‘অর্থসংকটে’ রাষ্ট্রায়ত্ত দুটি পাটকলের ইজারা প্রক্রিয়া স্থবির
অগ্রীম ভাড়া দিতে না পারায় চট্টগ্রাম ও খুলনা অঞ্চলের দুটি সরকারি পাটকল লিজ দিতে পারছে না বাংলাদেশ জুট মিল কর্পোরেশন (বিজেএমসি)।
মূলত, সিকিউরিটি অব লিজ হিসেবে ২৪ মাসের অগ্রিম ভাড়া একসঙ্গে পরিশোধ করতে হয়। কিন্তু লিজ পাওয়ার জন্য নির্বাচিতরা ভাড়া পরিশোধ করে মিল বুঝে নিতে পারেনি।
চট্টগ্রাম অঞ্চলের হাফিজ জুট মিল লিজের জন্য নির্বাচিত হয়েছে সাদ মুসা গ্রুপ ও খুলনা অঞ্চলের ক্রিসেন্ট জুট মিলসের জন্য মিমো জুট মিলস।
হাফিজ জুট মিল লিজের জন্য প্রতি মাসে সাদ মুসা গ্রুপকে ৬৪ লাখ টাকা ভাড়া প্রদান করতে হবে। সেই হিসাবে সিকিউরিটি অব লিজের জন্য প্রায় ১৫ কোটি টাকা দিতে হবে।
এখনও ভাড়া বাবদ পুরো টাকা দিতে না পারলেও ৫০ লাখ টাকা জমা দিয়েছে তারা। অবশিষ্ট টাকা পরিশোধে আগামী ডিসেম্বর পর্যন্ত সময় চেয়েছে সাদ মুসা গ্রুপ।
অন্যদিকে মিমো জুট মিল কত টাকায় লিজ নিয়েছে সেটা জানাতে চায়নি এই জুট মিল ও বিজেএমসি। তবে তারাও আংশিক টাকা পরিশোধ করেছে বলে জানানো হয়।
উল্লেখ্য, একই দরপত্রের মাধ্যমে নির্বাচিত দুটি প্রতিষ্ঠান অগ্রীম ভাড়া প্রদানের পর ঢাকা ও চট্টগ্রাম অঞ্চলের দুটি পাটকল উৎপাদনে ফিরেছে।
বিজেএমসি এক কর্মকর্তা টিবিএসকে জানান, লিজের শর্তানুযায়ী অগ্রীম ভাড়া পরিশোধের পরই চুড়ান্ত চুক্তি হবে। কিন্তু তারা অগ্রীম ভাড়া দিতে ব্যর্থ হলে মিল লিজ দেওয়া হবে না।
সিকিউরিটি অব লিজ হিসেবে বিজেএমসিকে এই ভাড়া পরিশোধ করবে লিজে আগ্রহী উদ্যোক্তা। লিজ চুক্তির মেয়াদ শেষ হওয়ার পর বিজেএমসিকে দেওয়া ভাড়া ফেরত পাবেন উদ্যোক্তারা।
আর চূড়ান্ত চুক্তির পর মিলের মাসিক ভাড়া পরিশোধে ৯ মাস গ্রেস পিরিয়ড পাবেন লিজ পাওয়া উদ্যোক্তা। অর্থাৎ চূড়ান্ত চুক্তির দশম মাস থেকে ভাড়া পরিশোধ করতে হবে।
চুক্তি অনুযায়ী, মিল লিজ পেতে বিজেএমসির কাছে একসঙ্গে ২৪ মাসের অগ্রীম ভাড়া জমা দিতে হবে। এরপরই বিজেএমসি ও লিজ পাওয়া প্রতিষ্ঠানের যৌথ টিম পরিদর্শন শেষে জুটমিল বুঝিয়ে দিবে।
লিজের জন্য চুড়ান্ত চুক্তি স্বাক্ষরের পর জন্য নির্বাচিত প্রতিষ্ঠানকে তিনমাসের মধ্যে মিল বুঝে নিয়ে উৎপাদনে ফিরতে হবে।
বিজেএমসি সূত্র জানায়, প্রতিষ্ঠান দুটি লিজের জন্য আংশিক ভাড়া পরিশোধ করেছে। প্রতিষ্ঠান দুটির আবেদনের প্রেক্ষিতে সময় বাড়ানোর পরও অবশিষ্ট ভাড়া পরিশোধ করতে পারেনি তারা। ফলে প্রায় ৬ মাসের বেশি সময় পার হলেও পাটকল লিজের চূড়ান্ত চুক্তিতে সাক্ষর করেনি বিজেএমসি।
শেষ খবর জানা পর্যন্ত, দুই দফা সময় বাড়ানোর পর চলতি বছরের ডিসেম্বর পর্যন্ত আরও সময় বাড়ানোর আবেদন জানিয়েছে সাদ মুসা গ্রুপ।
