আগস্টে পোশাকের রপ্তানি চালানে বড় উল্লম্ফন
আগস্টের প্রথম ২২ দিনে বাংলাদেশের পোশাক রপ্তানিতে বার্ষিক ৫৮ শতাংশ প্রবৃদ্ধি অর্জিত হয়েছে, এসময় রপ্তানি হয়েছে ২.৫ বিলিয়ন ডলারের। রাশিয়া এবং ইউক্রেনের মধ্যে চলমান যুদ্ধের কারণে রেকর্ড মূল্যস্ফীতির কবলে বাংলাদেশের পোশাক খাতের প্রধান রপ্তানি গন্তব্যের দেশগুলো। তার মধ্যেই হয়েছে এ অগ্রগতি।
তবে ভোক্তা চাহিদা কমে যাওয়ায় ওয়ালমার্টসহ বেশ কয়েকটি ব্র্যান্ড ইতোমধ্যে কিছু অর্ডার বাতিলও করেছে। এছাড়া, কিছু ক্রেতা রপ্তানিকারকদের চালান দেরিতে পাঠাতে অথবা ডেলিভারির জন্য প্রস্তুত অর্ডারগুলো স্থগিত রাখার অনুরোধ করছে।
বাংলাদেশ গার্মেন্টস ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যান্ড এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশন (বিজিএমইএ) সূত্র জানায়, খাতটি এই সময়ের মধ্যে একদিনে বছরওয়ারি হিসাবে (আগের বছরের তুলনায়) ৪৪৬ শতাংশ প্রবৃদ্ধি অর্জন করেছে। তবে চালানের ক্ষেত্রেও একদিনে ৫৪ শতাংশ ঋণাত্মক প্রবৃদ্ধি হয়েছে।
জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে বিজিএমইএ এই হিসাব করেছে। কারণ, রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরো এখনও আনুষ্ঠানিক তথ্য দেয়নি।
দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডের সঙ্গে আলাপকালে বিজিএমইএ-এর সহ-সভাপতি ফারুক হাসান বলেন, "আশা করছি, ইতিবাচক প্রবৃদ্ধি দিয়েই শেষ হবে চলতি আগস্ট। তবে সেপ্টেম্বর ও অক্টোবরে ঋণাত্মক প্রবণতা দেখা যেতে পারে।"
এর আগে, বিজিএমইএ সভাপতি ভবিষ্যদ্বাণী করেন যে, গত বছরের একই সময়ের তুলনায় চলতি বছরের আগস্ট পর্যন্ত পোশাক খাত দুই অঙ্কের প্রবৃদ্ধির মুখ দেখবে।
বাংলাদেশ নিটওয়্যার ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যান্ড এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের (বিকেএমইএ) নির্বাহী সভাপতি মোহাম্মদ হাতেম বলেন, আগামী মাসে পরিস্থিতি আরও খারাপ হতে পারে, কারণ এই মাস থেকে প্রায় প্রতিটি ক্রেতাই অর্ডার স্থগিত করছেন।
তিনি আরও ব্যাখ্যা করেন, "চলতি বছরের ডিসেম্বর পর্যন্ত আমার কারখানা অর্ডারে পরিপূর্ণ ছিল। কিন্তু, বিশ্ব অর্থনীতি গতি হারানোর ফলে আগস্টের প্রায় ৪০ শতাংশ এবং সেপ্টেম্বরের ৩০ শতাংশ অর্ডার স্থগিত হয়ে গেছে।"
এ শিল্পের ব্যবসায়ী নেতারা বলছেন, সামনের মাসগুলোর জন্য প্রায় ৩০ শতাংশ অর্ডার ঘাটতি মাথায় নিয়েই কাজ করছে বেশিরভাগ কারখানা।
রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে সৃষ্ট স্থবিরতা থেকে বিশ্ব অর্থনীতি শিগগিরই পুনরুদ্ধার না হলে পোশাক রপ্তানি থেকে গত অর্থবছর যে রেকর্ড ৪২.২ বিলিয়ন ডলার অর্জন হয়েছিল, এ বছর ওই লক্ষ্যমাত্রায়ও পৌঁছানো সম্ভব হবে না বলে আশঙ্কা করছেন তারা। চলতি ২০২২-২৩ অর্থবছরে সরকার তৈরি পোশাক রপ্তানির মাধ্যমে ৪৬ বিলিয়ন মার্কিন ডলার আয়ের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছে।
