১৬ বছরের কম বয়সিদের জন্য সোশ্যাল মিডিয়া ব্যবহার নিষিদ্ধ করবে অস্ট্রেলিয়া
১৬ বছরের কম বয়সি শিশুদের জন্য সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ব্যবহারে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করতে যাচ্ছে অস্ট্রেলিয়া সরকার। খবর বিবিসি'র।
অস্ট্রেলিয়ার প্রধানমন্ত্রী অ্যান্থনি আলবানিজ জানিয়েছেন, আগামী সপ্তাহে এই আইন সংসদে উত্থাপন করা হবে। অস্ট্রেলিয়ান শিশুদের ওপর সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের নেতিবাচক প্রভাব প্রতিরোধের লক্ষ্যেই এই আইন প্রণয়ন করা হচ্ছে।
তিনি বলেন, 'এই আইন মূলত অভিভাবকদের কথা চিন্তা করে। তারা, আমার মতোই, সন্তানদের অনলাইন নিরাপত্তা নিয়ে ভীষণ উদ্বিগ্ন। আমি চাই অস্ট্রেলিয়ান পরিবারগুলো বুঝুক, সরকার তাদের পাশে আছে।'
তবে এই আইনের প্রাথমিক বিষয়গুলো এখনও আলোচনার মধ্যে রয়েছে। তবে সরকার জানিয়েছে, ১৬ বছরের কম বয়সি শিশুদের জন্য সোশ্যাল মিডিয়ার ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হবে, এমনকি অভিভাবকের অনুমতি থাকলেও এর কোনো ব্যতিক্রম থাকবে না। এর বাস্তবায়নের দায়িত্ব থাকবে সোশ্যাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্মগুলোর ওপর।
আলবানিজ আরও বলেছেন, ব্যবহারকারীদের বিরুদ্ধে কোনো শাস্তি হবে না, বরং আইন বাস্তবায়নের দায়িত্ব থাকবে অস্ট্রেলিয়ার ই-নিরাপত্তা কমিশনারের অধীনে। আইনটি পাসের এক বছরের মধ্যে কার্যকর হবে এবং প্রয়োগের পর এটি পুনঃমূল্যায়ন করা হবে।
বিশেষজ্ঞদের মতে, সোশ্যাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্মগুলো কিশোরদের মানসিক স্বাস্থ্যের ওপর ক্ষতিকর প্রভাব ফেলতে পারে, তবে নিষেধাজ্ঞা কার্যকর হবে কিনা সে বিষয়ে তাদের ভিন্নমত রয়েছে।
অনেকেই বলছেন, এই ধরনের নিষেধাজ্ঞা কেবল শিশু-কিশোরদের এসব অ্যাপের সাথে পরিচিতি বিলম্বিত করবে; বরং তাদেরকে অনলাইন জগতের জটিলতা মোকাবিলার কৌশল শেখানো উচিত।
ইউরোপীয় ইউনিয়নের আগের কিছু পদক্ষেপ ব্যর্থ হয়েছে বা টেক কোম্পানির সমালোচনার মুখে পড়েছে। পাশাপাশি, বয়স যাচাইকরণ এড়ানোর কিছু টুল বিদ্যমান থাকায় এই আইন বাস্তবায়ন কতটা কার্যকর হবে, তা নিয়েও প্রশ্ন উঠছে।
অস্ট্রেলিয়ার একটি প্রধান শিশু অধিকার সংগঠন এই নিষেধাজ্ঞাকে 'অত্যন্ত কঠোর' বলে সমালোচনা করেছে। সংগঠনটি গত অক্টোবরে সরকারের কাছে পাঠানো এক খোলা চিঠিতে সোশ্যাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্মগুলোর ওপর 'নিরাপত্তা মানদণ্ড' আরোপের আহ্বান জানিয়েছে।
"অনলাইন নিয়ন্ত্রণে জাতীয় নীতিমালা এমন হওয়া উচিত যা শিশুদের ডিজিটাল প্ল্যাটফর্মে ইতিবাচক সম্পৃক্ততা ও নিরাপদ প্রবেশাধিকার নিশ্চিত করে"— জাতিসংঘের এমন সুপারিশের কথাও তুলে ধরেছে গ্রুপটি।
অন্যদিকে, কিছু গ্রাসরুট ক্যাম্পেইনার অস্ট্রেলিয়ার সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন এ ধরনের কঠোর আইন প্রণয়নের জন্য। তাদের মতে, এ নিষেধাজ্ঞা শিশুদের ক্ষতিকর কন্টেন্ট, ভুল তথ্য, হয়রানি ও সামাজিক চাপ থেকে রক্ষা করতে সহায়ক হবে।
কিছু বিশেষজ্ঞরা প্রশ্ন তুলেছেন, অনলাইন দুনিয়ার সুবিধা এবং ঝুঁকি সম্পর্কে শিশুদের সচেতন করার ব্যাপারে আরও উদ্যোগ নেওয়া উচিত কিনা। আলবানিজ জানিয়েছেন, এ ধরনের প্রচেষ্টা 'সমান ক্ষমতার সম্পর্কের' ওপর নির্ভর করে।
তিনি বলেন, 'আমার নিজস্ব দৈনন্দিন ব্যবহারের অনেক কিছু সামনে আসে যা আমি দেখতে চাই না; এই ধরনের কন্টেন্ট কিশোরদের জন্য আরও বেশি ক্ষতিকর। টেক কোম্পানিগুলো অত্যন্ত ক্ষমতাশালী এবং তাদের অ্যাপের অ্যালগরিদম ব্যবহারকারীদের নির্দিষ্ট আচরণের দিকে পরিচালিত করে।'
অনুবাদ: সাকাব নাহিয়ান শ্রাবন