দানবীর ও আধ্যাত্মিক নেতা আগা খান মারা গেছেন
![](https://tbsnews.net/bangla/sites/default/files/styles/big_3/public/images/2025/02/05/the_aga_khan.jpg)
বিশ্বখ্যাত দাতব্যকর্মী ও আধ্যাত্মিক নেতা প্রিন্স করিম আগা খান ৮৮ বছর বয়সে মারা গেছেন। তার দাতব্য সংস্থা আগা খান ডেভেলপমেন্ট নেটওয়ার্ক এক বিবৃতিতে জানিয়েছে, বুধবার (৫ ফেব্রুয়ারি) লিসবন, পর্তুগালে পরিবারের সদস্যদের উপস্থিতিতে তিনি শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন। খবর বিবিসির।
১৯৫৭ সালে মাত্র ২০ বছর বয়সে, আগা খান তার দাদা স্যার সুলতান মোহাম্মাদ শাহ আগা খানের কাছ থেকে উত্তরাধিকারী হিসেবে শিয়া ইসমাইলি মুসলিমদের ইমাম নিযুক্ত হন।
বিশ্বব্যাপী ইসমাইলি মুসলিমদের জনসংখ্যা প্রায় ১ কোটি ৫০ লাখ, যার মধ্যে পাকিস্তানে প্রায় ৫ লাখ, পাশাপাশি ভারত, আফগানিস্তান ও আফ্রিকার বিভিন্ন অঞ্চলে উল্লেখযোগ্য সংখ্যক অনুসারী রয়েছে।
আগা খান সুইজারল্যান্ডে জন্মগ্রহণ করেন, তবে তিনি ব্রিটিশ নাগরিকত্ব লাভ করেন এবং ফ্রান্সের এক প্রাসাদে বসবাস করতেন।
রাজা তৃতীয় চার্লস তার মৃত্যুর খবরে শোক প্রকাশ করেছেন। জানা গেছে, আগা খান রাজপরিবারের ঘনিষ্ঠ ছিলেন এবং রাজা ব্যক্তিগতভাবে তার পরিবারের সঙ্গে যোগাযোগ করছেন।
আগা খান সারা বিশ্বে শিক্ষা, স্বাস্থ্য ও সংস্কৃতি সংক্রান্ত বহু উন্নয়নমূলক প্রকল্প পরিচালনা করেছেন। তার প্রতিষ্ঠিত আগা খান ডেভেলপমেন্ট নেটওয়ার্ক বহু দেশে হাসপাতাল ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান পরিচালনা করে।
সংস্থাটি এক বিবৃতিতে জানিয়েছে, 'আমরা তার পরিবারের প্রতি এবং বিশ্বব্যাপী ইসমাইলি সম্প্রদায়ের প্রতি গভীর সমবেদনা জানাই।'
বিবৃতিতে আরও বলা হয়, 'আমরা আমাদের অংশীদারদের সঙ্গে একযোগে কাজ চালিয়ে যাব, আগা খানের ইচ্ছানুযায়ী—ধর্ম ও জাতিগত পার্থক্যের ঊর্ধ্বে থেকে সবার জীবনের মান উন্নত করতে।'
তিনি বিলাসবহুল জীবনযাপন করতেন। বাহামাসে ব্যক্তিগত দ্বীপ, একটি সুপার-ইয়ট ও ব্যক্তিগত জেট ছিল তার সম্পত্তির মধ্যে।
২০০৮ সালে ফোর্বস ম্যাগাজিন অনুযায়ী, তার সম্পদের পরিমাণ ছিল প্রায় ১ বিলিয়ন ডলার (৮০১ মিলিয়ন পাউন্ড) – উত্তরাধিকার সূত্রে প্রাপ্ত সম্পদের সাথে সাথে ঘোড়দৌড় ও অন্যান্য ব্যবসা থেকে তিনি বিপুল আয় অর্জন করেছিলেন।
তার বিখ্যাত ঘোড়া শেরগার ১৯৮১ সালে দ্য ডার্বি ১০ লেন্থ ব্যবধানে জয় লাভ করেছিল। তবে, ১৯৮৩ সালে আয়ারল্যান্ড থেকে শেরগার অপহৃত হয় এবং আর কখনো পাওয়া যায়নি।
২০১১ সালে বিবিসিকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে তিনি বলেন, 'শেরগারের দৌড়ের স্মৃতি কখনো মুছে যাবে না। আমি সেই দৌড়ের ভিডিও বহুবার দেখেছি এবং প্রতিবারই নতুন কিছু শেখার চেষ্টা করেছি।'
তিনি আরও বলেন, 'এপসম ডার্বি সবসময়ই মর্যাদাপূর্ণ প্রতিযোগিতা, কিন্তু শেরগারের দৌড়ের ধরন ছিল অসাধারণ। ট্যাটেনহ্যাম কর্নার ঘুরে ঘোড়াটি যেন সহজে এগিয়ে যাচ্ছিল এবং শেষ পর্যন্ত দূরত্ব বাড়িয়ে চলেছিল, তা দেখে আমি সত্যিই বিস্মিত হয়ে গিয়েছিলাম।'
শেরগারের অতুলনীয় সাফল্যের পর, তিনি আরও চারবার ডার্বি জয় লাভ করেন – শাহরাস্তানি (১৯৮৬), কাহিয়াসি (১৯৮৬), সিন্দার (২০০০) ও হারজান্ড (২০১৬)। তার অন্যান্য উল্লেখযোগ্য সাফল্যের মধ্যে রয়েছে ২০০৮ সালে অপরাজিত ঘোড়া জারকাভার সঙ্গে প্রি দ্য আর্ক দে ত্রিওম্ফ শিরোপার জয়।
আগা খান ফাউন্ডেশনসহ বিভিন্ন দাতব্য সংস্থার প্রতিষ্ঠাতা হিসেবে তাঁর অসামান্য অবদানের স্বীকৃতিতে, করাচিতে তার নামে একটি বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। এছাড়াও, হার্ভার্ড ও এমআইটিতে আগা খান ইসলামিক স্থাপত্য বিষয়ক প্রোগ্রাম পরিচালিত হয়।।
তার অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ অবদানগুলোর মধ্যে রয়েছে দিল্লির ঐতিহাসিক হুমায়ূনের সমাধির পুনরুদ্ধারে আগা খান ট্রাস্ট ফর কালচারের মুখ্য ভূমিকা, যার ফলস্বরূপ বিশ্ব স্থাপত্যে তার অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ বার্ষিক আগা খান আর্কিটেকচার পুরস্কার প্রদান করা হয়।