পরিবেশবান্ধব উন্নয়নের দিকে এগিয়ে যাওয়ার তাগিদ বিশেষজ্ঞদের
পরিবেশের ক্ষতি এড়িয়ে প্রাকৃতিক ভারসাম্য রক্ষা করে অর্থনৈতিক উন্নয়নের দিকে এগিয়ে যেতে হবে। কারণ সবুজ অর্থনীতি টেকসই উন্নয়নের শক্তিশালী ভিত গড়ে দেয়। তাই পরিবেশবান্ধব বিনিয়োগে সবাইকে জোর দেওয়ার তাগিত দিয়েছেন রাজনীতিবিদ ও বিশেষজ্ঞরা।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সিনেট ভবনে শুক্রবার (২ আগস্ট) শুরু হওয়া 'ইন্টারন্যাশনাল কনফারেন্স অন এনভাইরনমেন্টাল প্রোটেকশন ফর সাসটেইনেবল ডেভেলপমেন্ট' (আইসিইপিএসডি-২০২২) শীর্ষক অনুষ্ঠানে এ কথা বলেন তারা। ৩ দিনব্যাপী এই কনফারেন্স শেষ হবে আগামীকাল ৪ সেপ্টেম্বর।
উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে বিজ্ঞানী, পরিবেশবিদ এবং বাংলাদেশ সেন্টার ফর অ্যাডভান্সড স্টাডিজের নির্বাহী পরিচালক এ আতিক রহমান বলেন, "বাংলাদেশকে অবশ্যই একটি সবুজ, স্থিতিস্থাপক এবং টেকসই উন্নয়নের পথ অনুসরণ করতে হবে।"
"অপরিকল্পিত নগরায়ন ও শিল্পায়নের ফলে জলবায়ুর স্বাভাবিক আচরণ ও প্রাকৃতিক ভারসাম্য নষ্ট হচ্ছে। জলবায়ুতে মারাত্নক নেতিবাচক প্রভাব ফেলছে। বন্যা, ঘুর্ণিঝড়, খড়া, তাবদাহ, ভূমিকম্প, নদীভাঙ্গন জলাবদ্ধতা, লবণাক্ততার কারণে প্রাকৃতিক দুর্যোগ হচ্ছে। জলবায়ু পরিবর্তন শুধু প্রাকৃতিক পরিবেশের ওপরই প্রভাব ফেলছে না বরং খাদ্য, কৃষি, বাসস্থান, স্বাস্থ্য চিকিৎসা, শিক্ষা, সেবা, অবকাঠামোসহ আর্থসামাজিক উন্নয়নের সব খাতকে ক্ষতিগ্রস্থ করছে," যোগ করেন তিনি।
প্ল্যানারি স্পিকার হিসেবে জাপানের পরিবেশবিদ অধ্যাপক হিরোইউকি মাৎসুদা বলেন, "আমাদের সুনীল অর্থনীতির ধারণার দিকে যেতে হবে, সেখানে সি-ফুড এবং সামুদ্রিক থেকে উৎপাদন, অফশোর জিওটেকনিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং, নবায়নযোগ্য শক্তি ব্যবহারের ওপর জোর দিতে হবে।"
তিনি বলেন, শিল্প কারখানার জন্য স্পেশাল ইকোনোমিক জোন রাখতে হবে, যেখানে কমপ্লায়ান্স পলিসি মেনে প্রতিষ্ঠান পরিচালিত হবে।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেন, জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে বিশ্বের যেসব দেশ সব চেয়ে বেশি ক্ষতির সম্মুখীন, তার মধ্যে বাংলাদেশ অন্যতম। 'বৈশ্বিক জলবায়ু ঝুঁকি সূচক ২০২১' শীর্ষক প্রতিবেদন অনুযায়ী, বাংলাদেশ জলবায়ু ঝুঁকিতে সপ্তম অবস্থানে রয়েছে।
তিনি বলেন, উন্নত দেশগুলোই কার্বন নিঃসরণের জন্য বেশি দায়ী। আজ বৈশ্বিক তাপমাত্র বেড়ে গেছে। প্রকৃতিকে অত্যাচার করতে করতে এমন যায়গায় নেওয়া হয়েছে যে, প্রকৃতি আর কিছুই মানতে চায় না। আমেরিকায় আজকে নদীর পানি শুকিয়ে যাচ্ছে, তাদের বিভিন্ন রাজ্যে পানির সমস্যা। পোল্যান্ডের নদীর মাছ পানির অভাবে পঁচে যাচ্ছে। ফ্রান্সের নদী শুকিয়ে যাচ্ছে। তাই আমাদের অবশ্যই পরিবেশকে রক্ষা করে উন্নয়ন করতে হবে। আগামী প্রজন্মের জন্য বাসযোগ্য পৃথিবী রেখে যেতে হবে।"
পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রী মোঃ শাহান উদ্দিন বলেন, বাংলাদেশ জলবায়ু পরিবর্তনের ঝুঁকি মোকাবেলার সাফল্য আন্তর্জাতিক অঙ্গনে প্রশংসিত হচ্ছে। জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবেলায় বাংলাদেশের কার্বন নিঃসরণ পরিকল্পনা বা হালনাগাদ করা ন্যাশনালি ডিটারমাইন্ড কন্ট্রিবিউশন (এনডিসি) বিশ্বে একটি অনুসরণীয় দৃষ্টান্ত। সরকার জাতীয় অভিযোজন পরিকল্পনা এবং মুজিব জলবায়ু সমৃদ্ধি পরিকল্পনা ২০২২-২০৪১ খসড়া চূড়ান্ত করেছে।
"বাংলাদেশ জলবায়ু পরিবর্তন ট্রাস্ট ফান্ডের অর্থায়নে এ পর্যন্ত ৩ হাজার ২৬৩ কোটি ৩২ লাখ টাকা ব্যয়ে ৭৮৯ টি প্রকল্প গ্রহণ করা হয়েছে," যোগ করেন তিনি।
বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের বন ও পরিবেশ বিষয়ক উপ-কমিটির চেয়ারম্যান ড. খোন্দকার বাজিউল হকের সভাপতিত্বে সেমিনারে উপস্থিত ছিলেন পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম, শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের উপমন্ত্রী ব্যরিস্টার মহিবুল হাসান চৌধুরী, সম্মেলন প্রস্তুতি কমিটির সম্পাদক এবং বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের বন ও পরিবেশ বিষয়ক উপ-কমিটির সদস্য সচিব দেলোয়ার হোসেন।
সম্মেলনের দ্বিতীয় ও তৃতীয় দিনে কার্জন হল ও সিরডাপ মিলনায়তনে বৈজ্ঞানিক বিভিন্ন বিষয়ের ওপর আলোচনা ও সেশন অনুষ্ঠিত হবে।
'সবুজ বাংলাদেশ-সমৃদ্ধ বাংলাদেশ' প্রতিপাদ্য নিয়ে এ সম্মেলনের আয়োজন করেছে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের বন ও পরিবেশ বিষয়ক উপ-কমিটি।