১৭ দিনে ৬ হাজার কি.মি আফ্রিকান পথ পাড়ি দিল সৌরচালিত মোটরসাইকেল!
একটি বৈদ্যুতিক মোটরসাইকেল দীর্ঘ ১৭ দিনের যাত্রায় শুধু সৌরশক্তি ব্যবহার করে আফ্রিকা মহাদেশজুড়ে ৬ হাজার কিলোমিটার পথ ভ্রমণ করেছে। রোম কোম্পানির এই বাইকটি কেনিয়ার নাইরোবি থেকে থেকে যাত্রা শুরু করে দক্ষিণ আফ্রিকার স্টেলেনবোশে পৌঁছায়।
যদিও ইলেকট্রিক মোটরসাইকেলের জগতে এটিই সর্বোচ্চ ভ্রমণ নয়। এর আগে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে বৈদ্যুতিক মোটরসাইকেল ৪২ দিনে ২৫ হাজার কিলোমিটার পথ পাড়ি দিয়েছে।
তবে রোমের এবারের পদক্ষেপ বৈদ্যুতিক গাড়ির জগতে একটি গুরুত্বপূর্ণ মাইলফলক। কেননা এতে করে নবায়নযোগ্য শক্তি ব্যবহার করে চার্জিং অবকাঠামো কম থাকা সত্ত্বেও দীর্ঘ দূরত্ব পাড়ি দেওয়ার সক্ষমতার বিষয়টি সামনে এসেছে।
যাত্রাপথে মোটরসাইকেলটিকে সোলার প্যানেল চার্জিং সিস্টেম দিয়ে চার্জ দেওয়া হয়েছে। এক্ষেত্রে একটি সহযোগী গাড়ি ব্যবহার করা হয়েছে। এমনকি এক চার্জে সর্বোচ্চ ১১৩ কিলোমিটার ভ্রমণ করেছে। আর শেষ ১৮ ঘণ্টার এটি ১ হাজার কিলোমিটারের চেয়েও বেশি পথ ভ্রমণ করেছে।
এই যাত্রার অন্যতম চালক মাসা কিটুয়ি বলেন, "আমরা চেয়েছিলাম আগে থেকেই ইনস্টল করা চার্জিং অবকাঠামো ছাড়া কীভাবে সাব-সাহারান আফ্রিকার বাধা পেরিয়ে ভ্রমণ করা সম্ভব সেটি দেখতে।"
কিটুয়ি ছাড়াও বাইকটি চালিয়েছেন স্টেলেনবোশ বিশ্ববিদ্যালয়ের স্নাতকোত্তর বিভাগের শিক্ষার্থী স্টিফান ল্যাকক। দুইটি সহযোগী গাড়িসহ সেপ্টেম্বরের ২৯ তারিখ যাত্রা শুরু হয়। এক্ষেত্রে যাত্রাপথে তারা তাঞ্জানিয়া, জাম্বিয়া, বোতসোয়ানা ইত্যাদি অঞ্চল ভ্রমণ করা হয়। অবশেষে ১৬ অক্টোবর স্টেলেনবোশে পৌঁছায়।
এক্ষেত্রে প্রতিদিন বাইকটি গড়ে ৪০০ কিলোমিটার ভ্রমণ করে। আর প্রতি চার্জে গড়ে ৮০ কিলোমিটার যাত্রা করে।
পুরো যাত্রায় আবহাওয়ার বিষয়টি সবচেয়ে প্রতিবন্ধকতা তৈরি করেছে। কিটুয়ি বলেন, "আপনি তো সূর্যের আলো নিজের ইচ্ছামতো পেতে পারেন না।" এক্ষেত্রে বহু সময় তা পেতে যাত্রাপথ পরিবর্তন করা হয়েছে। যাতে করে সহজে ব্যাটারি চার্জ করা যায়।
কিটুয়ি মনে করেন, সোলার সাপোর্ট গাড়ি ছাড়াও মোটরসাইকেলে বড় যাত্রা সম্ভব। এক্ষেত্রে পরিকল্পনামাফিক হোটেল বা লজগুলোতে সেই ব্যবস্থা করতে হবে। একইসাথে শহর ও প্রত্যন্ত অঞ্চলের মধ্যে বাইকটি নিয়ে ভ্রমণের বিষয়ে ভাবা হচ্ছে।
সৌর শক্তি দিয়ে দীর্ঘ পথ ভ্রমণটি রোম ও স্টেলেনবোশ বিশ্ববিদ্যালয়ের যৌথ উদ্যোগে হয়েছে। এক্ষেত্রে যানবাহন চলাচলের ক্ষেত্রে দীর্ঘস্থায়ী সমাধানের ক্ষেত্রে গত মাসে বিশ্ববিদ্যালয়টি ইলেকট্রিক মোবিলিটি ল্যাব স্থাপন করেছে। এক্ষেত্রে রোমের পক্ষ থেকে সেখানে গবেষণা ও উন্নতির জন্য দুটি মোটরসাইকেল প্রদান করা হয়েছে।
মার্কেট রিসার্চ ফার্ম মোরডোর ইন্টেলিজেন্সের তথ্যমতে, আফ্রিকার বৈদ্যুতিক গাড়ির প্রায় ১৬ বিলিয়নের মার্কেট রয়েছে। ২০১৯ সালের মধ্যে যা ২৫ বিলিয়নে পৌঁছাবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। যার পেছনে ক্রমবর্ধমান বিনিয়োগ, সরকারের পলিসি, বিক্রি বৃদ্ধি ইত্যাদি নানা বিষয় রয়েছে।
এক্ষেত্রে আফ্রিকায় দুই চাকার বৈদ্যুতিক গাড়ির চাহিদা সবচেয়ে শীর্ষে। মোরডোরের আরেক রিপোর্ট অনুযায়ী, ২০৩০ সালের মধ্যে দুই চাকার গাড়ির ২২ ভাগই হবে বৈদ্যুতিক। এক্ষেত্রে কম খরচই সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ফ্যাক্টর।
মোরডোরের পক্ষ থেকে বলা হয়, "গ্যাসোলিনের তুলনায় বিদ্যুৎ সাধারণত সস্তা ও বৈদ্যুতিক মোটরসাইকেলের যান্ত্রিক অংশ কম থাকে। এক্ষেত্রে চালকেরা শুধু জ্বালানিতেই বছরে আনুমানিক ৪০০ থেকে ৭০০ ডলার সাশ্রয় করতে পারে। ফলে বৈদ্যুতিক মোটরসাইকেল আর্থিক দিক বিবেচনায় একটি ভালো বিকল্প।"
অনুবাদ: মোঃ রাফিজ খান