টুইটার ব্যবহার করায় সৌদি নারীর ৩৪ বছরের কারাদণ্ড
টুইটার অ্যাকাউন্ট ব্যবহার এবং ভিন্নমতাবলম্বী ও অ্যাক্টিভিস্টদের অনুসরণের জন্য সৌদি আরবের এক নারীকে ৩৪ বছরের কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে।
সাজাপ্রাপ্ত সালমা আল সেহাব যুক্তরাজ্যের লিডস ইউনিভার্সিটির পিএইচডি'র শিক্ষার্থী; ছুটি কাটাতে তিনি নিজ দেশে অবস্থান করছিলেন।
মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের সৌদি সফরের কয়েক সপ্তাহের মধ্যেই দেশটির স্পেশাল টেরোরিস্ট কোর্টের মাধ্যমে এই দণ্ডাদেশ দেওয়া হলো।
সৌদি ক্রাউন প্রিন্স মোহাম্মদ বিন সালমান যেভাবে টুইটার ব্যবহারকারীদের লক্ষ্যবস্তুতে পরিণত করে দমন-পীড়ন পরিচালনা করছেন, এটি যেন তারই সর্বশেষ সংযোজন।
৩৪ বছরের সালমা দুই সন্তানের মা। প্রথমে তাকে তিন বছরের জেল দেওয়া হয়েছিল। অপরাধ হিসাবে বলা হয়, জনমানসে নেতিবাচক প্রভাব সৃষ্টি করে নাগরিক ও জাতীয় নিরাপত্তাকে অস্থিতিশীল করে তোলা।
কিন্তু সোমবার আপিল আদালত নতুন সাজা প্রদান করেছেন- যেখানে তাকে ৩৪ বছরের কারাদণ্ডের পাশাপাশি একই সময়ের জন্য ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞাও দেওয়া হয়েছে।
অভিযোগে বলা হয়েছে, যারা জনসাধারণের মনে অস্বস্তি সৃষ্টি করে নাগরিক ও জাতীয় নিরাপত্তাকে অস্থিতিশীল করে তুলতে চায়, তাদের টুইটার একাউন্ট অনুসরণ এবং টুইটগুলো রি-টুইটের মধ্য দিয়ে সালমা মূলত তাদের প্রতি সহায়তাই প্রদর্শন করেছেন। তবে এখনও সালমার কাছে আরেকবার আপিলের আবেদন আছে বলে মনে করা হচ্ছে।
ইনস্টাগ্রামে সালমা আল সেহাবের অনুসারীর সংখ্যা মাত্র ১৫৯। সৌদি হোক বা যুক্তরাজ্য, কোন দেশেই তিনি নেতৃস্থানীয় বা সোচ্চার অ্যাক্টিভিস্টদের কেউ নন।
সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ইন্সটাগ্রামে সালমা নিজেকে ডেন্টাল হাইজিনিস্ট, মেডিকেল এডুকেটর, লিডস ইউনিভার্সিটির পিএইচডি'র শিক্ষার্থী, একজন স্ত্রী এবং দুই ছেলে নোয়াহ এবং অ্যাডামের মা হিসেবে পরিচয় দিয়েছেন।
তবে টুইটারে তার অনুসারীর সংখ্যা ২,৫৯৭ জন।
সালমার অধিকাংশ টুইট জুড়েই আছে কোভিড মহামারি এবং তার সন্তানেরা। তবু কখনও কখনও নির্বাসনে থাকা ভিন্নমতাবলম্বী সৌদি নাগরিকদের করা টুইট তিনি রিটুইট করেছেন, যেখানে কিছু ক্ষেত্রে রাজনৈতিক বন্দীদের মুক্তির আহবান জানানো হয়েছে। এছাড়াও বিশিষ্ট সৌদি নারী অধিকার কর্মী লুজাইন আল-হাথলুলকে সমর্থনের অভিযোগ আনা হয়েছে সালমার বিরুদ্ধে। সৌদি আরবে নারীদের গাড়ি চালানোর নিষেধাজ্ঞা অমান্য করার অপরাধে তাকে এর আগে গ্রেপ্তার করা হয়েছিল। লুজাইন আল-হাথলুলের ওপর এখনও ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞা বহাল।
সালমার এক পরিচিতের সূত্রে জানা গেছে, ২০১৮ অথবা ২০১৯ এর দিকে তিনি পিএইচডি সম্পন্নের জন্য লিডসে যান। ২০২০ সালের ডিসেম্বরে ছুটিতে সৌদি আসেন। ইচ্ছা ছিল, স্বামী এবং দুই সন্তানকে নিয়ে যুক্তরাজ্যে ফিরবেন। এরপরেই সৌদি কর্তৃপক্ষ তাকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য ডাকে এবং গ্রেপ্তার করে।
সালমার মামলা নিয়মিত অনুসরণকারী একজন ব্যক্তি বলেছেন, তাকে নির্জন কারাগার বা সলিটারি কনফাইনমেন্টে রাখা হয়েছিল। তাকে কীভাবে পরিচালনা করা হয়েছে সে প্রসঙ্গে বিচারকার্যের সময় সালমা বিচারককে একান্তে কিছু বলতে চেয়েছিলেন, যা তিনি নিজের বাবার সামনেও বলতে চাননি। অথচ বিচারককে সালমার বার্তাটি জানানোর অনুমতিই দেওয়া হয়নি।
উল্লেখ্য এ বিষয়ে কোন মন্তব্য করতে অস্বীকৃতি জানিয়েছে টুইটার।
- সূত্র- দ্য গার্ডিয়ান