ছয় হাজার টাকা বাসা ভাড়া, তাই মাংস বিক্রি করে দিছি!
মাজেদা বেগম, বয়স ৬০। স্বামী পরিত্যক্তা, গ্রামের বাড়ি কিশোরগঞ্জ। ৩০ বছর ধরে থাকেন রাজধানীর নিমতলী বস্তিতে। মানুষের বাসাবাড়িতে কাজ করেই জীবিকা নির্বাহ করেন।
ঈদের দিনে মানুষের বাড়ি বাড়ি গিয়ে কোরবানির মাংস সংগ্রহ করেছেন মাজেদা, আবার সেই মাংসএনে বিক্রি করেও দিয়েছেন কারওয়ান বাজারে।
'মানুষ আপনাকে মাংস দিয়েছেন খাওয়ার জন্য, না খেয়ে আপনি বিক্রি করে দিলেন কেন!' এমন প্রশ্নের উত্তর টিবিএসকে মাজেদা বেগম বলেন, 'বাসার জন্য এক-দেড় কেজি রাখছি, বাকিটা বিক্রি করে বাসা ভাড়া দিমু, বাসা ভাড়া তো সব মিলিয়ে ৫-৬ হাজার টাকা। আগে ৪ হাজার টাকা ছিল। এখন তো বস্তিমালিক সব মিলিয়ে ৬ হাজার টাকা নেয়। মাংস খাইলেই তো চলবে না, বাসা ভাড়াও তো দিতে হবে।'
রাজধানীর কারওয়ান বাজারসহ বিভিন্ন স্থানে কোরবানির ঈদের দিনে অনেক দরিদ্র, নিম্ন আয়ের মানুষ মাংস সংগ্রহ করে বিক্রি করে এনে সেই মাংস আবার বিক্রি করে দেন। এদের কেউ কেউ অতিরিক্ত মাংস বিক্রি করেন, আবার অনেকে অর্থাভাবেও এসব মাংস বিক্রি করেন।
এসব মাংসের ক্রেতাও আবার নিম্ন-মধ্যবিত্ত আয়ের মানুষ, যাদের কোরবানি দেয়ার সামর্থ্য নেই এবং বছরের অন্যান্য সময়েও যাদের গরুর মাংস কেনার ক্ষমতা নেই। সাধারণত এসব মাংসের কেজি ২৫০-৪০০ টাকার মধ্যে বিক্রি করা হয়।
কারওয়ান বাজারে ছোট শিশুসহ মাংস কিনতে এসেছেন মধ্যবয়সি শাহিনুর বেগম (৪০), গ্রামের বাড়ি দিনাজপুর। স্বামী বেসরকারি একটি কোম্পানিতে ২৫ হাজার টাকা বেতনে চাকরি করেন। স্বামী, ছেলেমেয়ে নিয়ে তাদের ৫ জনের সংসার।
কথা বলতে গেলে কিছুটা লাজুক সুরে শাহিনুর বলেন, 'ভাই কিছু জিজ্ঞেস করিয়েন না, কোরবানি দিতে পারি নাই। ছেলেমেয়ের পড়াশোনা খরচ, বাসা ভাড়া ইত্যাদি দিয়ে কোরবানি দেয়ার টাকা তো আর নেই! টাকা নেই, তাই এ বছর গ্রামের বাড়িও যাইনি।
'কিন্তু ছোট ছেলেমেয়েরা তো আর বুঝে না, তারা সারাদিন দেখেছে বাসার আশেপাশে গরু জবাই হয়েছে! বাচ্চারা কিছু বলে না, কিন্তু মন ছোট করে আছে! তাই তাদের বুঝ দেওয়া জন্য এখান থেকে কিছুটা কম দামে ৫ কেজি মাংস নিয়েছি।'