বৈশ্বিক প্রবৃদ্ধির পূর্বাভাস কমালো আইএমএফ, উচ্চ মূল্যস্ফীতিতে মন্দার আশঙ্কা
বৈশ্বিক অর্থনীতির পূর্বাভাস আবারো কমিয়েছে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ)। যথাযথ পদক্ষেপ না নিলে ইউক্রেন যুদ্ধ ও উচ্চ মূল্যস্ফীতি যে নিম্নুমুখী ঝুঁকি সৃষ্টি করছে- তা বিশ্ব অর্থনীতিকে মন্দার দ্বারপ্রান্তে নেবে বলেও সতর্ক করেছে।
মঙ্গলবার (২৬ জুলাই) আইএমএফ তাদের ওয়ার্ল্ড ইকোনমিক আউটলুক প্রতিবেদনের সাম্প্রতিকতম সংস্করণ প্রকাশ করে। এতে ২০২২ সালের জন্য এপ্রিলে দেওয়া ৩.৬ শতাংশ প্রবৃদ্ধির আভাস কমিয়ে ৩.২ শতাংশে নামিয়েছে। রাশিয়া ও চীনে মন্থর দশার কারণে দ্বিতীয় প্রান্তিকে বৈশ্বিক জিডিপি সংকুচিত হয়েছে বলেও জানিয়েছে আন্তর্জাতিক সহায়তা সংস্থাটি।
এপ্রিলে ২০২৩ সালে বিশ্ব অর্থনীতির ৩.৬ শতাংশ প্রবৃদ্ধির প্রক্ষেপণ করেছিল আইএমএফ, যা এখন কমিয়ে ২.৯ শতাংশ করেছে। এজন্য কঠোর মুদ্রানীতির প্রভাবকে দায়ী করেছে।
এর আগে ২০২০ সালে করোনা মহামারির চরম প্রাদুর্ভাবকালে বৈশ্বিক প্রবৃদ্ধি ৩.১ শতাংশ কমে। ২০২১ সালে মহামারির অভিঘাত থেকে পুনরুদ্ধার কালে তা ৬.১ শতাংশ বাড়ে।
সাম্প্রতিক আউটলুক প্রতিবেদনের বিষয়ে এক বিবৃতিতে আইএমএফ- এর প্রধান অর্থনীতিবিদ পিয়েরে-অলিভার গুরিনচাস বলেছেন, 'এপ্রিলের পর থেকে (বিশ্ব অর্থনীতির) পূর্বাভাস অনেকটাই উজ্জ্বল্য হারিয়েছে। অচিরেই বিশ্ব মন্দার মুখে পড়তে পারে, যা গত মন্দাবস্থার (২০২০ সাল) মাত্র দুই বছর পরই দেখা দিতে চলেছে'।
রাশিয়া গ্যাস সরবরাহ বন্ধ করলে যা হবে
সাম্প্রতিক পূর্বাভাসকে 'নজিরবিহীন রকম অনিশ্চিত' বলে উল্লেখ করেছে আইএমএফ। রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের ফলে বৈশ্বিক খাদ্যপণ্যের চড়ামূল্যের কারণে এটি আরও নিম্নমুখী হওয়ার ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে বলেও জানিয়েছে। এতে মূল্যস্ফীতি পরিস্থিতির আরও অবনতি হবে। তখন দীর্ঘমেয়াদি মূল্যস্ফীতি মোকাবিলাকে বিবেচনায় রেখে মুদ্রানীতি আরও কঠোর করবে কেন্দ্রীয় ব্যাংকগুলি।
আইএমএফ আরেকটি পরিস্থিতিও অনুমান করেছে, যেখানে রাশিয়া চলতি বছরের শেষ নাগাদ ইউরোপে পুরোপুরি গ্যাস সরবরাহ বন্ধ করবে এবং তেল রপ্তানি কমাবে ৩০ শতাংশ। এর পরিণতিতে, ২০২২ সালে বৈশ্বিক প্রবৃদ্ধি ২.৬ শতাংশের মতো মন্থর গতিতে নামবে এবং ২০২৩ সালে তা ২ শতাংশ হবে। ইউরোপ ও যুক্তরাষ্ট্রে আগামী বছর জিডিপি প্রবৃদ্ধি কার্যত শূন্যের কোঠায় নামার আশঙ্কাও রয়েছে।
২০২০ সালের করোনা মহামারিজনিত মন্দাসহ ১৯৭০- এর দশকের পর- বিশ্ব অর্থনীতির প্রবৃদ্ধি মাত্র পাঁচবার ২ শতাংশের কম হয়েছে বলে উল্লেখ করেছে আইএমএফ।
২০২২ সালে অগ্রসর অর্থনীতির দেশগুলোর গড় মূল্যস্ফীতি ৬.৬ শতাংশে পৌঁছানোর অনুমান করেছে মুদ্রা তহবিলটি। এপ্রিলে যা ৫.৭ শতাংশ হওয়ার আভাস দেওয়া হয়েছিল। মূল্যস্ফীতি আগের ধারণার চেয়েও বেশি সময় উচ্চ মাত্রায় থাকবে বলেও উল্লেখ করেছে।
চলতি বছরে উদীয়মান ও উন্নয়নশীল অর্থনীতির দেশগুলোর গড় মূল্যস্ফীতি ৯.৫ শতাংশ হওয়ার আভাস দেওয়া হয়েছে, এপ্রিলের পূর্বাভাসে যা ৮.৭ শতাংশ পর্যন্ত হওয়ার অনুমান করা হয়।
গুরিনচাস বলেছেন, 'বর্তমান ও ভবিষ্যৎ সামষ্টিক অর্থনীতির স্থিতিশীলতার জন্য মূল্যস্ফীতির বর্তমান মাত্রা স্পষ্ট ঝুঁকি। একে কেন্দ্রীয় ব্যাংকগুলির লক্ষ্যমাত্রা পর্যায়ে নামিয়ে আনাই এখন নীতিনির্ধারকদের প্রধান অগ্রাধিকার হওয়া উচিত'।
কঠোর মুদ্রানীতির 'যন্ত্রণা' আগামী বছরে দেখা যাবে, এতে প্রবৃদ্ধি গতি হারাবে আর তার চাপ বেশি পড়বে উদীয়মান বাজার অর্থনীতির দেশগুলোয়। কিন্তু, তাই বলে হাত গুটিয়ে বসে থাকলে তাতে 'দুর্দশাই কেবল বাড়বে' উল্লেখ করে তিনি বলেন, 'মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে না আসা পর্যন্ত কেন্দ্রীয় ব্যাংকগুলিকে তাদের (কঠোর) মুদ্রানীতিতে অবিচল থাকতে হবে'।
- সূত্র: রয়টার্স