গাজা যুদ্ধে নিহতদের প্রায় ৭০ শতাংশ নারী ও শিশু: জাতিসংঘ
গাজায় চলমান সংঘাতে বেসামরিক নাগরিকদের ব্যাপক মৃত্যুর ঘটনায় গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছে জাতিসংঘের মানবাধিকার সংস্থা। সংস্থার এক প্রতিবেদনে জানানো হয়েছে, গত ছয় মাসে নিহতদের প্রায় ৭০ শতাংশই নারী ও শিশু। খবর বিবিসি'র।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, জনবহুল এলাকায় ইসরায়েলের মরণঘাতী অস্ত্র ব্যবহারের কারণেই এসব প্রাণহানির ঘটনা ঘটছে। তবে কিছু মৃত্যুর জন্য ফিলিস্তিনি সশস্ত্র গোষ্ঠীর ছোঁড়া ভুল প্রজেক্টাইলও দায়ী হতে পারে বলে উল্লেখ করা হয়েছে।
নরওয়েজিয়ান রিফিউজি কাউন্সিলের প্রধান জান এগেল্যান্ড সম্প্রতি গাজা সফর শেষে সাংবাদিকদের বলেন, "পুরো এলাকা যেন ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়েছে। প্রত্যেকটি ভবনই ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে, আর বেশিরভাগ এলাকাই দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পরবর্তী স্তালিনগ্রাদের মতো ধ্বংসপ্রাপ্ত দেখাচ্ছে। এ এক অবর্ণনীয় মানবিক বিপর্যয়, যেখানে প্রধানত নারী ও শিশুরাই সবচেয়ে বেশি ভুক্তভোগী।"
গাজায় হামাস-নিয়ন্ত্রিত স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী, গত ১৩ মাসে মৃত্যু সংখ্যা ৪৩ হাজার ৩০০ ছাড়িয়েছে। জাতিসংঘ এই তথ্যকে বিশ্বাসযোগ্য মনে করছে। এছাড়া, ধারণা করা হচ্ছে, বোমা বর্ষণে ধ্বংসস্তূপের নিচে আরও অনেক মৃতদেহ রয়ে গেছে।
প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে, আন্তর্জাতিক আইনের 'অভূতপূর্ব' লঙ্ঘন ঘটেছে, যা যুদ্ধাপরাধসহ সম্ভাব্য নৃশংস অপরাধের ইঙ্গিত দেয়।
ইসরায়েল দাবি করেছে যে তারা হামাসকে লক্ষ্যবস্তু করে এবং বেসামরিকদের ক্ষতি এড়াতে নির্দিষ্ট লক্ষ্য নির্ধারণ করে হামলা চালায়, তাদের আক্রমণ আন্তর্জাতিক আইনের অধীনেই পরিচালিত হয়। তবে জাতিসংঘের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ইসরায়েলি আক্রমণের ফলে প্রচুর বেসামরিক স্থাপনা ধ্বংস এবং অনেক মানুষ আহত, গৃহহীন এবং খাদ্য, পানি ও স্বাস্থ্যসেবার সঙ্কটে ভুগছে।
প্রতিবেদনে আরও জানানো হয়েছে, ২০২৩ সালের নভেম্বর থেকে ২০২৪ সালের এপ্রিল পর্যন্ত গাজায় প্রায় ৮ হাজার ১১৯ জন নিহত হয়েছেন। এর মধ্যে ৪৪ শতাংশ শিশু এবং ২৬ শতাংশ নারী। নিহত শিশুদের মধ্যে পাঁচ থেকে নয় বছর বয়সিদের সংখ্যা উল্লেখযোগ্য। এছাড়া, প্রায় ৮০ শতাংশ মানুষ আবাসিক ভবন বা বাসস্থান সংলগ্ন এলাকায় নিহত হয়েছেন বলে সংস্থাটি জানিয়েছে।
জাতিসংঘের মানবাধিকার প্রধান ভলকার টার্ক এক বিবৃতিতে বলেন, "বেসামরিক মানুষের ওপর এ ধরনের হামলা আন্তর্জাতিক মানবিক আইনের মৌলিক নীতির ব্যর্থতার প্রতিফলন।"
উল্লেখ্য, ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর হামাসের আক্রমণে ইসরায়েলে প্রায় ১ হাজার ২০০ জন নিহত হন এবং হামাস তাদের মধ্যে ২৫১ জনকে জিম্মি হিসেবে গাজায় নিয়ে যায়। এরপর ইসরায়েল গাজায় হামাসের বিরুদ্ধে বড় ধরনের সামরিক অভিযান শুরু করে, যা এখনো চলমান।