভিযানে থাকার সময় তাদের খাবার, তাঁবু এবং প্রয়োজনীয় সরঞ্জাম বহনকারী দড়িটি ছিঁড়ে যাওয়ায় বিপদে পড়েন। পরবর্তীতে, ২০ হাজার ফুট উঁচুতে তারা একটি জরুরি বার্তা পাঠালেও, প্রাথমিকভাবে উদ্ধারকারী দল তাদের খুঁজে পেতে ব্যর্থ হয়।
ম্যানার্স বিবিসিকে জানান, তারা নিজেরাই পাহাড় থেকে কিছুটা নামার চেষ্টা করেছিলেন এবং তখন ভীষণ ভীত ছিলেন। পরে উদ্ধারকারীরা এসে তাদের সহায়তা করেন।
ফে ম্যানার্স একজন অভিজ্ঞ আলপাইন পর্বতারোহী এবং তিনি জটিল পর্বতারোহণে বিশেষ দক্ষতা অর্জন করেছেন। বর্তমানে তিনি ফ্রান্সের শ্যামোনিতে বাস করছেন।
পর্বতারোহণের সময় একটি আলগা পাথরে ঘষা লেগে তাদের ব্যাগ বহনকারী দড়ি ছিঁড়ে গেলে ম্যানার্স "হতাশ" হয়ে পড়েছিলেন। তিনি বলেন, "আমি ব্যাগটিকে পর্বত থেকে গড়িয়ে পড়তে দেখলাম এবং সঙ্গে সঙ্গেই বুঝে গেলাম, এর ফলাফল কী হতে যাচ্ছে।"
ম্যানার্স বলেন, "আমাদের নিরাপত্তার সব সরঞ্জাম হারিয়ে গেল। কোনো তাঁবু নেই, বরফ গলিয়ে পানি তৈরির কোনো চুলা নেই, সন্ধ্যার ঠান্ডা থেকে বাঁচার জন্য কোনো উষ্ণ কাপড় নেই। বেসক্যাম্পে ফিরে যাওয়ার জন্য আইস অ্যাক্স ও ক্র্যাম্পনও নেই। রাতের অন্ধকারে চলাচলের জন্য হেড টর্চও ছিল না।"
তবে তারা জরুরি পরিষেবায় একটি বার্তা পাঠাতে সক্ষম হন, যার মাধ্যমে উদ্ধার কার্যক্রম শুরু হয়।
দুজন পর্বতারোহীকে ভয়ানক প্রতিকূল অবস্থায় টিকে থাকতে হয়েছিল। একটি মাত্র স্লিপিং ব্যাগ ভাগাভাগি করে নেওয়ার পাশাপাশি তারা প্রচণ্ড ঠান্ডা ও খাদ্যাভাবে ভুগছিলেন। জরুরি বার্তা পাঠানোর পরেও খারাপ আবহাওয়া ও পর্বতের বিশালতার কারণে উদ্ধারকারী হেলিকপ্টার প্রথমে তাদের খুঁজে পেতে ব্যর্থ হয়।
ম্যানার্স বলেন, "তারা আমাদের উদ্ধার করার চেষ্টা করেছিল, কিন্তু খারাপ আবহাওয়া, কুয়াশা, উচ্চতা, এবং পাহাড়ের বিশালতার কারণে উদ্ধারকারী দল কাজ করতে পারছিল না।"
অবশেষে খুব সামান্য পানি ও কোনো খাবার না থাকার কারণে তারা নিজেরাই নিচে নামার সিদ্ধান্ত নেন। দুই রাত প্রচণ্ড ঠাণ্ডায় কাটানোর পর তারা বুঝতে পেরেছিলেন, হেলিকপ্টারের সাহায্য আসবে না; তাই নিজেদেরকেই নিচে নামতে হবে।
ম্যানার্স বিবিসিকে বলেন, "আমরা জানতাম হেলিকপ্টারটি আমাদের সাহায্য করবে না। তাই আমাদের নিজেদেরকে নিচে নামার চেষ্টা করতে হবে।"
দ্বিতীয় দিনের সকালে তারা সতর্কভাবে পাহাড়ের পাথুরে ঢাল বেয়ে নিচে নামতে শুরু করেন কারণ যেহেতু তারা শারীরিকভাবে দুর্বল অবস্থায় ছিলেন, সেহেতু যেকোনো ভুল মারাত্মক হতে পারত।
ফে ম্যানার্স ও মিশেল ডভোরাক চৌখাম্বা পর্বতে আটকা পড়ার পর অবশেষে ফরাসি পর্বতারোহীদের একটি দল তাদের দেখতে পান। দলটি আটকে পরা দুই পর্বতারোহীর ব্যাপারে পারস্পরিক বন্ধুদের মাধ্যমে জানতে পেরেছিলেন।
ফরাসি দলটি তাদের সাথে থাকা খাবার, সরঞ্জাম ও স্লিপিং ব্যাগ দিয়ে ম্যানার্স ও ডভোরাককে সাহায্য করেন এবং উদ্ধারকারী হেলিকপ্টারকে তাদের সঠিক অবস্থান জানায়। ম্যানার্স আনন্দে কেঁদে ফেলেন কারণ তারা দুজনে বাচারা আশা প্রায় ছেড়ে দিয়েছিলেন।
ফরাসি দলটি তাদেরকে একটি খাড়া হিমবাহ পার হতে সাহায্য করে, যা ক্র্যাম্পন ও আইস অ্যাক্স ছাড়া অসম্ভব ছিল। এই সাহায্য না পেলে তারা হয়ত ঠাণ্ডায় জমে মারা যেতেন অথবা সরঞ্জাম ছাড়াই হিমবাহ পার হতে গিয়ে ফসকে পড়ে যেতেন।
২০২২ সালে ফে ম্যানার্স প্রথম নারী হিসেবে মঁ ব্লঁ-এর (মন্ট ব্ল্যাংক) গ্র্যান্ড জোরাসেস পর্বতের দক্ষিণ মুখের ফ্যান্টম ডিরেক্ট রুট জয় করেন। গত বছর পাকিস্তান ও গ্রিনল্যান্ডের শৃঙ্গও সফলভাবে আরোহণ করেছেন তিনি।
ম্যানার্স বলেন, "আমরা যেভাবে টিকে ছিলাম এবং ফিরে এসেছি, তা অসাধারণ ছিল।" তবে তিনি জানান, তিনি "শারীরিকভাবে বিধ্বস্ত, মানসিকভাবে বিপর্যস্ত এবং এতটাই ক্লান্ত অনুভব করছেন যে, এখন ঘুমাতেও পারছেন না।"
ম্যানার্স ও ডভোরাক এখন কিছু স্থানীয় ভারতীয় খাবার খাওয়ার পরিকল্পনা করছেন। এরপর তারা তাদের প্রিয়জনদের কাছে ফিরে যাওয়ার জন্য ফ্লাইট ধরবেন।
ব্রিটিশ ফরেন, কমনওয়েলথ এন্ড ডেভেলপমেন্ট অফিসের একজন মুখপাত্র বলেন, "ভারতে নিখোঁজ হওয়া এক ব্রিটিশ নারীর পরিবারকে আমরা সহায়তা করেছি এবং ঐ নারীকে নিরাপদ অবস্থায় উদ্ধার করা হয়েছে।"