নিজেদের পারমাণবিক স্থাপনার তথ্য বিনিময় করল ভারত ও পাকিস্তান
তিন দশকের বেশি সময় ধরে চলে আসা চুক্তি অনুসরণ করে গত ১ জানুয়ারি নিজেদের পারমাণবিক স্থাপনাগুলোর তালিকা বিনিময় করেছে ভারত ও পাকিস্তান। পরমাণু স্থাপনাগুলোর ওপর আক্রমণ নিষিদ্ধ করার লক্ষ্যে ১৯৮৮ সালে দুই দেশের মধ্যে এই চুক্তি স্বাক্ষরিত হয় এবং ১৯৯১ সালে তা অনুমোদিত হয়। ১৯৯২ সালের ১ জানুয়ারি থেকে তালিকা বিনিময় শুরু হওয়ার পর থেকে এটি ছিল ৩৪তম বার্ষিক তালিকা বিনিময়।
ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, "ভারত ও পাকিস্তান আজ একযোগে নিউ দিল্লি ও ইসলামাবাদে পরমাণু স্থাপনাগুলোর তালিকা বিনিময় করেছে, যা পরমাণু স্থাপনাগুলোর ওপর আক্রমণ নিষিদ্ধ করার চুক্তির আওতায় রয়েছে।"
স্টকহোম ইন্টারন্যাশনাল পিস রিসার্চ ইনস্টিটিউট (এসআইপিআরআই) ২০২৪ সালে ভারত ও পাকিস্তানের পরমাণু অস্ত্রের সংখ্যা যথাক্রমে ১৭২টি ও ১৭০টি বলে অনুমান করেছে। এসআইপিআরআই জুন মাসের প্রতিবেদনে উল্লেখ করেছে, "ভারত, পাকিস্তান এবং উত্তর কোরিয়া ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্রের ওপর একাধিক পারমাণবিক ওয়ারহেড স্থাপন করার ক্ষমতা অর্জন করতে চাচ্ছে; যেটি রাশিয়া, ফ্রান্স, যুক্তরাজ্য, যুক্তরাষ্ট্র এবং সম্প্রতি চীন ইতোমধ্যে অর্জন করেছে।"
আর্মস কন্ট্রোল অ্যান্ড নন-প্রলিফারেশন সেন্টারের (এসিএ) তথ্যমতে, পাকিস্তানের বর্তমানে ছয়টি পারমাণবিক সক্ষম ভূমি-ভিত্তিক ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র সিস্টেম রয়েছে। এর মধ্যে স্বল্প-পাল্লার (১০০০ কিমি এর কম) এবং মধ্যম-পাল্লার (১০০০-৩০০০ কিমি) ক্ষেপণাস্ত্র সিস্টেম অন্তর্ভুক্ত। পাকিস্তান আরও তিনটি মধ্য-পরিসরের ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র উন্নত করার কাজ করছে। এর মধ্যে একটি হলো আবাবিল। এটি স্বাধীন লক্ষ্যভেদে সক্ষম একাধিক রি-এন্ট্রি ভেহিকল (এমআইআরভি) বহন করতে পারে।
এসিএ ২০২৩ সালের আগস্ট মাসের একটি প্রতিবেদনে জানিয়েছিল, "পাকিস্তানের কিছু স্বল-পাল্লার ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র, বিশেষত নতুন নাসর (হাতফ-৯) ভারতীয় লক্ষ্যবস্তুতে আক্রমণ করার জন্য যথেষ্ট নয়। কিছু বিশেষজ্ঞের মতে, নাসর সম্ভবত ভারতীয় সেনাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধে ব্যবহৃত হতে পারে।"
প্রতিবেদন অনুযায়ী, ইসলামাবাদের ভূমি-ভিত্তিক পারমাণবিক বাহিনীগুলো রোড-মোবাইল ডেলিভারি সিস্টেম ব্যবহার করে। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে এসব সিস্টেম ব্যাপকভাবে বিস্তৃত হয়েছে।
পাকিস্তান নিজেদের পারমাণবিক অস্ত্রাগারকে সক্রিয়ভাবে উন্নত করছে। বিশেষজ্ঞরা অনুমান করছেন, ২০২৫ সালের মধ্যে পাকিস্তান বিশ্বের পঞ্চম বৃহত্তম পারমাণবিক অস্ত্রাগার হয়ে উঠবে। এতে দেশটির পারমাণবিক অস্ত্রের সংখ্যা প্রায় ২০০-তে পৌঁছাবে।
ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে দীর্ঘদিন ধরেই উত্তেজনাপূর্ণ সম্পর্ক চলমান। ১৯৪৭ সালে ব্রিটেন থেকে স্বাধীন হওয়ার পর থেকেই এই সম্পর্ক চলমান। কাশ্মীর অঞ্চলটি দুই দেশের মধ্যে বিভক্ত এবং উভয় দেশই এই এলাকা নিজেদের বলে দাবি করে। ভারত বারবার পাকিস্তানকে কাশ্মীরের মুসলিম-প্রধান অঞ্চলে সন্ত্রাসবাদ এবং সশস্ত্র লড়াইয়ের সহায়তা করার অভিযোগে অভিযুক্ত করেছে। আর পাকিস্তান ভারতকে ওই অঞ্চলের মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগে দোষারোপ করেছে।
২০১৯ সাল থেকে দুই দেশের কূটনৈতিক ও অর্থনৈতিক সম্পর্ক আরও খারাপ হয়ে যায়। সেই বছর ভারতের জম্মু ও কাশ্মীরের পুলওয়ামায় পাকিস্তানি সন্ত্রাসী গোষ্ঠীর হামলায় ৪০ জন ভারতীয় সেনা নিহত হয়। এর পর ভারতের পক্ষ থেকে একটি "সার্জিক্যাল স্ট্রাইক" পরিচালিত হয়, যেখানে পাকিস্তানের বালাকোট শহরে সন্ত্রাসী গোষ্ঠীটির বিরুদ্ধে হামলা করা হয়। পরবর্তীতে, পাকিস্তান কাশ্মীরের বিশেষ সাংবিধানিক অধিকার বাতিল করার পর ভারতীয় প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সরকারের সম্পর্ক কমতে থাকে।