স্মরণে হলি আর্টিজান ট্র্যাজেডি
আতঙ্ক, উৎকণ্ঠা আর রক্তে রঞ্জিত করা বাংলাদেশের ইতিহাসের সবচেয়ে বড় আর নির্মম জঙ্গি হামলার তিন বছর পূর্ণ হলো আজ।
২০১৬ সালের এই দিনে গুলশানের হলি আর্টিজান রেস্তোরাঁয় অস্ত্রধারী জঙ্গিদের চালানো হামলায় প্রাণ হারান ২২ জন মানুষ। দেশে-বিদেশে বসবাস করা প্রাণ হারানো এইসব মানুষের স্বজনরা নিহতদের স্মৃতির প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে পালন করছেন শোকাবহ এই দিনটি।
২০১৬ সালের ১ জুলাই সন্ধ্যায় অস্ত্রধারী পাঁচ জঙ্গি গুলশান-২ নম্বর সেকশনের ৭৯ নম্বর সড়কের ৫ নম্বর বাড়িতে ঢুকে, যা সে সময় শহরের একটি অভিজাত রেস্তোরাঁ ছিল। হলি আর্টিজানে ঢুকেই রেস্তোরাঁয় আসা মানুষদের জিম্মি করে ফেলে জঙ্গিরা; জিম্মিদের মধ্যে ২২ জনকে নির্মমভাবে জবাই করে হত্যা করে তারা।
নিহতদের মধ্যে ছিলেন নয়জন ইতালিয়ান নাগরিক, সাতজন জাপানি, একজন ভারতীয়, একজন বাংলাদেশী বংশোদ্ভূত আমেরিকান এবং দুইজন বাংলাদেশী নাগরিক। এছাড়াও অভিযান পরিচালনা করতে গিয়ে জঙ্গিদের গুলিতে নিহত হন দুই পুলিশ কর্মকর্তা।
পরদিন সকালে (২ জুলাই) বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর বিশেষ প্যারা কমান্ডো দলের এক সফল অভিযানে রেস্তোরাঁয় জিম্মি থাকা ১৩ জনকে উদ্ধার করা হয় যার মধ্যে ছিলেন তিন বিদেশি নাগরিক। অভিযানে পাঁচ জঙ্গি ও রেস্তোরাঁর এক কর্মচারী নিহত হওয়ার পাশাপাশি সন্দেহভাজন এক জঙ্গিকে আটক করা হয়।
হলি আর্টিজান বেকারির নৃশংসতার সেই রাত
২০১৬ সালের পহেলা জুলাইয় রাত ৯টার দিকে অস্ত্রশস্ত্রে সজ্জিত হয়ে পাঁচ জঙ্গি ঢাকার গুলশানের কূটনীতিক পাড়ায় অবস্থিত হলি আর্টিজান রেস্তোরাঁয় ঢুকে পড়ে। জঙ্গিরা ভেতরে প্রবেশ করেই অতর্কিতভাবে গুলি চালানো শুরু করে।
বোমা, চাপাতি, পিস্তল নিয়ে ক্যাফের ভেতরে প্রবেশ করা এসব আক্রমণকারী রেস্তোরাঁয় আসা বিদেশীসহ সবাইকে জিম্মি করে ফেলে। খবর পেয়ে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের একটি দল এসময় ক্যাফের নিয়ন্ত্রণ নিতে অভিযান চালালে জিম্মিকারীদের ছোঁড়া গুলিতে দুই পুলিশ কর্মকর্তা নিহত হন। শহরজুড়ে ছড়িয়ে পড়ে উত্তেজনা।
রেস্তোরাঁর নিয়ন্ত্রণ নিতে পুলিশ ব্যর্থ হলে র্যাব, বিজিবি ও পুলিশের সমন্বয়ে গঠিত একটি টিম অভিযান চালানোর সিদ্ধান্ত নেয়। এরপর ২ জুলাই ভোরে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী ‘অপারেশন থান্ডারবোল্ট’ নামে একটি বিশেষ অভিযানের সিদ্ধান্ত নেয়। সকাল ৭ টা ৪০ মিনিটে সেনাবাহিনীর প্রথম প্যারা কমান্ডো ব্যাটালিয়ন এই অভিযান শুরু করে।
রেস্তোরাঁর ভেতর থেকে নয়জন ইতালিয়ান নাগরিক, সাত জাপানী, দুই বাংলাদেশী, একজন ভারতীয় এবং একজন বাংলাদেশী বংশোদ্ভূত আমেরিকানের জবাই করা মৃতদেহ উদ্ধার করে প্যারা কমান্ডো দলটি। উদ্ধার করে রেস্তোরাঁয় জিম্মি থাকা দেশী-বিদেশী ১৩ নাগরিককে।
পুলিশের তথ্য অনুযায়ী, আক্রমণকারী জঙ্গিরা সবাই বাংলাদেশী নাগরিক। তাদের নাম হচ্ছে নিবরাস ইসলাম, রোহান ইমতিয়াজ, মীর সামিহ মুবাশশির, খায়রুল ইসলাম পায়েল এবং শফিকুল ইসলাম উজ্জ্বল।
এই হামলার দায় স্বীকার করে আন্তর্জাতিক জঙ্গি সংগঠন আইএসআইএস ইন্টারনেটে বন্দুকধারীদের ছবি প্রকাশ করেছিলো তবে বাংলাদেশের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল আইএস এর দাবি উড়িয়ে দিয়ে বলেছিলেন, এই হামলা চালিয়েছে দেশীয় জঙ্গিগোষ্ঠী জামাতুল মুজাহিদিন এবং এর সাথে আইএস এর কোন সূত্রীতা নেই।
হলি আর্টিজানে চালানো এই জঙ্গি হামলাই ছিলো বাংলাদেশের ইতিহাসে সবচেয়ে বড় সন্ত্রাসী হামলা।