দেশ ছেড়ে পালানোর পর শ্রীলঙ্কার ক্ষমতাচ্যুত প্রেসিডেন্ট কেন আবার ফিরে এলেন?
৫০ দিনেরও বেশি সময় পর স্বদেশে ফিরলেন গোতাবায়া রাকাপাকসে। গত শনিবার শ্রীলঙ্কার পালিয়ে বেড়ানো সাবেক এ প্রেসিডেন্ট পা রাখেন কলম্বোর মাটিতে। সেখানকার বিমানবন্দরের নিরাপত্তা কর্মকর্তারা বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। এতে চরম অর্থনৈতিক সংকটে থাকা দেশটিতে বিক্ষোভের আগুন ফের ছড়িয়ে পড়তে পারে।
অর্থনৈতিক অব্যবস্থাপনার মাধ্যমে শ্রীলঙ্কাকে চরম সংকটের মুখে ঠেলে দেন গোতাবায়া। নিত্যপণ্যের অভাবে ফুঁসে ওঠে জনতা। এক পর্যায়ে তারা প্রেসিডেন্টের বাসভবন ও কার্যালয়ে প্রবেশ করে। গোতাবায়া তখন দেশেই আত্মগোপন করেন। এরপর ১৩ জুলাই তিনি একটি বিমানে করে দেশ ছেড়ে পালিয়ে যান প্রতিবেশী মালদ্বীপে।
মালদ্বীপের পর সিঙ্গাপুর ও থাইল্যান্ডেও যান গোতাবায়া। অর্থাৎ, গত ৫০ দিনে তিনি তিনটি দেশে ভ্রমণ করেছেন। দেশে চরম অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক সংকটের সময়ে তার ভ্রমণের কোনো ব্যাখ্যা এখনও দেননি গোতাবায়া।
শ্রীলঙ্কার কিছু অধিকারকর্মী তার বিরুদ্ধে অপরাধ আইনে বিচারের দাবি করেছেন। তবে গোতাবায়া একেবারে নিরুপায় নন। বর্তমানে ক্ষমতাসীন সরকারের অনেকেই তার পুরোনো মিত্র, তাই বিচারের সম্ভাবনাও ক্ষীণ। তবে ২ কোটি ২০ লাখ জনতার দ্বীপরাষ্ট্রে তার এই ফিরে আসা আবারো বিক্ষোভের জন্ম দেবে কিনা– তা এখনও নিশ্চিতভাবে বলা যাচ্ছে না।
বিশ্লেষকরা বলছেন, সাময়িকভাবে তিনটি এশীয় দেশ তাকে গ্রহণ করলেও- রাজনৈতিক আশ্রয় তিনি কোথাও পাননি। এই অবস্থায় আর কোনো দেশ তাকে নেওয়ার আগ্রহ না দেখানোয়, গোতাবায়াকে স্বদেশে ফিরতে হয়েছে।
গত ২৩ আগস্ট প্রকাশিত বার্তাসংস্থা রয়টার্সের এক প্রতিবেদনে বলা হয়, বিদেশে পলাতক থাকার সময় প্রাইভেট জেট ব্যবহার, বিলাসবহুল হোটেল স্যুইটে থাকাসহ নানান সুবিধা পেতে তিনি লাখ লাখ ডলার খরচও করেছেন। সর্বশেষ ছিলেন থাইল্যান্ডে। সেখানে এসব বিল তার ক্রমাগতই বাড়ছিল। ফলে থাইল্যান্ডে আরও বেশিদিন কাটানো তার পক্ষে অসম্ভব হয়ে ওঠে।
শ্রীলঙ্কার গৃহযুদ্ধে তামিল টাইগার বিদ্রোহীদের পরাজিত করায় একসময় দেশের সংখ্যাগুরু সিংহলী জনতার কাছে 'নায়ক' ছিলেন তিনি। আজ দেশটিতে তাকে অপছন্দ করে এমন মানুষের সংখ্যাই বেশি।
দেশটির মানবাধিকার কমিশনের সাবেক কমিশনার অম্বিকা সাতকুনানাথান বলেন, 'জনগণের এই প্রত্যাখ্যান তার অহমিকায় বড় আঘাত হানে। তিনি দেশে স্থায়ী বা অস্থায়ীভাবে থাকার কোনো জায়গা পাচ্ছিলেন না। যতোটা ভেবেছিলেন, তার চেয়েও কঠিন পরিস্থিতির মুখে পড়তে হয় ক্ষমতাচ্যুত এই নেতাকে।'
অম্বিকা আরও বলেন, 'এককালে এই রাজনীতিবিদকে মনে করা হতো দেবতার মতো ক্ষমতাধর। কারো কাছে জবাবদিহিতায় অভ্যস্ত নন তিনি। কিন্তু, এবার জনতা সেই দাবিই তুলছে'।
সূত্র: সিএনএন