চট্টগ্রামে গণপরিবহনে বাড়তি ভাড়া, ভোগান্তিতে যাত্রীরা
জ্বালানি তেলের মূল্য বৃদ্ধির পর গণপরিবহনের নতুন ভাড়া নির্ধারণ হলেও চট্টগ্রামের বাসগুলোতে ভাড়ার তালিকা টানানো হয়নি। ফলে গণপরিবহনের বাড়তি ভাড়া আদায় করা হচ্ছে বলে অভিযোগ যাত্রীদের।
বিশেষ করে সন্ধ্যার পর যখন অফিস ফেরত মানুষ ঘরে ফেরেন, তখন গণপরিবহনের সংকট দেখা দেয়। আর তখন ইচ্ছেমতো বাড়তি ভাড়া আদায় করা হয় বলে অভিযোগ বন্দর নগরীর ভুক্তভোগী যাত্রীদের।
নগরীর বহাদ্দারহাট থেকে আগ্রাবাদ এলাকার মিনিবাসের ভাড়া ছিল ১৫ টাকা। নতুন করে ৩ টাকা বাড়িয়ে ১৮ টাকা করা হয়। আর তেল চালিত বাসে সর্বনিম্ন ভাড়া ৮ টাকা। কিন্তু তেলের দাম বৃদ্ধির পর এই রুটে সর্বনিম্ন ভাড়া ১০ টাকা করে নিচ্ছে বাসগুলো।
আর রাতে বাসের সংকট দেখা দিলে, ১৮ টাকার ভাড়া ২০ টাকায়ও আদায় করা হচ্ছে।
নগরীর হালিশহরের বাসিন্দা আবদুর রহিমের বহাদ্দারহাট এলাকার একটি বীমা অফিসে কমিশন ভিত্তিতে কাজ করেন। তিনি বলেন, "সন্ধ্যার পর থেকে এই রুটের মিনি বাসগুলোতে বেশি ভিড় থাকে। এসময় বাস সংখ্যাও কমে আসে। তখন ভাড়া বাড়তি নেওয়া হয়। না পোষালে না যেতে বলে। নিরুপায় হয়ে বেশি ভাড়া দিয়ে যেতে হয়।"
নগরীর চকবাজার থেকে আগ্রাবাদ হয়ে ছোটপুল এলাকায় চলাচলে রয়েছে ১ নম্বর রুটের ডিজেল চালিত মাহিন্দ্র গাড়িগুলো চলাচল করে। তেলের দাম বৃদ্ধির আগে চকবাজার থেকে আগ্রাবাদের ভাড়া ছিল ১৫ টাকা।
সরকারি ঘোষণা অনুযায়ী, এ রুটে ২ টাকা ভাড়া বাড়ানোর কথা থাকলেও ৫ টাকা বাড়িয়ে ২০ টাকা নেওয়া হচ্ছে।
এই রুটে সপ্তাহে চারদিন চলাচল করেন সরকারি চাকরির প্রার্থী অনিরুদ্ধ দাস। তিনি দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে বলেন, "চকবাজার থেকে লালখানবাজারের ভাড়া আগে ছিল ৫ টাকা। গত বছরের শেষ দিকে তা বাড়িয়ে ৮ টাকা করা হয়েছে। এখন নেওয়া হচ্ছে ১০ টাকা। এই কয়েক মাসের মধ্যে ভাড়া ডাবল হয়ে গেছে। এটুকু পথের জন্য ১০ টাকা ভাড়া দিতে সত্যি গায়ে লাগে।"
শুধু এই দুই রুটে নয় প্রায় সবগুলো রুটে বাড়তি ভাড়া আদায় বাসগুলো। নগরীর মুরাদপুর থেকে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাড়া ২০ টাকা। এই রুটের গন্তব্য বিশ্ববিদ্যালয়ের এক নম্বর গেট থেকে নিউমার্কেট এলাকা পর্যন্ত। বিকালের পর গাড়িগুলো নিউমার্কেট পর্যন্ত যায় না। সন্ধ্যার পর গাড়ির সংকট দেখা দিলে মুরাদপুর থেকে বিশ্ববিদ্যালয় পর্যন্ত ৩০ টাকাও বাড়তি ভাড়া আদায় করা হয়। নিউমার্কেট থেকে ভাটিয়ারি রুটে ৩৮ টাকার পরিবর্তে ৪০-৫০ টাকাও ভাড়া আদায় করা হয়।
গত বছরের শেষে জ্বালানি তেলের দাম বৃদ্ধির এক দফা বাড়ানো হয়েছিল গণপরিবহনের ভাড়া। তখন তেল চালিত গাড়ির সঙ্গে গ্যাস চালিত গাড়ি বাড়তি ভাড়ায় আদায় করেছিল বলে প্রশাসন অভিযান চালিয়েছিল। গ্যাসও তেল চালিত গাড়িগুলো চিহ্নিত করে দেওয়া হয়। তবে এ কয়েক মাসে এসব স্টিকার তুলে ফেলা হয়েছে। গত ৫ আগস্ট জ্বালানি তেলর মূল্য বৃদ্ধির পরে আবার শুরু হয় গণপরিবহনের ভাড়া নৈরাজ্য।
এ প্রসঙ্গে চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পরিবহন মালিক গ্রুপের সভাপতি বেলায়েত হোসেন দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে বলেন, "আমরা নতুন ভাড়ার তালিকাটি সব পরিবহন মালিককে দিয়েছি। তাদের বলেছি, বাসের ভেতরে দৃশ্যমান স্থানে যেন টাঙানো হয়। এরপরও যদি কোন ড্রাইভার তা না করে বাড়তি ভাড়া আদায় করে, তাহলে বিআরটিএ ও ট্রাফিক ডিভিশন আছে। তারা অনিয়মকারীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিক।"
বিআরটিএ চট্টগ্রাম বিভাগীয় অফিসের উপপরিচালক (ইঞ্জিনিয়ার) শফিকুজ্জামান ভূঞা দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে বলেন, "নতুন ভাড়া নির্ধারণের পর আমরা সংশ্লিষ্ট সবাইকে তালিকা দিয়ে দিয়েছি। গণপরিবহনের দৃশ্যমান স্থানে দের দুজন ম্যাজিস্ট্রেট আছেন, তারা নিয়মিত অভিযান করছেন। এছাড়া আরো ৫টি টিম করে দিয়েছি। সবাই তদারকি করছেন। যারা এখনো তালিকা টাঙাননি বা বেশি ভাড়া আদায় করছে, তাদের জরিমানা করা হচ্ছে।"