দৈত্যাকার সাইবর্গ তেলাপোকা হতে পারে ভবিষ্যতের অনুসন্ধান ও উদ্ধারকর্মী
অস্ট্রেলিয়ার কুইন্সল্যান্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ল্যাচলান ফিটজেরাল্ড জীবিত পোকা দিয়ে এমন এক বায়োহাইব্রিড রোবট তৈরি করেছেন, যেটির গতিবিধি প্রযুক্তি তথা যন্ত্রের সাহায্যে নিয়ন্ত্রণ করা যায়। তিনি আশা করছেন, ভবিষ্যতে এ রোবট অনুসন্ধান ও উদ্ধারকাজকে আরও সহজ করবে।
এ রোবট তৈরির জন্য ফিটজেরাল্ড একটি গুবরে পোকার পিঠে ক্ষুদ্র একটি সার্কিট বোর্ড স্থাপন করেন। যা দেখতে অনেকটাই ব্যাকপ্যাকের মতো। এ সার্কিট বোর্ডের সাহায্যে তিনি বৈদ্যুতিক সিগন্যাল পাঠিয়ে পোকাটির গতিবিধি নিয়ন্ত্রণে সক্ষম হন।
তবে শুধু গুবরে পোকাই নয়, গর্তে বাস করা বড় আকারের তেলাপোকার ওপরও এ পরীক্ষা চালিয়েছেন তিনি। অস্ট্রেলিয়ার এ তেলাপোকাগুলো আকারে তিন ইঞ্চি (৮ সেন্টিমিটার) পর্যন্ত লম্বা হয়ে থাকে।
ফিটজেরাল্ড বলেন, যখন এটি কাঙ্ক্ষিত পথ ছেড়ে অন্য পথে চলতে নেয়, তখন আমরা ওই সার্কিট বোর্ডের সাহায্যে প্রাণীগুলোর অ্যান্টেনায় বৈদ্যুতিক সিগন্যাল পাঠিয়ে এটিকে থামিয়ে দেই এবং নির্দিষ্ট দিকে চলতে নির্দেশ করি।
এই রোবটিক্স বিশেষজ্ঞের আশা- এভাবে তিনি একটি দল বা বাহিনী গঠন করবেন এবং এর সাহায্যে কর্মীদের উদ্ধার করবেন।
ফিটজেরাল্ড ব্যাখ্যা করেন, অনেক সময় ভূমিকম্পের মতো দুর্যোগ বা বোমা হামলার মতো দুর্ঘটনার কারণে অনেকেই ধ্বংসস্তূপের নিচে চাপা বা আটকা পড়েন। যেখানে তাদের উদ্ধারের জন্য মানুষের পৌঁছানো সম্ভব হয় না। সেসব জায়গায় অনুসন্ধান ও তথ্য সংগ্রহের জন্য এসব জীবিত রোবট সহায়ক হতে পারে।
উল্লেখ্য, কম্পিউটার প্রযুক্তির সাহায্যে জীবিত যে পোকার গতিবিধি নিয়ন্ত্রণ করা যায়, সেটিকে সাইবর্গ ইনসেক্ট বলা হয়।
ফিটজেরাল্ড জানান, কৃত্রিম রোবটগুলোর চেয়ে জীবন্ত ও আংশিক যন্ত্রচালিত জীবন্ত গুবরে পোকা বা তেলাপোকার সুবিধা অনেক বেশি। এগুলো অনেক বেশি অভিযোজনে সক্ষম। কিন্তু কৃত্রিম রোবটিগুলোকে অনেক হিসাব-নিকাশ করতে হয়, যাতে তারা বাস্তব দুনিয়ায় নানা পরিস্থিতি মোকাবিলা করতে পারে।
এসব পোকা দুর্যোগ পরিস্থিতিতে সাহায্য করতে পারে বলে মনে করেন ফিটজেরাল্ড। যেমন, দুর্ঘটনায় চাপা পড়া বা আটকে পড়া মানুষদের অবস্থান চিহ্নিত করা এবং যারা জীবিত রয়েছেন তাদের কাছে উদ্ধারকর্মী পৌঁছানোর আগেই জীবন রক্ষাকারী ওষুধ পৌঁছে দেওয়া।
তবে কাজটিতে পুরোপুরি সফল হতে হলে সর্বপ্রথম গবেষকদের অবশ্যই এসব পোকামাকড়ের গতিবিধি নিয়ন্ত্রণ করার ক্ষমতা অর্জন করতে হবে।
ফিটজেরাল্ড বলেন, যদিও কাজটি পুরোপুরি সফল হতে এখনও অনেক সময় লাগবে। তবে কয়েক বছরের মধ্যে আংশিক যন্ত্রচালিত পোকাগুলো মানুষের জীবন বাঁচানোর কাজে ব্যবহার করা সম্ভব হবে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
ফিটজেরাল্ডই একমাত্র রোবটিক্স বিশেষজ্ঞ নন, যিনি জীবন্ত প্রাণী থেকে রোবট তৈরি করছেন। ক্যালিফোর্নিয়া ইনস্টিটিউট অব টেকনোলজির (ক্যালটেক) একাডেমিকরা জেলিফিশের মধ্যে ইলেকট্রনিক পেসমেকার লাগিয়ে পরীক্ষা চালাচ্ছেন, যাতে এগুলোর সাঁতারের গতি নিয়ন্ত্রণ করা যায়। তারা আশা করছেন, এভাবে জেলিফিশগুলো ব্যবহার করে তারা সমুদ্রের গভীর থেকে বিভিন্ন তথ্য সংগ্রহ করতে পারবেন।
গত সেপ্টেম্বরে কর্নেল ইউনিভার্সিটির গবেষকরা একটি কিং অয়েস্টার মাশরুম দ্বারা নিয়ন্ত্রিত রোবট চালু করেছেন। এ রোবট পরিবেশকে বুঝতে পারে এবং সে অনুযায়ী প্রতিক্রিয়া জানাতে পারে। এগুলো ফসলি জমির মাটির অবস্থা নির্ণয়ে ব্যবহার করা যেতে পারে যে কখন আরও সার প্রয়োগ করতে হবে।
অনুবাদ: রেদওয়ানুল হক