রাজশাহীতে সাংবাদিকের ওপর হামলা, ৩২ ঘণ্টা পরও কাউকে গ্রেপ্তার করা হয়নি
টেলিভিশনের পর্দায় লাইভ চলাকালে, রাজশাহীতে সাংবাদিকদের ওপর হামলার ঘটনায় ৩২ ঘণ্টা পার হয়ে গেলেও এখনো কারও বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়নি আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। মামলা হওয়ার পরও কাউকে গ্রেফতার করতে পারেনি। ফলে ওই ঘটনার পর থেকে নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছে হামলায় আহত সাংবাদিকরা। তবে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী জানিয়েছে, তারা আসামীদের ধরার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন।
এর আগে সোমবার (৫ সেপ্টেম্বর) সকালে পেশাগত দায়িত্ব পালনের অংশ হিসেবে বরেন্দ্র বহুমুখী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (বিএমডিএ)-র কার্যালয়ে যান এটিএন নিউজের রিপোর্টার বুলবুল হাবিব ও ক্যামেরাপার্সন রুবেল ইসলাম। সেখান থেকে লাইভে সংবাদ সম্প্রচারের সময় বিএমডিএর নির্বাহী পরিচালক আব্দুর রশিদের নির্দেশে এটিএন নিউজের রিপোর্টার বুলবুল হাবিব ও ক্যামেরাপার্সন রুবেল ইসলামের ওপর হামলা চালায় কর্মচারীরা।
এ ঘটনায় রিপোর্টার বুলবুল হাবিব বাদী হয়ে সোমবার রাতেই নগরীর রাজপাড়া থানায় বিএমডিএর নির্বাহী পরিচালক আব্দুর রশিদকে প্রধান আসামী করে ৭ জনের নাম উল্লেখ করে অজ্ঞাতনামা আরও ১০ জনের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করেন। মামলার অন্য আসামিরা হলেন, বিএমডিএর ভান্ডার রক্ষক মো. জীবন, নির্বাহী পরিচালকের পিয়ন সেলিম (৪১), নির্বাহী পরিচালকের পিএ নুরুল ইসলাম (৪৫), আনসার সদস্য এনামুল (৩৫), বিএমডিএ দপ্তরের পিয়ন ফারুক (৪০) ও ড্রাইভার আব্দুস সবুর(৪২)-সহ অজ্ঞাতনামা আরও ৮/১০ জন।
মামলার এজাহারে বুলবুল হাবিব উল্লেখ করেন, পেশাগত দায়িত্ব পালনের অংশ হিসেবে সংবাদ সংগ্রহের জন্য তিনি ও তার ক্যামেরাপার্সন রুবেল ইসলাম রাজশাহীর বিএমডিএর প্রধান কার্যালয়ে যান। সেখানে ভিডিও ফুটেজ নেওয়ার একপর্যায়ে নির্বাহী পরিচালক আব্দুর রশিদ অফিসে প্রবেশ করে গাড়ি থেকে নেমেই উত্তেজিত ও রাগান্বিত হয়ে তাদের দিকে তেড়ে আসেন এবং তাদের ধাক্কা দিয়ে অন্যান্য বিবাদীদেরকে নির্দেশ দেন- মেরেপিটে বিএমডিএর ক্যাম্পাস কম্পাউন্ড থেকে বের করে দিতে।
