খরচ বাঁচাতে যুক্তরাজ্যে কেনাকাটায় বাড়ছে নগদ টাকার ব্যবহার, ২০% লেনদেন নোট ও কয়েনে
এক দশক কমার পর এ নিয়ে টানা দুই বছর যুক্তরাজ্যের দোকানে নগদ লেনদেনের ব্যবহার বেড়েছে বলে জানিয়েছে খুচরা বিক্রেতারা।
ব্রিটিশ রিটেইল কনসোর্টিয়াম (বিআরসি) জানিয়েছে, গত বছর মোট মোট লেনদেনের এক-পঞ্চমাংশ, অর্থাৎ ২০ শতাংশ করা হয়েছে নোট ও কয়েন দিয়ে। ক্রেতারা জানিয়েছেন, নগদ টাকায় কেনাকাটা করলে তাদের বাজেট সাশ্রয় করে ভালোমতো খরচ করা যায়।
বিআরসি আরও জানিয়েছে, গত বছর প্রতি কেনাকাটায় গড় খরচ ২২.৪৩ থেকে সামান্য কমে থেকে ২২.০৩ পাউন্ড হয়েছে।
দাতব্য সংস্থাগুলো পার্লামেন্ট সদস্যদের একটি কমিটিকে জানিয়েছিল, নগদ টাকা নেওয়া বন্ধ করে দেওয়ায় বেশ কিছু প্রয়োজনীয় সেবা ও কমিউনিটি ভেন্যু ব্যবহার থেকে বঞ্চিত হচ্ছে অনেক গ্রুপ। তারা এ কথা জানানোর পরই নগদ লেনদেনের এই তথ্য প্রকাশ করা হলো।
দাতব্য সংস্থাগুলো বিশেষ করে বলেছে, নিপীড়নমূলক সম্পর্কে থাকা নারীদের জন্য নগদ অর্থ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। কেননা অনেক ক্ষেত্রে ওই নারীদের সঙ্গীরা ব্যাংক অ্যাকাউন্ট ব্যবহার করে তাদের ওপর নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠার করে বা তাদের গতিবিধি শনাক্ত করে।
সারভাইভিং ইকোনমিক অ্যাবিউজ নামক সংস্থার পলিসি ম্যানেজার ডেইড্রে কার্টরাইট বিবিসিকে বলেন, অনেক সময় নগদ টাকা নারীদের জন্য নির্যাতনকারীর কাছ থেকে পালানোর একটি উপায়। বিশেষ করে নির্যাতনকারী যখন ব্যাংক অ্যাকাউন্টের লেনদেনের মাধ্যমে ওই নারীদের ট্র্যাক করতে পারে।
অনেক বয়স্ক এবং মানসিক স্বাস্থ্য সমস্যায় ভোগা মানুষও নগদ টাকা ব্যবহার করতে বেশি স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করেন। অনেকেরই শুধু কার্ড, কম্পিউটার বা ফোন ব্যবহারের জন্য প্রয়োজনীয় ডিজিটাল দক্ষতা বা মানসিক সামর্থ্য নেই।
দাতব্য সংস্থাগুলো জানিয়েছে, বিভিন্ন সেবা ও ভেন্যুতে ব্যাপকভাবে নগদ টাকার ব্যবহার বন্ধ করার প্রবণতা দেখা যাচ্ছে।
মেনক্যাপ কিমরু-এর পরিচালক ওয়েন ক্রোকার বলেন, কোনো ক্যাফে যদি নগদ টাকা নেওয়া বন্ধ করে দেয়, তাহলে বিকল্প ক্যাফেতে যাওয়ার সুযোগ থাকতে পারে। কিন্তু যদি কোনো শহরের একমাত্র থিয়েটার বা বিশ্ববিদ্যালয়ভিত্তিক ভেন্যু নগদ টাকা নেওয়া বন্ধ করে দেয়, তাহলে প্রবীণ বা প্রতিবন্ধীদের মতো অনেক মানুষই আর সেখানে যেতে পারবে না।
পেমেন্ট চয়েস অ্যালায়েন্সের প্রতিনিধি রন ডেলনেভো বলেন, বিনোদন কেন্দ্র, পার্কিং সেবা ও গণপরিবহনে খাবার সরবরাহসহ অনেক সেবায় সম্ভবত আর নগদ টাকা নেওয়া হয় না।
তিনি বলেন, নগদ টাকা না নেওয়ায় প্রতিবন্ধী মানুষের পরিবারগুলো থেকে অনেক হৃদয়বিদারক ঘটনা শুনেছি আমরা।
তবে বড় খুচরা বিক্রেতারা তাদের দোকানে নগদ টাকা গ্রহণে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ বলে জানিয়েছে বিআরসি।
ব্যাংকিং বাণিজ্য সংস্থা ইউকে ফিন্যান্সের তথ্যানুসারে, তরুণ প্রজন্মের বেশিরভাগ মানুষ স্মার্টফোন বা স্মার্টওয়াচ ব্যবহার করে লেনদেন করেন। প্রায় ৭২ শতাংশ ১৮ থেকে ২৪ বছর বয়সি মানুষ এ ধরনের পদ্ধতিতে নিয়মিত পেমেন্ট করেন।
তবে জীবনযাত্রার ব্যয় বেড়ে যাওয়ায় নিত্যদিনের খরচের নগদ টাকা ব্যবহারকারীর সংখ্যা চার বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ পর্যায়ে পৌঁছেছে বলেও জানিয়েছে ইউকে ফিন্যান্স ও বিআরসি।
বিআরসি-র পেমেন্ট পলিসি উপদেষ্টা ক্রিস ওয়েন বলেন, স্থায়ী মূল্যস্ফীতি ও ব্যয়বহুল জীবনযাত্রার চাপ ব্রিটেনজুড়ে পরিবারগুলোর ওপর প্রভাব ফেলেছে। অনেক ভোক্তা এখন সংসার খরচ আরও সাশ্রয়ী করতে নগদ টাকা ব্যবহার করছেন।
কার্ড কোম্পানিগুলোর ফি নেওয়া যেন আরও অর্থবহ হয়, সেজন্য ব্যবস্থা নিতে নিয়ন্ত্রক সংস্থাগুলোর প্রতি আহ্বান জানিয়েছে বাণিজ্য সংস্থাগুলো।
ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীরাও ব্যাংকগুলোর শাখা খোলা রাখতে অথবা নগদ অর্থ জমা করার পর্যাপ্ত সুবিধা নিশ্চিতের দাবি জানিয়েছেন।
তথ্য বলছে, যুক্তরাজ্যে মূল্য পরিশোধে ডেবিট কার্ডের পরই দ্বিতীয় জনপ্রিয় মাধ্যম হচ্ছে নগদ টাকা।