দেড় বছর আগে অর্থ বরাদ্দ, এখনো শুরু হয়নি সিলেট কিনব্রিজের সংস্কার কাজ
প্রায় দেড় বছর আগে অর্থ বরাদ্দ হলেও এখন পর্যন্ত শুরু হয়নি সিলেটের ঐতিহ্যবাহী কিনব্রিজের সংস্কার কাজ।
ফলে ভাঙাচোরা এই সেতু দিয়ে ঝুঁকি নিয়েই চলছে যানবাহন।
সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তরের নিয়ন্ত্রণাধীন এই সেতুর সংস্কার কাজ করবে রেলওয়ে মন্ত্রণালয়। রেলওয়ের সেতু বিভাগ বলছে, টাকা বরাদ্দ পাওয়ার পর দাপ্তরিক কাজ ও টেন্ডার প্রক্রিয়া সম্পন্ন করতে একবছর চলে গেছে।
এরপর বন্যার কারণে কাজ শুরু করা যায়নি। বর্ষা মৌসুম শেষে সংস্কার কাজ শুরু হবে বলে জানায় তারা।
সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তর (সওজ) সূত্রে জানা গেছে, জরাজীর্ণ কিনব্রিজ সংস্কারের বিষয়ে ২০২০ সালে বিভাগীয় কমিশনার কার্যালয়ে বিভিন্ন উন্নয়ন প্রকল্পের সমন্বয় সভায় আলোচনা করা হয়। সেখানে সেতু সংস্কারের বিষয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে তিন সদস্যের একটি কমিটি করে দেওয়া হয়।
পরবর্তীতে সওজের পক্ষ থেকে সেতুটি সংস্কারে মন্ত্রণালয়ের কাছে অর্থ বরাদ্দ চেয়ে আবেদন করা হয়। ২০২১ সালের ফেব্রুয়ারিতে ২ কোটি ১৫ লাখ টাকা বরাদ্দ পায় সওজ সিলেট অফিস।
ওইবছরেরই জুনে বরাদ্ধের টাকা রেলওয়ের সেতু বিভাগকে বুঝিয়ে দেওয়া হয়। তবে এখন পর্যন্ত শুরু হয়নি সংস্কার।
সওজের প্রকৌশল বিভাগ সূত্র জানিয়েছে, কিনব্রিজ নির্মাণ করা হয়েছিল রেলওয়ে বিভাগের মাধ্যমে। লোহার কাঠামোর কাজে রেলওয়ের প্রকৌশল বিভাগ অধিক পারদর্শী। তাই কিনব্রিজ সংস্কার ও কিছু মেরামতকাজের জন্য রেলওয়ে কর্তৃপক্ষকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে।
তবে সওজের এক প্রকৌশলী নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, শুষ্ক মৌসুমে সেতুর সংস্কার কাজ করা উচিত ছিলো। তাহলে এতোদিনে কাজ শেষ হয়ে যেতো।
ব্রিটিশ আমলে লোহার কাঠামোর দৃষ্টিনন্দন এই সেতুটি ব্রিটিশ শাসনামলের রেলওয়ে বিভাগ নির্মাণ করে। টানা দুই বছর নির্মাণকাজ শেষে ১৯৩৬ সালে সেতুটি চলাচলের জন্য খুলে দেওয়া হয়েছিল।
তৎকালীন আসাম প্রদেশের গভর্নর মাইকেল কিনের নামে এই সেতুর নামকরণ হয় 'কিনব্রিজ'। প্রায় নয় দশক ধরে সচল সেতুটি বাংলাদেশের অন্যতম প্রাচীন এবং সিলেট অঞ্চলে সুরমা নদীর ওপর নির্মিত প্রথম সেতু। এর দৈর্ঘ্য ১ হাজার ১৫০ ফুট এবং প্রস্থ ১৮ ফুট।
এর আগে মুক্তিযুদ্ধের সময় ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ায় সেতুটি ১৯৭৭ সালে রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ প্রথমদফা সংস্কার করে। এরপর আর বড় ধরণের সংস্কার হয়নি।
সংস্কার কাজ শুরু না হওয়া প্রসঙ্গে রেলওয়েরে সেতু বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী (পূর্বাঞ্চল) মো. আবরার হোসেন বলেন, "টাকা পাওয়ার পর কিছু দাপ্তরিক কাজ সম্পন্ন করতে অনেকটা সময় চলে গেছে। দরপত্র প্রক্রিয়া সম্পন্ন করতেও দেরি হয়েছে।"
তিনি বলেন, "এরপর সিলেট অঞ্চলে বন্যা শুরু হয়ে গেলো। একারণে কাজ শুরুর প্রক্রিয়া এগোয়নি। এখন পানি না কমলে কাজ শুরু করা যাবে না। আশা করছি বর্ষা মৌসুম শেষে সংস্কার কাজ শুরু করা যাবে।"
সিলেট নগরের মাঝামাঝি এলাকার এই সেতুটি সড়ক ও জনপথ অধিপ্তরের নিয়ন্ত্রণাধীন। তবে এটি দেখভাল করে সিলেট সিটি করপোরেশনের প্রকৌশল বিভাগ। ২০১৯ সালের ১ সেপ্টেম্বর সেতুটি নড়বড়ে হয়ে পড়লে দুই দিকে লোহার বেষ্টনী দিয়ে সব ধরনের যান চলাচল বন্ধ করে সিটি করপোরেশন। তবে নাগরিকদের প্রতিবাদের মুখে ৫২ দিন পর যান চলাচলের জন্য সেতুটি খুলে দেয়া হয়।
সিলেট সিটি করপোরেশনের প্রধান প্রকৌশলী নুর আজিজুর রহমান বলেন, "কিনব্রিজ সিলেট তথা দেশের একটি এতিহ্য। সিলেটের পরিচয়বহনকারী স্থাপত্য এটি। তাই এটি টিকিয়ে রাখার স্বার্থে যানচলাচল বন্ধ করে ফুটওভার ব্রিজে (পদচারী-সেতু) রূপান্তর করার জন্য একটি প্রস্তাব আমরা ২০১৯ সালের সেপ্টেম্বর মাসে সওজকে দিয়েছিলাম।"
তিনি বলেন, "নাগরিকদের দাবির মুখে হালকা যান চলাচলের জন্য সেতুটি খুলে দেওয়া হয়েছে। তবে ঝুঁকি বিবেচনায় ভারি যান চলাচল বন্ধ রাখা হয়েছে।"
সংস্কারের জন্য বরাদ্ধ হওয়া টাকা গত বছর জুনেই রেলওয়ে কর্তৃপক্ষকে হস্তান্তর করা হয়েছে জানিয়ে সওজ সিলেটের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, "সেতুর কাঠামো যাতে যথাযথ থাকে, এজন্য রেলওয়েকে সংস্কার করতে দেওয়া হয়েছে। কবে সংস্কার কাজ শুরু হবে এ বিষয়ে তারাই ভালো বলতে পারবে।"
যান চলাচল বন্ধ করে পদচারী সেতু করার প্রস্তাব প্রসঙ্গে তিনি বলেন, "এব্যাপারে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ সিদ্ধান্ত নেবেন। তবে হুট করে কোনো সিদ্ধান্ত না নিয়ে সবদিক বিবেচনা করেই সিদ্ধান্ত নিতে হবে।"