বিক্রি হবে ‘দ্য লিটল প্রিন্স’-এর দুর্লভ টাইপ করা কপি, মূল্য ‘মাত্র’ ১৫ কোটি টাকা
'দ্য লিটল প্রিন্স'—সারা বিশ্বেই জনপ্রিয় শিশু সাহিত্যের এই বই। বইটির একটি দুর্লভ কার্বন টাইপস্ক্রিপ্ট (টাইপ করা কপি) আগামী নভেম্বরে সংযুক্ত আরব আমিরাতের আবুধাবি আর্ট ফেস্টিভ্যালে বিক্রির জন্য তোলা হবে। বইটির দাম নির্ধারণ করা হয়েছে ১.২৫ মিলিয়ন ডলার—বাংলাদেশি মুদ্রায় যা প্রায় ১৫ কোটি টাকা।
এই প্রথমবারের মতো এই ক্লাসিক বইয়ের টাইপস্ক্রিপ্ট জনসাধারণের জন্য বিক্রির উদ্দেশ্যে হাজির করা হচ্ছে।
ধারণা করা হচ্ছে, এই পাণ্ডুলিপিতেই প্রথমবারের মতো লেখা হয়েছে সেই বিখ্যাত কথা: 'On ne voit bien qu'avec le cœur. L'essentiel est invisible pour les yeux'—'আসলটা চোখের আড়ালে; অন্তরই তার নাগাল পায়।' অর্থাৎ পৃথিবীতে যা কিছু গুরুত্বপূর্ণ তা চোখ দিয়ে দেখা বা ছোঁয়া যায় না। সেসব দেখতে হলে হৃদয় লাগে।
পিটার হ্যারিংটন রেয়ার বুকসের টাইপস্ক্রিপ্ট বিক্রেতা ও সিনিয়র সাহিত্য বিশেষজ্ঞ স্যামি জে বলেন, আগের খসড়াগুলোতে সাঁত-একজুপেরি স্রেফ ভাসা ভাসাভাবে এই কথাগুলো লিখেছিলেন, 'মাথার মধ্যে নেড়েচেড়ে দেখছিলেন'। কথাগুলো প্রকৃত অর্থে পূর্ণ বাক্য হয়ে লিখিত আকার পায় এই টাইপস্ক্রিপ্টেই।
১৯৪০-এর দশকে নাৎসি অধিকৃত ফ্রান্স থেকে নির্বাসিত থাকা অবস্থায় নিউইয়র্কে বসে টাইপস্ক্রিপ্টটি তৈরি করেছিলেন বইটির লেখক আঁতোয়ান দ্য সাঁত-একজুপেরি।
দুর্লভ এ টাইপস্ক্রিপ্টে একজুপেরির নিজের হাতে লেখা ফুটনোট এবং স্কেচ রয়েছে। সারা বিশ্বে এ বইয়ের মাত্র তিনটি টাইপস্ক্রিপ্ট রয়েছে।
স্যামি জে বলেন, এই টাইপ করা পাণ্ডুলিপির হাতে পাওয়াটা 'অত্যন্ত বিরল ঘটনা'।
সাঁত-একজুপেরি দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ চলাকালে শিশুদের জন্য 'দ্য লিটল প্রিন্স' লেখেন। মূল ফরাসিতে এর নাম 'লা পেটিট প্রিন্স'। বইটি ১৯৪৩ সালে প্রকাশিত হয়। ইংরেজিতেও প্রকাশিত হয় সে বছরই।
একজুপেরি একজন অভিজ্ঞ পাইলট ছিলেন। বইটি লেখার পর ফ্রি ফ্রেঞ্চ বিমানবাহিনীর হয়ে নাৎসি জার্মানির বিরুদ্ধে একটি মিশনে যান। ভূমধ্যসাগরের উপর দিয়ে উড়ে যাওয়ার সময় তিনি নিখোঁজ হন। তার বিমান কীভাবে বিধ্বস্ত হয়েছিল, তা এখনও জানা যায়নি।
বিখ্যাত এই বইয়ের গল্প আবর্তিত হয়েছে দুর্ঘটনায় এক মরুভূমিতে আটকে পড়া একজন পাইলট ও দূর গ্রহ থেকে পৃথিবী ভ্রমণে আসা ছোট্ট ছেলে 'লিটল প্রিন্স'কে ঘিরে। ধর্মীয় গ্রন্থগুলো ছাড়া 'লিটল প্রিন্স'ই পৃথিবীর সবচেয়ে বেশি ভাষায় অনূদিত বই।
প্রকাশের পর থেকে বইটি বিশ্বের বিভিন্ন ভাষায় অনূদিত ও লক্ষাধিক কপি বিক্রিত হয়েছে।
সাঁত-একজুপেরির মূল পাণ্ডুলিপিটি এখন নিউইয়র্কে আছে। এখন পর্যন্ত বইটির আর দুটি টাইপস্ক্রিপ্টের সন্ধান পাওয়া গেছে। এর একটি ফ্রান্সের জাতীয় গ্রন্থাগারে ও অপরটি টেক্সাসের হ্যারি র্যানসম সেন্টারে সংরক্ষিত রয়েছে।
স্যামি জে বিবিসিকে জানান, নিখোঁজ হওয়ার আগে সাঁত-একজুপেরি ওই দুটি টাইপস্ক্রিপ্ট তার বন্ধুদের দিয়েছিলেন। তবে তৃতীয় পাণ্ডুলিপিরটি 'কাউকে অর্পণ বা উৎসর্গ করা হয়নি'।
তিনি জানান, এই টাইপস্ক্রিপটি গত 'কয়েক দশক ধরে' ফ্রান্সের একটি ব্যক্তিগত সংগ্রহে ছিল।
২০২৪ সালের গোড়ার দিকে টাইপস্ক্রিপ্টটি পিটার হ্যারিংটন রেয়ার বুকসের হাতে আসে। এর পর থেকেই তারা পাণ্ডুলিপিটির ক্যাটালগিং করছে। পাশাপাশি এটি নিয়ে গবেষণার ও বিক্রির জন্য প্রস্তুতও করছে।
টাইপস্ক্রিপটটির মলাতে সিগারেটের চিহ্ন রয়েছে। এছাড়া ভেতরে পাতায় পাতায় সাঁত-একজুপেরির হাতে লেখা ফুটনোট, মন্তব্য ও সম্পাদনা রয়েছে।
স্যামি জে আরও বলেন, এই টাইপস্ক্রিপ্টে আগের দুটির চেয়ে লেখকের ছোঁয়া রয়েছে অনেক বেশি।
এতে লিটল প্রিন্সের দুটি স্কেচ রয়েছে, যার একটি বইয়ের চূড়ান্ত ইলাস্ট্রেশনের খসড়া। স্যামি জে বলেন, 'লিটল প্রিন্স' বিশ্বসাহিত্যের অন্যতম 'ঐতিহ্য', কারণ এটি বিশ্বের সবচেয়ে বেশি অনুবাদ হওয়া বইগুলোর একটি।
- 'আসলটা চোখের আড়ালে; অন্তরই তার নাগাল পায়।':—এই অনুবাদটুকু ফাদার দ্যতিয়েনকৃত তর্জমা 'ছোট রাজকুমার' থেকে নেওয়া হয়েছে।