তখন বিএমডিএর ভান্ডার রক্ষক মো. জীবনের নেতৃত্বে ১৬ জনের একটি দল এসে তাদের ওপর চড়াও হন ও গালিগালাজ করতে থাকেন। তখন এটিএন নিউজের টিভি পর্দায় লাইভ চলাকালে আসামিরা হামলা চালায়। এসময় ক্যামেরাপার্সন মো. রুবেল ইসলামের কাছ থেকে ক্যামেরা ছিনিয়ে নিয়ে ভাঙচুর করে এবং হত্যার উদ্দেশ্যে রুবেল ইসলামের মাথায় ও ডান কানে সজোরে আঘাত করে গুরুতর জখম করে। আহত হয়ে রুবেল রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ৩৩ নম্বর ওয়ার্ডে ভর্তি আছে। এছাড়া বুলবুল হাবিবের শরীরের বিভিন্নস্থানে এলোপাতাড়িভাবে কিল, ঘুষি ও মারধর করা হয়েছে। এতে তার বাম হাতের মধ্য আঙুল ও ডান হাতের কনুই থেকে আঙুল পর্যন্ত গুরুতর আঘাতপ্রাপ্ত হয়। লাইভের সময় তার কাছ থেকে মাইক্রোফোন ছিনিয়ে নিয়ে ভাঙচুর করা হয়।
বুলবুল হাবিব জানান, 'নতুন সময়সূচি অনুযায়ী সরকারি অফিস কেমন চলছে এ বিষয়ে সকাল ৮টার খবরে লাইভ করার জন্য এটিএন নিউজ অফিস থেকে অ্যাসাইনমেন্ট দেওয়া হয়। অফিস অ্যাসাইনমেন্টের অংশ হিসেবে সংবাদ সংগ্রহের জন্য আমরা বিএমডিএ কার্যালয়ে যাই। সেখানে গিয়ে আমরা ৮টা থেকে ভিডিও ফুটেজ নিতে থাকি। এই সামান্য ঘটনায় যে আমাদের ওপর এত বড় যে সংঘবদ্ধ সন্ত্রাসী হামলা হবে তা কখনোই কল্পনা করিনি'।
তিনি বলেন, আমাদের ১০-১৫ মিনিট ধরে পিটিয়ে ক্যাম্পাস কম্পাউন্ড থেকে ১০০ গজ দূরে রাস্তায় নিয়ে যাওয়া হয়। আমরা তাদের সর্বোচ্চ শাস্তি দাবি করছি।
রাজশাহী মেট্রোপলিটন পুলিশের কমিশনার আবু কালাম সিদ্দিক বলেন, 'আমরা এ ঘটনায় মর্মাহত। এ বিষয়ে গতকাল রাতেই আমরা মামলা রেকর্ড করি। মামলাটি এখন তদন্তাধীন আছে। আমরা বিভিন্নস্থান ভিডিও ফুটেজ ও মামলার এভিডেন্স সংগ্রহ করছি। এছাড়া কারা এই হামলার নেপথ্যে জড়িয়ে আছে, কেন এই হামলার ঘটনা ঘটলো সেসব বিষয়ে খতিয়ে দেখছি। মামলার তদন্তে যারা দোষী সাব্যস্ত হবে তাদের বিরুদ্ধে আমরা আইনানুগ ব্যবস্থা নেব'।
রাজশাহী জেলা প্রশাসক আব্দুল জলিল জানান, 'একটি সরকারি দপ্তরের ক্যাম্পাস কম্পাউন্ডে সাংবাদিকদের ওপর এ ধরনের হামলা সত্যিই অনাকাঙ্ক্ষিত ও দুঃখজনক। জেলা প্রশাসক হিসেবে এ ঘটনায় আমি দুঃখ প্রকাশ করছি। কারণ এটি মোটেও উচিত হয়নি। যেহেতু একটি সরকারি দপ্তরে এ ঘটনা ঘটেছে, আবার বিএমডিএর কর্মকর্তারাও যোগাযোগ করছেন তাই আমরা মনে করছি, রাজশাহী সিটি মেয়র, সাংবাদিক নেতৃবৃন্দ, বিএমডিএ এবং ডিসি অফিস মিলে বিষয়টি পারস্পরিক আলোচনার ভিত্তিতে বিষয়টি মীমাংসা করে ফেলা উচিত। যাতে প্রত্যেকেই প্রত্যেকের পেশায় মর্যাদা নিয়ে কাজ করতে পারে'।
এদিকে হামলার ঘটনার সত্যতা পাওয়ায় বিএমডিএর চেয়ারম্যান বেগম আকতার জাহান গতকাল দুপুরে ভান্ডার রক্ষক মো. জীবন ও ড্রাইভার আব্দুস সবুরকে সাময়িক বরখাস্ত করেছে।