তরুণরাই ট্রাম্পকে বিজয়ী করতে পারে—যদি তারা ব্যাপকভাবে ভোটকেন্দ্রে আসে
যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হবে আগামী মঙ্গলবার (৫ নভেম্বর)। নির্বাচনে কে জিতবেন, রিপাবলিকান পার্টির ডোনাল্ড ট্রাম্প নাকি ডেমোক্রেটিক পার্টির কমলা হ্যারিস? এ নিয়ে চলছে আলোচনা। কেউ সাবেক প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পকে এগিয়ে রাখছেন, কেউ আবার এগিয়ে রাখছেন প্রথমবারের মতো প্রার্থী হওয়া হ্যারিসকে।
তবে নির্বাচনী বিশ্লেষক ও বিষেশজ্ঞরা বলছেন, দেশের মোট ভোটারের বিরাট একটি অংশ তরুণ ছেলে। তাই নির্বাচনে জয়ী হওয়ার ক্ষেত্রে তাদের ভোট গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।
ডোনাল্ড ট্রাম্পও আশা করছেন, দেশের সংখ্যাগরিষ্ঠ তরুণ ছেলে এবার তার পক্ষেই রায় দেবেন।
গবেষক ও নির্বাচনী বিশ্লেষকদের মতে, যুক্তরাষ্ট্রের তরুণ ছেলেদের মাঝে অন্যান্য শ্রেণির তুলনায় ভোট দেওয়ার প্রবণতা কম। তারা তাদের সমবয়সী নারী ও বয়স্কদের তুলনায় রাজনীতির সঙ্গে কম সম্পৃক্ত। তবে ২০২০ সালের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের চিত্র কিছুটা ভিন্ন ছিল। সেবারের নির্বাচনে তরুণ ছেলেদের ভোটাধিকার প্রয়োগের হার ছিল অন্যান্য বারের চেয়ে বেশি।
যুক্তরাষ্ট্রের সেনসাস ব্যুরোর জরিপ অনুযায়ী, ওই নির্বাচনে ১৮ থেকে ২৪ বছর বয়সী মোট তরুণ ছেলেদের অর্ধেকের কিছু বেশি ভোটাধিকার প্রয়োগ করেছিল। আর এরা সংখ্যায় একই বয়সের নারীদের চেয়ে এগিয়ে ছিল। অন্যদিকে, ৬৫ থেকে ৭৪ বছর বয়সীদের মধ্যে প্রায় তিন-চতুর্থাংশ নাগরিক তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করেছিলেন।
গত শুক্রবার স্থানীয় সময় সন্ধ্যায় ট্রাম্পের নির্বাচনী র্যালিতে অংশ নিয়েছিলেন ২৩ বছর বয়সী জুমপিট নাখাপাকর্ন নামের এক তরুণ। তিনি বলেন, 'আমি আমার কয়েকজন বন্ধুকে ভোট দিতে যাওয়ার জন্য বলেছিলাম। কিন্তু জবাবে তারা বলেছিল, আমাকে ভোট দিতে হবে?'
নির্বাচনী প্রচারের পুরো সময় জুড়ে ট্রাম্প তরুণ ভোটারদের আকৃষ্ট করার চেষ্টা করেছেন। গত বৃহস্পতিবার তার প্রতি সমর্থন জানান সোশ্যাল মিডিয়া ব্যক্তিত্ব ও বক্সার জেক পল, ইউটিউবে যার ভক্ত-অনুসারীর সংখ্যা ২০ মিলিয়ন। আর এই ভক্ত-অনুসারীর বড় সংখ্যক নারী রয়েছেন।
তাই একদিকে বলা হচ্ছে, নির্বাচনে বিপুল সংখ্যক এই নারীর সমর্থন পেতে পারেন ট্রাম্প। অন্যদিকে ট্রাম্পের পুরুষালি ভাষা ও অমার্জিত মন্তব্য উল্টো তাকে এই নারীদের সমর্থন পাওয়া থেকে যে বঞ্চিত করবে না, সে কথাটিও ফেলে দেওয়ার মতো নয়।
সম্প্রতি গত কয়েক মাসে দেশের বিভিন্ন অঞ্চলের তরুণদের সাক্ষাৎকার নেওয়া হয়। তাদের কেউ কেউ জানান, তারা আজকের ডেমোক্রেটিক পার্টিতে নিজেদের জন্য কোনো জায়গা দেখছেন না।
কেউ বলেছেন, ট্রাম্পের কাছে রাজনৈতিকভাবে ঠিক নয় এমন দৃষ্টিভঙ্গি বা বিষয়গুলোর প্রতি তারা আকৃষ্ট হচ্ছেন। অনেকেই আবার তাদের আর্থিক বিষয়গুলোর দিকেই বেশি মনোযোগী।
