ভারতের আসামে প্রকাশ্যে গরুর মাংস খাওয়া নিষিদ্ধ ঘোষণা
ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় রাজ্য আসামে জনসম্মুখে গরুর মাংস খাওয়া নিষিদ্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। যার অংশ হিসেবে হিসেবে রেস্তোরাঁ, হোটেল ও সামাজিক অনুষ্ঠানসহ সবকিছুই অন্তর্ভুক্ত। খবর বিবিসির।
আসামের মুখ্যমন্ত্রী হিমন্ত বিশ্ব শর্মা গতকাল (বুধবার) এমন সিদ্ধান্তের কথা জানিয়েছেন। এর আগেই অবশ্য রাজ্যটির মন্দিরসহ সুনির্দিষ্ট ধর্মীয় স্থানগুলোর আশেপাশে গরুর মাংসের বিক্রি নিষিদ্ধ ঘোষণা করা হয়েছিল।
ভারতে খাবার হিসেবে গরুর মাংসের বিষয়টি বেশ সংবেদনশীল ইস্যু। কেননা দেশটির জনসংখ্যার শতকরা ৮০ ভাগ হিন্দু অধ্যুষিত; যারা কি-না গরুকে পবিত্র হিসেবে গণ্য করে থাকেন।
বর্তমানে কেন্দ্রের মতো আসাম রাজ্যেও ক্ষমতায় রয়েছে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির বিজেপি সরকার। সেক্ষেত্রে এমন সব নিষেধাজ্ঞা থাকলেও অন্যসব জায়গা থেকে গরুর মাংস কিনতে কিংবা ঘরোয়া পরিবেশে এই মাংস খেতে রাজ্যটিতে বাধা নেই।
রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী হেমন্ত বিশ্ব শর্মা বলেছেন, "আমরা এর আগে (২০২১ সালে রাজ্য বিধানসভায়) আসামে গরু রক্ষার জন্য একটি বিল উত্থাপন করেছি এবং আমরা সফল হয়েছি।"
তিনি আরও বলেন, "এখন আমরা সিদ্ধান্ত নিয়েছি যে, রাজ্যের কোনও হোটেল বা রেস্তোরাঁয় গরুর মাংস পরিবেশন করা হবে না। এমনকি কোনও পাবলিক অনুষ্ঠানে বা কোনও পাবলিক প্লেসেও পরিবেশন করা যাবে না।"
হিন্দু, জৈন এবং শিখ সংখ্যাগরিষ্ঠ এবং মন্দির বা সাতরা (বৈষ্ণব মঠ) এর পাঁচ কিলোমিটারের মধ্যে গবাদি পশু জবাই এবং গরুর মাংস বিক্রি নিষিদ্ধ করে ২০২১ সালের আসাম গবাদি পশু সংরক্ষণ আইন পাস করা হয়। মুখ্যমন্ত্রী বলেন, "আগে আইনে মন্দিরের ৫ কিলোমিটারের কথা বলা থাকলেও এখন সেটা অন্যান্য এলাকায় বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছি আমরা।"
আসাম গবাদি পশু সংরক্ষণ বিলটি বিরোধী দলের ওয়াকআউটের পরও আসাম বিধানসভায় ২০২১ সালের আগস্টে কণ্ঠভোটের মাধ্যমে পাস করা হয়েছিল। আইন লঙ্ঘন করলে তিন থেকে আট বছরের কারাদণ্ড এবং ৩ লাখ থেকে ৫ লাখ রুপি পর্যন্ত জরিমানার বিধান রয়েছে।
ভারতের ২৮টি রাজ্যের এক-তৃতীয়াংশে গরু জবাই ও প্রাণীটির মাংস খাওয়া আংশিক বা সম্পূর্ণভাবে নিষিদ্ধ। যদিও এইসব রাজ্যগুলিতে মহিষের মাংস খেতে বাধা নেই।
ভারতের বহু অংশে নানা হিন্দুত্ববাদী গোষ্ঠীগুলিকে সহিংসতার মাধ্যমে গরুর মাংস খাওয়ার বিষয়ে নিষেধাজ্ঞা কার্যকর করেছে বলে অভিযোগ রয়েছে। এমনকি প্রায়ই মুসলিম মাংস বিক্রেতা, গবাদি পশু ব্যবসায়ী এবং দলিত সম্প্রদায়ের উপর মারাত্মক আক্রমণ চালানোর কথা শোনা যায়।
শর্মা জানান, প্রচলিত আইনের মধ্যে জনসম্মুখে গরুর মাংস খাওয়ার ওপর নিষেধাজ্ঞার বিষয়টি অন্তর্ভুক্ত করা হবে। তবে ভারতের প্রধান বিরোধী দল কংগ্রেস দাবি, মুসলিম অধ্যুষিত সমাগুড়ি আসনে একটি উপনির্বাচনে জেতার জন্য মুখ্যমন্ত্রী শর্মা ভোটারদের গরুর মাংস সরবরাহ করেছেন।
কংগ্রেসের আইন প্রণেতা রকিবুল হোসেন বলেন, "ভোটারদের গরুর মাংস দিয়ে মুখ্যমন্ত্রী তার দলের হিন্দু জাতীয়তাবাদী আদর্শের সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতা করেছেন।"
বিজেপি অবশ্য এই অভিযোগ অস্বীকার করেছে। শর্মা গতকাল (বুধবার) পাল্টা প্রতিক্রিয়ায় বলেছেন, "কংগ্রেস চাইলে আমি রাজ্যে পুরোপুরি গরুর মাংস নিষিদ্ধ করতে প্রস্তুত।"
এদিকে রাজ্যের অন্য রাজনৈতিক দলগুলো বিজেপি সরকারের নিষেধাজ্ঞার সমালোচনা করেছেন। এর মাধ্যমে মানুষের খাবারের ক্ষেত্রে যে স্বাধীনতা রয়েছে সেটি ভঙ্গ করা হয়েছে বলে দলগুলো মনে করেন।
আসামের বিধানসভার বিরোধী দল অল ইন্ডিয়া ডেমোক্রেটিক ফ্রন্ট (এআইইউডিএফ) প্রস্তাবিত এই নিষেধাজ্ঞার বিরোধিতা করে বিবৃতি দিয়েছে। এতে বলা হয়েছে, "বিজেপি দলীয় রাজ্য সরকার রাজ্যের উন্নতির বিষয়ক যে-সব প্রতিশ্রুতি বিধানসভা নির্বাচনের আগে দিয়েছিল, সেসব পূরণে শোচনীয়ভাবে ব্যর্থ হয়েছে। সেসব ব্যর্থতা ঢাকার জন্য তারা তাদের পুরোনো সাম্প্রদায়িকতা ও বিভেদের খেলা শুরু করেছে।"
অল ইন্ডিয়া ইউনাইটেড ডেমোক্রেটিক ফ্রন্টের সদস্য হাফিজ রফিকুল ইসলাম বলেন, "তারা যদি গোয়া কিংবা অন্যান্য উত্তর-পূর্বের রাজ্যে গরুর মাংস নিষিদ্ধ করতে না পারে, তাহলে আসামে কেন?"
গোয়া কিংবা অন্ধপ্রদেশের মতো রাজ্যগুলোতে গরুর মাংস বিক্রি কিংবা খাওয়া আইনত বৈধ। যদিও এসব অঞ্চলে ক্ষমতায় বিজেপি রয়েছে।
অনুবাদ: মোঃ রাফিজ খান