ইয়াহিয়া সিনওয়ারের মৃত্যুর পর হামাসের নতুন প্রধান কে হচ্ছেন?
গত বছরের ৬ আগস্ট তেহরানে নিহত সাবেক রাজনৈতিক প্রধান ইসমাইল হানিয়াহর উত্তরসূরি হিসেবে ইয়াহিয়া সিনওয়ারকে, ফিলিস্তিনের স্বাধীনতাকামী সংগঠন হামাসের সর্বোচ্চ নেতা হিসেবে ঘোষণা করা হয়।
এরপরই ৭ অক্টোবর ইসরায়েলে হামলা চালায় হামাস। এ হামলার মূল পরিকল্পনাকারী সিনওয়ার ছিলেন বলে ধারণা করা হয়। যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর থেকে তাকে হত্যার ইসরায়েলি প্রচেষ্টা বারবার ব্যর্থ হয়েছে। তবে গত বৃহস্পতিবার (১৭ অক্টোবর, ২০২৪) ইসরায়েলি বিমান হামলায় গাজায় সিনওয়ারের মৃত্যু হয়।
হানিয়া, ও সিনওয়ারের মৃত্যুর পর হামাসের হাল ধরবেন কে তা নিয়ে এখন চলছে জল্পনা। সিনওয়ারের মৃত্যু হামাসের জন্য কয়েক দশকের মধ্যে সবচেয়ে বড় ক্ষতি হলেও সংগঠনটি অতীতে বেশ কয়েকবার নেতৃত্ব হারিয়েও টিকে থাকার প্রমাণ দিয়েছে। হামাসের দুই কর্মকর্তা জানিয়েছেন, ইয়াহিয়া সিনওয়ারের মৃত্যুর পর তার উত্তরসূরি নির্বাচনের আলোচনা খুব শিগগিরই শুরু হবে।
শীর্ষ সিদ্ধান্ত গ্রহণকারী সংস্থা শূরা কাউন্সিল এবারও নতুন নেতা নির্বাচনের দায়িত্বে রয়েছে। এই কাউন্সিল গাজা, পশ্চিম তীর, ইসরায়েলি কারাগার এবং প্রবাসী ফিলিস্তিনিদের প্রতিনিধিত্ব করে। হামাস নেতৃত্ব পুনরায় সমাবেশ করে সিনওয়ারের উত্তরসূরি নির্বাচনের জন্য বৈঠক করবে।
খালিল আল-হাইয়া, যিনি সিনওয়ারের ডেপুটি এবং গাজার বাইরে হামাসের সবচেয়ে সিনিয়র নেতা, সম্ভাব্য নতুন নেতা হিসেবে আলোচনায় রয়েছেন। তিনি কাতারে থেকে হামাসের পক্ষ থেকে ইসরায়েলের সঙ্গে চলমান যুদ্ধবিরতি আলোচনায় নেতৃত্ব দিচ্ছেন।
ইসরায়েলের হামলার পর শুক্রবার (১৮ অক্টোবর) এক কড়া বার্তায় তিনি বলেন, ইসরায়েলি সেনারা গাজা থেকে সম্পূর্ণভাবে না সরলে এবং যুদ্ধ বন্ধ না হলে বন্দী ইসরায়েলিদের ফিরিয়ে দেওয়া হবে না।
বিশ্লেষক এবং হামাসের সূত্র অনুযায়ী, খালিল আল-হাইয়া ছাড়াও অন্য দুই প্রধান প্রার্থী হলেন হামাসের সাবেক নেতা খালেদ মেশাল এবং শূরা কাউন্সিলের সভাপতি মোহাম্মদ দারউইশ। বিশেষ করে মোহাম্মদ দারউইশ কম পরিচিত একজন ব্যক্তি হলেও তিনি গুরুত্বপূর্ণ প্রার্থী হতে পারেন।
আলোচনায় রয়েছেন সিনওয়ারের ভাই মোহাম্মদ সিনওয়ারও। সম্প্রতি হামাসের সামরিক শাখার কমান্ডার হয়েছেন তিনি।
জুলাই থেকে যুদ্ধবিরতির আলোচনা স্থবির হয়ে রয়েছে, এবং অনেকে মনে করেন সিনওয়ারের নেতৃত্ব সেই আলোচনার ক্ষেত্রে একটি প্রধান বাধা ছিল। তবে সিনওয়ারের মৃত্যুর পরও হামাস জানিয়েছে, তারা তাদের পূর্বের অবস্থান থেকে সরে আসেনি। তারা ইসরায়েলের কাছ থেকে গাজা থেকে সম্পূর্ণ সেনা প্রত্যাহার, হামলা বন্ধ, মানবিক সহায়তা এবং অঞ্চল পুনর্গঠনের দাবি করছে। ইসরায়েল এসব শর্ত মানতে অস্বীকৃতি জানিয়েছে এবং হামাসের আত্মসমর্পণের দাবি করেছে।
ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহুর অস্ত্র সমর্পণের আহ্বানের জবাবে হামাসের কর্মকর্তারা বলেন, "আমাদের আত্মসমর্পণ অসম্ভব। আমরা আমাদের জনগণের স্বাধীনতার জন্য লড়াই করছি এবং শেষ বুলেট ও শেষ সৈনিক পর্যন্ত আমরা লড়াই চালিয়ে যাব, যেমনটি সিনওয়ার করেছিলেন।"
হামাস তাদের সিদ্ধান্তের আগে কাতারসহ আঞ্চলিক দেশগুলোকে জানাবে, কারণ কাতার আগের যুদ্ধবিরতির আলোচনায় বড় ভূমিকা পালন করেছে।
এদিকে, গাজায় সংঘর্ষ চলতে থাকায় জাবালিয়া শরণার্থী শিবিরে ইসরায়েলি হামলায় শনিবার (১৯ অক্টোবর) বেশ কয়েকজন নিহত হয়েছে। ইসরায়েল দাবি করেছে, হামাস সেখানে পুনরায় সংগঠিত হওয়ার চেষ্টা করছে।