অস্ট্রেলিয়ায় ১৬ বছরের কম বয়সিরা সোশ্যাল মিডিয়া ব্যবহার করতে পারবে না, আইন পাশ
১৬ বছরের কম বয়সি শিশুদের সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ব্যবহারে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে একটি নতুন আইন পাশ করেছে অস্ট্রেলিয়া।
বৃহস্পতিবার (২৮ নভেম্বর) পাশ করা এ আইন দেশটিতে ব্যাপক বিতর্ক সৃষ্টি করেছে। এটি বিশ্বের কঠোরতম প্রযুক্তি নিয়ন্ত্রণ আইনগুলোর একটি হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে।
এ আইনের অধীনে ইনস্টাগ্রাম, ফেসবুক ও টিকটকে যেন শিশুরা প্রবেশ করতে না পারে, তা নিশ্চিত করতে হবে এ প্রযুক্তি কোম্পানিগুলোকে। অন্যথায়, কোম্পানিগুলোকে ৪৯.৫ মিলিয়ন অস্ট্রেলিয়ান ডলার (৩২ মিলিয়ন মার্কিন ডলার) পর্যন্ত জরিমানা গুনতে হবে।
জানুয়ারিতে পরীক্ষামূলকভাবে আইনটি কার্যকর করা শুরু করবে অস্ট্রেলিয়া। এক বছরের মধ্যে এটি পুরোপুরি বাস্তবায়ন করতে চায় দেশটি।
এ আইনটি অস্ট্রেলিয়াকে অন্যান্য দেশের জন্য উদাহরণ হিসেবে দাঁড় করিয়েছে। বিশ্বের বিভিন্ন দেশই বর্তমানে তাদের তরুণদের মানসিক স্বাস্থ্যের ক্ষতি নিয়ে উদ্বিগ্ন।
ফ্রান্স এবং যুক্তরাষ্ট্রের কিছু অঙ্গরাজ্যে অভিভাবকের অনুমতি ছাড়া নাবালকদের সোশ্যাল মিডিয়ায় প্রবেশাধিকার সীমিত করা হলেও, অস্ট্রেলিয়া আইনটির মাধ্যমে নিষেধাজ্ঞা আরও কঠোর করল।
এ আইনটি প্রধানমন্ত্রী অ্যান্থনি আলবানিজের জন্য একটি বড় রাজনৈতিক সাফল্য হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে, যা তাকে ২০২৫ সালের নির্বাচনের আগে শক্তিশালী অবস্থানে রাখবে।
তবে, গোপনীয়তা এবং শিশু অধিকার বিষয়ক সংগঠনগুলো আইনটির সমালোচনা করেছে। যদিও এক জরিপে ৭৭ শতাংশ অস্ট্রেলীয় এ আইনকে সমর্থন করেছেন।
২০২৪ সালের একটি সংসদীয় তদন্তে সোশ্যাল মিডিয়া বুলিংয়ের কারণে আত্মক্ষতির শিকার শিশুদের অভিভাবকদের সাক্ষ্য শোনার পর এ ধরনের নিষেধাজ্ঞার পক্ষে সমর্থন আরও বেড়ে যায়।
দেশটির সংবাদমাধ্যমগুলোও আইনটিকে সমর্থন জানিয়েছে। বিশেষ করে রুপার্ট মারডকের নিউজ কর্পোরেশন আইনটির পক্ষে 'তাদের শিশু থাকতে দাও' শিরোনামে একটি প্রচারণা চালিয়েছে।
তবে, এ নিষেধাজ্ঞা যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে অস্ট্রেলিয়ার সম্পর্কের ওপর চাপ সৃষ্টি করতে পারে।
যুক্তরাষ্ট্রের সদ্য-নির্বাচিত ট্রাম্প প্রশাসনের অন্যতম প্রভাবশালী চরিত্র ও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্সের মালিক ইলন মাস্ক বলেছেন, এটি 'সমস্ত অস্ট্রেলিয়ানদের জন্য ইন্টারনেট নিয়ন্ত্রণের গোপন একটি উপায়' হতে পারে।
এ আইনটি প্রযুক্তি কোম্পানিগুলোর সঙ্গে অস্ট্রেলিয়ার বিদ্যমান উত্তেজনা আরও বাড়াতে পারে। এর আগে অস্ট্রেলিয়া সোশ্যাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্মগুলোকে সংবাদ প্রচারের জন্য মিডিয়া আউটলেটগুলোকে অর্থ দেওয়ার নিয়ম চালু করেছিল। এখন তারা স্ক্যাম ঠেকাতে ব্যর্থ হলে জরিমানা করার পরিকল্পনা করছে সরকার।
মেটা, টিকটক এবং এক্সের প্রতিনিধিরা এ আইন বিষয়ে কোনো মন্তব্য করেনি। তবে, ইউটিউব পরিচালনাকারী গুগল দাবি করেছে, বয়ঃসীমা যাচাইয়ের কার্যকর পদ্ধতি না হওয়া পর্যন্ত আইনটি স্থগিত রাখা উচিত।
বিদ্যালয়গুলোতে শিক্ষাকার্যক্রমের অংশ হিসেবে ইউটিউব ব্যবহার হওয়ায় এটিকে আইনে ছাড় দেওয়া হয়েছে।
ডিজিটাল ইন্ডাস্ট্রি গ্রুপের ম্যানেজিং ডিরেক্টর সুনিতা বোস বলেন, 'এটি ঘোড়ার আগে গাড়ি রাখার মতো হয়েছে।' তিনি আরও জানান, আইন থাকলেও কীভাবে এটি কার্যকর হবে, সে বিষয়ে সরকারের কোনো স্পষ্ট নির্দেশনা নেই।