যেভাবে শ্রীলংকার ইমিগ্রেশন কর্মকর্তারা গোতাবায়ার দুবাই পলায়ন ভণ্ডুল করে দিল
আগেই শোনা যাচ্ছিল, শ্রীলংকার প্রেসিডেন্ট গোতাবায়া রাজাপাকসে আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের কাছে লুকিয়ে আছেন এবং দেশ থেকে পালানোর চেষ্টা করছেন। নতুন খবর, ইমিগ্রেশন কর্মীদের বাধার কারণে ভণ্ডুল হয়ে গেছে তার পলায়ন চেষ্টা।
গত শনিবার থেকেই প্রেসিডেন্ট গোতাবায়ার ইস্তফার দাবিতে উত্তাল শ্রীলঙ্কা। পথে নেমেছেন সাধারণ মানুষ। গোতাবায়ার সরকারি বাসভবনেও ঢুকে পড়েছে তারা। গোতাবায়া জানিয়েছেন, বুধবার (১৩ জুলাই) তিনি প্রেসিডেন্ট পদ থেকে ইস্তফা দিবেন।
শনিবার যখন স্রোতের মতো বিক্ষুব্ধ জনতা প্রেসিডেন্ট ভবনের দিকে এগিয়ে আসছিল তখন পেছনের দরজার দিয়ে সটকে পড়েন ৭৩ বছর বয়সী গোতাবায়া। সেনাবাহিনী তাকে নিরাপদ স্থানে সরিয়ে নেয়।
প্রেসিডেন্টের ক্ষমতাবলে রাজাপাকসেকে সরাসরি গ্রেপ্তার করা হবে না। তবে আটক এড়াতে পদত্যাগের আগেই যে তিনি বিদেশে পাড়ি দেয়ার চেষ্টা করবেন সেটি অনুমিত ছিল।
মঙ্গলবার ইমিগ্রেশনের কর্মকর্তারা তার পাসপোর্টে স্ট্যাম্প মারার জন্য ভিআইপি স্যুটে যেতে অস্বীকৃতি জানান। অন্যদিকে গোতাবায়াও বলতে থাকেন, মানুষের সামনে পড়লে তারা উত্তেজিত হয়ে প্রতিশোধ গ্রহণ করতে পারে, সে আশংকায় তিনি পাবলিক সুবিধার মধ্য দিয়ে যাবেন না।
সংযুক্ত আরব আমিরাতের পরপর চারটি ফ্লাইট ধরার সুযোগ হারানোর পর গোতাবায়া এবং তার স্ত্রী বিমানবন্দরের পাশে একটি সামরিক ঘাঁটিতে রাত্রিযাপন করেন বলে জানা গেছে।
প্রেসিডেন্ট গোতাবায়া রাজাপাকসের ছোট ভাই এবং শ্রীলঙ্কার সাবেক অর্থমন্ত্রী বাসিল রাজাপাকসেও তার দুবাইয়ের ফ্লাইট মিস করেছেন মঙ্গলবার ভোরে। যাত্রীদের আপত্তি আর ইমিগ্রেশন কর্মীদের একই রকম বাধার কারণে বাসিলও দেশ ছাড়তে ব্যর্থ হয়েছেন।
বিমানবন্দরের একজন কর্মকর্তা বার্তা সংস্থা এএফপিকে বলেন, "কয়েকজন যাত্রী বাসিলের তাদের ফ্লাইটে উঠার বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করছিল।"
"সেসময় খুব উত্তেজনাপূর্ণ পরিস্থিতি তৈরী হয়, তাই তিনি দ্রুত বিমানবন্দর ছেড়ে চলে যান।"
কূটনৈতিক সূত্রে জানা গেছে, শ্রীলংকা-আমেরিকার দ্বৈত নাগরিক বাসিল শনিবারের বিক্ষোভ এড়াতে তাড়াহুড়োয় তার আগের পাসপোর্ট প্রেসিডেন্ট ভবনে ফেলে আসায় নতুন পাসপোর্টের জন্য আবেদন করেছিলেন।
শ্রীলংকা ইমিগ্রেশন অ্যান্ড এমিগ্রেশন অফিসার্স অ্যাসোসিয়েশন জানিয়েছে, তাদের সদস্যরা কলম্বো বিমানবন্দরের ভিআইপি ডিপারচার লাউঞ্জে বাসিল রাজাপাকসেকে পরিষেবা দিতে অস্বীকৃতি জানায়।
অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি কেএএস কানুগালা বলেন, "শ্রীলঙ্কায় চলমান অস্থিরতার প্রেক্ষিতে শীর্ষ পর্যায়ের কর্তাব্যক্তিদের দেশ ছেড়ে যেতে না দিতে বর্তমানে প্রচণ্ড চাপের মধ্যে রয়েছে ইমিগ্রেশন কর্মীরা।"
"আমরা আমাদের নিরাপত্তা নিয়ে উদ্বিগ্ন। তাই এই সংকটের সমাধান না হওয়া পর্যন্ত ভিআইপি লাউঞ্জে কর্মরত ইমিগ্রেশন কর্তারা তাদের সেবা প্রত্যাহারের সিদ্ধান্ত নিয়েছেন।"
বিমানবন্দর লাউঞ্জে বাসিল রাজাপাকসের দেশত্যাগের চেষ্টা আটকে দেওয়ার ভিডিও ইতিমধ্যে ছড়িয়ে পড়েছে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে।
দেশটির ক্ষমতাসীন দলের একজন শীর্ষ কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানিয়েছেন, বাসিল রাজাপাকসে এখনো দেশেই আছেন।
রাজাপাকসে পরিবার ২ কোটি ২০ লাখ মানুষের দ্বীপরাষ্ট্রটির রাজনীতিতে বছরের পর বছর ধরে আধিপত্য বিস্তার করে আসছে; শ্রীলংকার আজকের দুর্দশার জন্যও অধিকাংশ নাগরিক এই পরিবারকেই দায়ী করে।