সাদ মুসা গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোহাম্মদ মহসীন টিবিএসকে বলেন, "আমরা আংশিক ভাড়া জমা দিয়েছি। অবশিষ্ট ভাড়া দিতে সময় চেয়েছি কারণ কিছুটা আর্থিক সংকট রয়েছে।"
তিনি বলেন, "২৪ মাসের ভাড়া একসঙ্গে পরিশোধ করতে হবে। মাসিক ভাড়া পরিশোধে গ্রেস পিরিয়ড দেওয়া হয়েছে ৯ মাস। আমরা চাই গ্রেস পিরিয়ড কমিয়ে আংশিক দেওয়া ভাড়ায় চুড়ান্ত চুক্তি করতে। বিজেএমসিকে আমরা জানিয়েছি, গ্রেস পিরিয়ড ৯ মাস নয়, দুই মাস দেওয়া হোক কিন্তু যা পরিশোধ করেছি, তাতেই যেন চুক্তি করা হয়।"
পাশাপাশি মিমো জুট মিলসও সময় বাড়ানোর আবেদন জানিয়েছে, তবে কতদিন সময় চেয়েছে, সেটা বলতে চাননি প্রতিষ্ঠানটির কর্মকর্তারা।
২০২০ সালের ১ জুলাই দেশের সব সরকারি পাটকল বন্ধ ঘোষণা করে ২৫ হাজার শ্রমিককে স্বেচ্ছায় অবসরে পাঠায় সরকার।
বেসরকারিকরণ পদক্ষেপের উদ্দেশ্য ছিল, বন্ধ কলের ছাঁটাইকৃত শ্রমিকদের কর্মসংস্থান সৃষ্টি করা, নতুন কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি করা, পাট ও বহুমুখী পণ্যের উৎপাদন এবং তাদের রপ্তানি সম্ভাবনা বৃদ্ধি করা।
সরকারি সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, বন্ধ মিলগুলোর মধ্যে ১৭টি সরকারি পাটকল বেসরকারি উদ্যোক্তাদের হাতে ছেড়ে দিতে ২০২১ সালে আন্তজার্তিক দরপত্র আহ্বান করে বিজেএমসি।
এই দরপত্রে সাড়া দিয়ে দেশি-বিদেশি প্রতিষ্ঠানের অর্ধশত আবেদন পায় সরকারি পাটকল দেখভালের দায়িত্বে থাকা বিজেএমসি।
পরবর্তীতে যাচাই-বাঁছাইয়ের পর প্রথম দফায় পাঁচটি পাটকলকে বেসরকারি খাতে ছেড়ে দেওয়া ড়ান্ত সিদ্ধান্ত হয়।
প্রথম ধাপে, বাংলাদেশের চট্টগ্রাম জোনের হাফিজ জুট মিলস এবং কেএফডি জুট মিলস, ঢাকা জোনের বাংলাদেশ জুট মিল ও জাতীয় পাটকল এবং খুলনা জোনে ক্রিসেন্ট জুট মিল হস্তান্তরের জন্য ইউনিটেক্স গ্রুপ, সাদ মুসা গ্রুপ, মিমো জুট মিলস, একটি বিদেশি উদ্যোগে বে গ্রুপ এবং যুক্তরাজ্যের জুট রিপাবলিক – এই পাঁচটি কোম্পানিকে বেছে নিয়েছে বিজেএমসি।
বে গ্রুপ এবং ইউনিটেক্স গ্রুপ ইতোমধ্যেই যথাক্রমে বাংলাদেশ জুট মিলস এবং কেএফডি জুট মিলসে উৎপাদন শুরু করেছে।
অন্যদিকে সিরাজগঞ্জের জাতীয় পাটকলের ইজারা চুক্তি এখনো চূড়ান্ত করেনি যুক্তরাজ্যের জুট রিপাবলিক।
এই বছরের শুরুতে বিজেএমসি আবার ১৩টি পাটকল ইজারা দেওয়ার জন্য দরপত্র আহ্বান করে। সেসব পাটকলের জন্য ১৮টি দেশি-বিদেশি কোম্পানি দরপত্র জমা দিয়েছে। যাচাই-বাছাই করে এ পর্যন্ত সাতটি পাটকল ইজারা দেওয়ার জন্য চূড়ান্ত করা হয়েছে।
বিজেএমসি সূত্র জানায়, বর্তমানে ওই মিলগুলো ইজারা দেওয়ার প্রক্রিয়া চলছে।