১০০ বছর আগে নিখোঁজ হওয়া এভারেস্ট আরোহীর দেহাবশেষ উদ্ধার!
তথ্যচিত্র প্রস্তুতকারীদের একটি দল দাবি করছে, তারা পৃথিবীর সর্বোচ্চ শৃঙ্গ এভারেস্টে ১০০ বছর আগে নিখোঁজ হওয়া এক ব্যক্তির দেহাবশেষের খোঁজ পেয়েছে। ন্যাশনাল জিওগ্রাফিক ম্যাগাজিন আজ শুক্রবার (১১ অক্টোবর) এক প্রতিবেদনে এ খবর জানিয়েছে।
প্রতিবেদনে বলা হয়, তথ্যচিত্র তৈরি করতে একটি দল মাউন্ট এভারেস্টে গেলে সেই নিখোঁজ ব্যক্তির খোঁজ পান তারা। জানা যায়, ওই ব্যক্তি ১০০ বছর আগে এভারেস্টের চূড়ায় চড়তে গিয়ে নিখোঁজ হন।
জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে হিমালয়ের তুষার ও বরফের আবরণ পাতলা হয়ে যাচ্ছে। যার কারণে এ পর্বতের চূড়ায় উঠার স্বপ্ন নিয়ে ছুটতে গিয়ে যারা মৃত্যুবরণ করেছেন তাদের অনেকের মৃতদেহ দৃশ্যমান হয়ে উঠছে।
১৯২৪ সালে অ্যান্ড্রু আরভিন ও তার সঙ্গী জর্জ ম্যালরির একসঙ্গে নিখোঁজ হন। তারা সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে আট হাজার ৮৪৮ মিটার উচ্চতার এভারেস্টের চূড়ায় প্রথম আরোহণকারী হতে চেয়েছিলেন।
১৯৯৯ সালে ম্যালরির মৃতদেহের খোঁজ পাওয়া যায়। কিন্তু ন্যাশনাল জিওগ্রাফির ওই দলটি একটি বুট খুঁজে না পাওয়া পর্যন্ত আরভিনের ভাগ্যে আসলে কি ঘটেছিল তা জানা যায়নি। এভারেস্টের চূড়ায় সেন্ট্রাল রঙবুক হিমবাহে খোঁজ পাওয়া আরভিনের সেই বুটটি থেকে তার এক পায়ের মোজাও উদ্ধার করা হয়। সেই মোজাটির লাল লেবেল ছিল এবং সেখানে এ সি আরভিন সেলাই করে লেখা ছিল।
এ আবিষ্কারটি দলের ব্যক্তিগত পরীক্ষা নিরীক্ষার মাধ্যমে তাদের অবস্থান সম্পর্কে আরও তথ্য দিতে পারে এবং আরভিন ও ম্যালরি আদৌও এভারেস্টের শিখরে পৌঁছাতে পেরেছিলেন কিনা- এ রহস্যগুলো সমাধানে সাহায্য করবে।
এ ঘটনার তিন দশক পরে ১৯৫৩ সালে এডমন্ড হিলারি ও তেনজিং নোরগে সফল ভাবে এভারেস্টের চূড়ায় আরোহণ করেন এবং তাদেরই প্রথম আরোহণকারী হিসেবে ধরা হয়। কিন্তু দলটির এ আবিষ্কার পরীক্ষা-নিরীক্ষার করে নিশ্চিত হওয়া গেলে আরভিন ও ম্যালরই হতে পারেন এভারেস্টের প্রথম আরোহী।
আরভিনের গ্রেট-ভাইঝি জুলি সামারস ন্যাশনাল জিওগ্রাফিকে বলেন, "এর মাধ্যমেই সেসময় কী ঘটেছিল, সেই পুরো গল্পটি জানা যাবে।"
আরভিনের মরদেহ শনাক্তে তার পরিবার ডিএনএ নমুনা দেওয়ার প্রস্তাব করেছিল বলেও জানা যায়।
আরভিন যখন নিখোঁজ হন তখন তার বয়স ছিল মাত্র ২২ বছর। ১৯২৪ সালের ৮ জুন এভারেস্ট অভিযানের সময় ম্যালরি ও আরভিনের সঙ্গে শেষ দেখা হয় তাদেরই দলের এক সদস্যের সঙ্গে। ধারণা করা হচ্ছে, আরভিন পর্বতারোহণের সময় একটি ভেস্ট ক্যামেরা বহন করেছিলেন। সেটি উদ্ধার করা গেলে এভারেস্টে আরোহণের ইতিহাস পুনর্লিখন করতে হতে পারে।
ন্যাশনাল জিওগ্রাফিক ম্যাগাজিনের তথ্যচিত্র প্রস্তুতকারী দলের ফটোগ্রাফার ও ডিরেক্টর জিমি চিন জানান, তিনি বিশ্বাস করেন যে এ ক্যামেরাটি তাদের তদন্তের পরিসীমা কমিয়ে দিয়েছে।
১৯২০ এর দশকে এভারেস্ট অভিযান শুরু হওয়ার পর থেকে এ পর্যন্ত ৩০০ জনেরও বেশি লোক মারা গেছেন। তাদের মধ্যে কেউ কেউ তুষারের নিচে ঢাকা পরেছেন কিংবা হিমবাহের ফাটলের অতল গহ্বরে হারিয়ে গেছেন। আবার অনেকে এখনও রঙিন ক্লাইম্বিং গিয়ার পরে এভারেস্টের চূড়ায় যাওয়ার ল্যান্ডমার্ক হয়ে আছেন। তাদের অনেককেই 'গ্রিন বুটস' কিংবা 'স্লিপিং বিউটি' এর মতো হাস্যকর নামে ডাকেন নতুন আরোহীরা।