বাংলাদেশের প্রধান রপ্তানি গন্তব্য- মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং ইউরোপের দেশগুলো বর্তমানে বিগত ৪০ বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ মূল্যস্ফীতির সম্মুখীন।
রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) তথ্যমতে, প্রথমবারের মতো একক দেশ হিসেবে যুক্তরাষ্ট্রে রপ্তানির পরিমাণ ১০ বিলিয়ন ডলার ছাড়ায় ২০২১-২২ অর্থবছরে। এরমধ্যে ৯ বিলিয়ন ডলারই এসেছে তৈরি পোশাক খাত থেকে।
বাংলাদেশের তৈরি পোশাকের অন্যতম প্রধান মার্কিন ক্রেতা ওয়ালমার্ট। প্রতিষ্ঠানটি আনুষ্ঠানিকভাবে জানিয়েছে, আগামী বসন্তে তারা ৩০ শতাংশ কম অর্ডার দেবে, কারণ তাদের কাছে এখনও বিপুল পরিমাণ অবিক্রীত পণ্যসম্ভার রয়ে গেছে।
মূল্যস্ফীতির চাপে আরও ব্যয়-সচেতন হয়ে ওঠা ভোক্তাদের সীমিত চাহিদার কথা মাথায় রেখে কয়েক বিলিয়ন ডলারের অর্ডার বাতিল করেছে ওয়ালমার্ট।
পোশাক খাতের নির্বাহীরা জানান, সামনেই যুক্তরাষ্ট্রে শিক্ষার্থীদের স্কুল-কলেজে ফেরার মওসুম। দেশটির দক্ষিণ অংশে এরমধ্যেই গ্রীষ্মের ছুটি শেষে শিক্ষার্থীরা ক্যাম্পাসে ফিরতে শুরু করেছে। তার আগে গ্রীষ্মকালীন প্রায় সব কালেকশন বিক্রি শেষ করেছে ওয়ালমার্ট। সামনে আবার আরেকটি ছুটির সময়ও আসছে।
স্প্যারো গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক শোভন ইসলাম বলেন, বসন্ত মৌসুমের পোশাক উৎপাদিত হবে সেপ্টেম্বর থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত। তিনি আরও জানান, এইচঅ্যান্ডএম, ইন্ডিটেক্স, আমেরিকান ঈগল-সহ অন্যান্য ক্রেতারাও কম পরিমাণে অর্ডার দিচ্ছে, কারণ তাদের দোকানে পোশাকের চাহিদা কম।
বিশ্বের প্রথম লিড প্লাটিনাম সার্টিফাইড ডেনিম টেক্সটাইল কোম্পানি- এনভয় টেক্সটাইল লিমিটেডের চেয়ারম্যান কুতুবউদ্দিন আহমেদ বলেন, "আমরা লক্ষ করেছি, ওয়ালমার্ট গত কয়েক সপ্তাহ ধরে পোশাক কারখানাগুলোতে তাদের অর্ডারের সংখ্যা ও পরিমাণ উভয়ই কমিয়ে দিচ্ছে।"
এতে যেসব টেক্সটাইল মিলাররা এইসব ব্র্যান্ডের জন্য কাপড় সরবরাহ করেন, তারাও অর্ডার ঘাটতির মুখোমুখি হচ্ছেন বলে জানান তিনি।
বিজিএমইএ সহ-সভাপতি রকিবুল আলম চৌধুরী বলেন, আমেরিকার বহুজাতিক খুচরা বিক্রেতা ওয়ালমার্ট এবং টার্গেট- ইতোমধ্যে কিছু অর্ডার বাতিল করায় তৈরি পোশাক শিল্প ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
তারা ডেলিভারির জন্য প্রস্তুত কিছু কার্যাদেশের চালান স্থগিত করার অনুরোধ করেছে বলেও জানান তিনি।
রকিবুল আলম বলেন, যদিও কারখানার মালিকদের কেউই বিজিএমইএকে অর্ডার বাতিলের বিষয়ে অবহিত করেননি, তবে সংগঠনটি নিজে থেকেই তার সদস্য কারখানাগুলোর সঙ্গে যোগাযোগ রেখেছে।
সদস্য কারখানাগুলোকে আনুষ্ঠানিকভাবে বিজিএমইএ-এর কাছে আদেশ বাতিলের বিষয়ে জানাতে বলা হয়েছে বলেও উল্লেখ করেন তিনি।