অভিশংসন থেকে বেঁচে গেলেন দ. কোরিয়ার প্রেসিডেন্ট ইউন
দক্ষিণ কোরিয়ার বিরোধী দলের আইনপ্রণেতারা দেশটির প্রেসিডেন্ট ইউন সুক ইওলের বিরুদ্ধে আনীত অভিশংসনের প্রস্তাবটিতে দরকারি সংখ্যাগরিষ্ঠতা পাননি। পার্লামেন্টের ভোটাভুটিতে দুই-তৃতীয়াংশ বা ২০০ এমপির সমর্থন না পাওয়ায়– এই উদ্যোগ ব্যর্থ হয়েছে। ফলে এই যাত্রা ইউনের গদি রক্ষা হয়েছে।
আজ শনিবার (৭ ডিসেম্বর) ইউনের অভিশংসনের প্রস্তাবে ভোটাভুটি শুরু হওয়ার আগে– ক্ষমতাসীন পিপল পাওয়ার পার্টির এমপিরা জাতীয় আইনসভা বা পার্লামেন্টে অধিবেশন কক্ষ থেকে বের হয়ে আসেন। তাঁরা অংশগ্রহণ না করায় ইউনকে অভিসংশন করার প্রস্তাবটি পাশ হওয়ার মতো প্রয়োজনীয় সমর্থন বা ভোট পাবে না বলে আগেই ধারণা করা হয়েছিল।
৩০০ আসনের দক্ষিণ কোরিয়ার পার্লামেন্ট। এরমধ্যে দুই-তৃতীয়াংশ আইনপ্রণেতা (২০০ এমপি) পক্ষে ভোট দিলে প্রেসিডেন্টের অভিশংসন করা যাবে। বর্তমানে পার্লামেন্টের ১৯২টি আসন রয়েছে বিরোধী ডেমোক্রেটিক পার্টি এবং কয়েকটি ছোট দলের।
এর আগে জানা গিয়েছিল, ইউনের দলের অনেকেও সামরিক আইন জারির জন্য তাঁর ওপর ক্ষুদ্ধ। এরাও তাঁর বিরুদ্ধে ভোট দিলে অভিশংসনের প্রস্তাবটি পাশ হয়ে যাবে। কিন্তু, সরকারি দলের ভোটাভুটি বয়কটের ঘটনায় সেই আশাও তিরোহিত হয়।
বিরোধী দলের আইনপ্রণেতারা অবশ্য সরকারি দলের এমপিদের পার্লামেন্টে ফিরে এসে ভোটাভুটিতে অংশ নেওয়ার আহ্বান জানান, কিন্তু তাতে ইউনের প্রতি নাখোশ এমন কোনো এমপি সাড়া দেননি।
প্রসঙ্গত, গত মঙ্গলবার স্থানীয় সময় রাত ১০টা ২৩ মিনিটে হঠাৎ করেই সামরিক আইন জারির ঘোষণা দেন দক্ষিণ কোরিয়ার প্রেসিডেন্ট ইউন সুক-ইওল। সামরিক আইন জারির প্রতিবাদে সেদিন মধ্যরাতে সৈনিকদের বাধা উপেক্ষা করেই পার্লামেন্টে সমবেত হন আইনপ্রণেতারা। তাঁরা প্রেসিডেন্টের জারি করা ডিক্রিকে ভোটাভুটির মাধ্যমে বাতিল করে দেন। ছয় ঘণ্টা পরে যা মেনেও নেন ইউন।
এরপর থেকেই দেশটিতে প্রেসিডেন্টের পদত্যাগ ও অভিশংসনের দাবিতে ব্যাপক বিক্ষোভ কর্মসূচি পালিত হচ্ছে।
সামরিক আইন জারি করায় ইউনের প্রতি ক্ষুদ্ধ হয়েছিলেন, ক্ষমতাসীন পিপল পাওয়ার পার্টির এমন একজন এমপি চো কিয়ুং-তায়ে, তিনি অভিশংসন প্রস্তাবে ভোট না দেওয়ার কারণ ব্যাখ্যা করে জানান, মার্শাল ল' জারির জন্য প্রেসিডেন্ট আজ শনিবার সকালে ক্ষমাপ্রার্থণা করেছেন। ঘটনার পর তিনদিন ধরে তিনি জনসম্মুখে আসেননি। কিন্তু আজ এসে ক্ষমা চেয়েছেন।
তিনি বলেন, 'প্রেসিডেন্টের ক্ষমাপ্রার্থনা এবং মেয়াদ শেষের আগেই আগাম পদত্যাগের ইচ্ছাপ্রকাশ এবং সব রাজনৈতিক দলের প্রতি তাঁর আহ্বান – আমার সিদ্ধান্তকে প্রভাবিত করেছে।'
চো বলেন, ইউনের অভিশংসন প্রস্তাবটি পাশ হলে– পরবর্তী প্রেসিডেন্ট হতেন বিরোধী ডেমোক্রেটিক পার্টি অব কোরিয়া (ডিপিকে) নেতা লি জায়ে-মিয়ুং। তবে এই দল ক্ষমতায় থাকার সময় বেশকিছু বিতর্কিত কাজ করেছে, যার তুলনায় প্রেসিডেন্ট ইউনের ভুলটাই বড় নয় বলে তিনি দাবি করেন।
এদিকে ডিপিকের একজন নারী আইনপ্রণেতা লি উনজো তাঁর প্রতিক্রিয়া জানিয়ে বিবিসিকে বলেন, পিপিপি'র এমপিরা পার্লামেন্টের অধিবেশন কক্ষ ত্যাগ করার সময় তিনি চিৎকার করে কান্নায় ভেঙে পড়েছিলেন। তিনি বলেন, 'তাঁরা ভোটাভুটি বয়কট করতে পারেন, সেটা আমরা জানতাম; কিন্তু, সত্যিই যে তাঁরা সেটা করে দেখাবেন– তা ভাবতেও পারিনি। হাজার হাজার নাগরিক পার্লামেন্টের বাইরে তাঁরা কী সিদ্ধান্ত নেন– সেদিকে তাকিয়ে ছিলেন।'
শনিবারের ভোটাভুটিতে হেরে গেলেও লি উনজো জানান, ইউনকে অভিশংসন করার চেষ্টায় হাল ছাড়বে না ডিপিকে। কারণ তিনি দক্ষিণ কোরিয়ার জন্য সবচেয়ে 'গুরুতর হুমকি' হয়ে উঠেছেন।
রাজধানী সিওলে পার্লামেন্টের বাইরে সমবেত জনতার উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, আসন্ন বড়দিন অথবা এবছর শেষ হওয়ার আগেই আমরা দেশকে স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরিয়ে আনব।