আবার কারো কারো দাবি- ট্রাম্প তাদের শেয়ার বাজারের লাভের জন্য বেশি কাজ করবেন। কেউ কেউ ট্রাম্প প্রেসিডেন্ট থাকাকালে অবৈধ অভিবাসনের বিরুদ্ধে তার নেওয়া কঠোর নীতিরও প্রশংসা করেন।
লুক মেইহ্যাক নামের ২৫ বছর বয়সী এক স্কুলশিক্ষক বলেন, তিনি ট্রাম্পের সমর্থক ছিলেন না। তবে বর্তমান প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের সময়কালে তিনি তার অবস্থান বদলেছেন। তিনি জানান, তার সমবয়সী বহু পুরুষই একই পথে হাঁটছেন।
মেইহ্যাক বলেন, তার সমবয়সী সবাই যে ভোট দেওয়ার পরিকল্পনা করছে, তা নয়। তিনি তার স্কুলের সহকর্মীদের সঙ্গে একটি চ্যাট গ্রুপে যুক্ত আছেন। গ্রুপটিতে আট থেকে নয়জন সদস্য রয়েছেন, যাদের মধ্যে দুই-তিনজন জানিয়েছেন, তাদের ভোট দেওয়ার পরিকল্পনা নেই। আবার দুয়েকজন বলেছেন, এসব ভোটাভুটি নিয়ে তাদের কোনো মাথাব্যাথা নেই।
এদিকে শেষ মুহূর্তের নির্বাচনী প্রচার-প্রচারণায় হ্যারিস নারী ভোটারদের দিকে বেশি মনোযোগ দিচ্ছেন। কারণ, পরিসংখ্যান অনুযায়ী পুরুষদের তুলনায় নারীদের ভোট দেওয়ার সম্ভাবনা বেশি। নির্বাচনী প্রচারে হ্যারিস নারীদের গর্ভপাতের অধিকার ও তাদের নিজেদের শরীরের ওপর সিদ্ধান্ত নেওয়ার স্বাধীনতা নিশ্চিতের যে প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন, তাতে নারীরা ট্রাম্পের চেয়ে হ্যারিসের দিকেই বেশি ঝুঁকতে পারেন, এমনটাই মনে করা হচ্ছে।
হার্ভার্ড ইউনিভার্সিটির ইনস্টিটিউট অব পলিটিক্স কর্তৃক সম্প্রতি প্রকাশিত এক জরিপে দেখা গেছে, হ্যারিস ৩০ বছরের নিচে নিবন্ধিত ভোটারদের পছন্দ হিসেবে ট্রাম্পের চেয়ে ২০ পয়েন্ট এগিয়ে রয়েছেন হ্যারিস। ১৮ থেকে ২৯ বছর বয়সী পুরুষ যারা নির্বাচনে অবশ্যই ভোট দেবেন বলে জানিয়েছেন, তাদের মধ্যে ৫৫ শতাংশ হ্যারিসের প্রতি সমর্থন জানিয়েছেন। আর ট্রাম্পের প্রতি সমর্থন জানিয়েছেন ৩৮ শতাংশ।
অন্যদিকে ১৮ থেকে ২৯ বছর বয়সী পুরুষ যারা তাদের ভোটাধিকার প্রদানের বিষয়ে কম নিশ্চিত, তাদের পছন্দ হিসেবে হ্যারিসের চেয়ে ১১ পয়েন্ট এগিয়ে ট্রাম্প।
ইনস্টিটিউট অব পলিটিক্সের জরিপ পরিচালক জন ডেলা ভলপে বলেছেন, বরাবরের মতো এবারও যদি নির্বাচনের ঐতিহ্য বজায় থাকে, তাহলে হ্যারিস সম্ভবত তরুণদের বিরাট সমর্থন পাবেন। কিন্তু ২০১৬ সালের নির্বাচনের মতো ট্রাম্প যদি তরুণদের আকৃষ্ট করতে পারেন, তাহলে গল্পটা ভিন্নও হতে পারে।
তার ধারণা- ট্রাম্প ২০২০ সালের তুলনায় তরুণদের মাঝে পাঁচ থেকে সাত পয়েন্ট এগিয়ে থাকবেন। তবে এটি তখনই সম্ভব হবে যদি তারা ব্যাপকভাবে ভোটকেন্দ্রে আসে।
তিনি বলেন, 'এই তরুণেরা আমাদের এটাই বলছে যে তারা রাজনীতির সঙ্গে সংযুক্ত নন। তারা অত্যন্ত সন্দেহপ্রবণ। তাই তাদের এমন একটি ক্ষেত্রে অংশগ্রহণে উৎসাহিত করা সত্যিই কঠিন, যা তারা বিশ্বাস করে না।'
অনুবাদ: রেদওয়ানুল হক