প্রেসিডেন্টের বাসভবনে এখন জনতার উল্লাস
রাশমি কাবিন্ধ্যা স্বপ্নেও ভাবেননি, জীবদ্দশায় কখনো শ্রীলঙ্কান প্রেসিডেন্টের সরকারী বাসভবনে পা রাখবেন!
শনিবার সুদৃশ্য, আলিশান সে বাসভবনের দিকে ছুটে যাওয়া হাজার হাজার বিক্ষুব্ধ নারী-পুরুষের মাঝে ছিলেন রাশমিও।
ঔপনিবেশিক ধাঁচের স্থাপত্যটির বিভিন্ন অংশ জুড়ে রয়েছে একাধিক বারান্দা, মিটিং রুম, থাকার জায়গা, একটি সুইমিং পুল এবং একটি বিশাল লন। শনিবার স্রোতের মতো বিক্ষুব্ধ জনতা ভবনটির দিকে আসতে থাকলে পেছনের দরজার দিয়ে পালিয়ে যান শ্রীলংকার ৭৩ বছর বয়সী প্রেসিডেন্ট গোতাবায়া রাজাপাকসে।
চার সন্তান সমেত প্রেসিডেন্ট ভবনে আসা রাশমি বলছিলেন, "জায়গাটার ঐশ্বর্য দেখুন একবার! আমরা গ্রামের ছোট্ট একটি বাড়িতে থাকি। অথচ এই প্রাসাদ জনগণের জন্য এবং জনগণের টাকায় নির্মিত।"
হাজার হাজার পুরুষ, নারী, শিশুরা প্রেসিডেন্ট ভবনের কম্পাউন্ডে প্রবেশের চেষ্টা করছিল আর কয়েকজন সংগঠক ভিড় নিয়ন্ত্রণ করছিল। শ্রীলঙ্কার পুলিশ এবং স্পেশাল ট্রুপসের সদস্যরা নীরবে এককোণে দাঁড়িয়ে সব দেখছিলেন।
এক ঘর থেকে আরেক ঘরে ঘুরে বেড়াবার সময়ে, দামি দামি চিত্রকর্ম আর ডেস্কগুলোর সামনে মানুষের সেলফি তোলার হিড়িক পড়ে যায়।
ভাঙা চেয়ার, জানালার ভাঙা কাঁচ, ছড়িয়ে-ছিটিয়ে থাকা কাচের পাত্র তাদের হুড়োহুড়ি করে ভবনে ঢোকার প্রমাণ বহন করছিল।
দেশটির গণেমুল্লা শহরের একটি বিনোদন পার্কের কর্মী এএল প্রেমাবর্ধনে বলেন, "এমন একটি প্রাসাদ দেখা আমার জন্য স্বপ্ন সত্যি হওয়ার মতো ব্যাপার।"
"আমরা ঘণ্টার পর ঘণ্টা কেরোসিন, গ্যাস এবং খাবারের লাইনে অপেক্ষা করছি অথচ রাজাপাকসেরা কী এক ভিন্ন জীবন যাপন করছিল!"
বিক্ষোভকারী নেতারা ইতিমধ্যেই তাদের দাবি জানিয়েছেন, প্রেসিডেন্ট রাজাপাকসে এবং প্রধানমন্ত্রী রনিল বিক্রমাসিংহ পদত্যাগ না করা অব্দি তারা প্রেসিডেন্টের বাড়ি ছেড়ে যাবেন না।
তবে সুইমিংপুল নিয়ে আকর্ষণ সবচেয়ে বেশি ছিল। বাদামি জলের পুলটির প্রশংসা করে অনেক পরিবার এর চারপাশে ঠায় দাঁড়িয়ে ছিল। শনিবার এক যুবক পুলের পানিতে ঝাঁপিয়ে পড়লে আশপাশের সব মানুষ আনন্দে হাততালি দিয়ে ওঠে।
কিশোরী দুই মেয়েকে নিয়ে ভবনে ঘুরছিলেন নিরোশা সুদর্শিনী হাচিনসন। তার চোখেমুখে ছিল বিষাদের ছায়া।
"আমার খারাপ লাগছে", বলেন নিরোশা।
"গণতান্ত্রিক উপায়ে নির্বাচিত প্রেসিডেন্টকে এমন লজ্জাজনকভাবে সরে যেতে হলো। তাকে ভোট দেওয়ায় এখন আমরাও লজ্জা বোধ করছি। দেশ থেকে তারা যত টাকা চুরি করেছে, জনগণ তার সব ফেরত চায়।"
ভবনের একটি রাজকীয় খাট নিয়ে জনতার আকর্ষণ ছিল তুঙ্গে; দলেবলে মানুষ সেখানে শুয়ে-বসে আড্ডা দিচ্ছিলেন। শ্রীলংকার রাষ্ট্রভাষা, সিংহলি আর তামিলের পাশাপাশি করিডরে কান পাতলে কিঞ্চিৎ ইংরেজিও শোনা যাচ্ছিল।
প্রাসাদের বাইরে, বিস্তৃত লনে এসে মিলে বৌদ্ধ, হিন্দু এবং খ্রিস্টান- বিভিন্ন ধর্মের শত শত মানুষ। একটা পরিবার তো সবুজ ঘাসের ওপর রীতিমত পিকনিকে মেতেছিল, যেখানে আর ২৪ ঘণ্টা আগেও তাদের বসা নিষিদ্ধ ছিল।
উল্লেখ্য, একসময়ের মোটামুটি ধনী অর্থনীতির শ্রীলঙ্কা এখন এক অভূতপূর্ব অর্থনৈতিক সংকটে ডুবে আছে। এমন সংকট দেশটিতে কখনও দেখা দেয়নি। অতি-মূল্যস্ফীতির সঙ্গে গুরুতর খাদ্য, জ্বালানি ও ওষুধ ঘাটতিতে ভুগছে দ্বীপরাষ্ট্রটি।
বিক্ষোভকারীরা কয়েক মাস ধরে গোতাবায়া রাজাপাকসেকে- যিনি কয়েক দশক ধরে শ্রীলঙ্কার রাজনীতিতে আধিপত্য বিস্তার করা শক্তিশালী এক বংশের সদস্য- পদত্যাগ করার আহ্বান জানিয়ে আসছেন। সম্প্রতি তার ভাই মাহিন্দা রাজাপাকসে এমনই বিক্ষোভের মুখে প্রধানমন্ত্রীর পদ ছাড়তে বাধ্য হলেও এতদিন প্রাণপণে ক্ষমতা আঁকড়ে ছিলেন গোতাবায়া।
- সূত্র- বিবিসি