টানা ১৩ মাস বাড়ার পর সেপ্টেম্বরে পোশাক রপ্তানিতে নেতিবাচক প্রবৃদ্ধি
টানা ১৩ মাস ধরে রপ্তানি প্রবৃদ্ধি বাড়তে থাকার পর সেপ্টেম্বরে নেতিবাচক প্রবৃদ্ধির মুখে পড়েছে বাংলাদেশের পোশাক রপ্তানি খাত। সেপ্টেম্বরের প্রথম ১৮ দিনে আগের বছরের তুলনায় পোশাক রপ্তানিতে ১২ শতাংশের বেশি নেতিবাচক প্রবৃদ্ধি হয়েছে।
বাংলাদেশ গার্মেন্টস ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যান্ড এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশন (বিজিএমইএ)-এর তথ্য অনুসারে, এই ১৮ দিনে তৈরি পোশাক খাতে ১.৭২ বিলিয়ন রপ্তানি করলেও গত অর্থবছরের একই সময়ে এর পরিমাণ ছিল ১.৯৬ বিলিয়ন ডলার।
চলমান রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে প্রধান আমদানিকারক দেশগুলোতে রেকর্ড মুদ্রাস্ফীতিকে নেতিবাচক প্রবৃদ্ধির মূল কারণ বলছেন খাত সংশ্লিষ্টরা।
ভোক্তাদের চাহিদা কমে যাওয়ায় ওয়ালমার্টসহ বেশ কয়েকটি খুচরা বিক্রেতা ইতোমধ্যে কিছু ক্রয়াদেশ বাতিল করেছে। এছাড়াও কয়েকজন ক্রেতা তৈরি চালানের রপ্তানি বিলম্বিত বা স্থগিত করার অনুরোধ করছেন।
বিজিএমইএ সূত্র জানায়, সেপ্টেম্বরের ১১ দিন খাতে নেতিবাচক প্রবৃদ্ধি হয়েছে।
বিজিএমইএ-এর তথ্য অনুযায়ী, একদিনে ৮৯ শতাংশ প্রবৃদ্ধি যেমন অর্জিত হয়েছে, তেমনি কোনো কোনো দিনে প্রায় ৬৪ শতাংশ নেতিবাচক প্রবৃদ্ধি দেখা গেছে।
বিজিএমইএ জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের তথ্যের ভিত্তিতে এই হিসাব করেছে কেননা রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরো এখনও এর আনুষ্ঠানিক ঘোষণা দেয়নি।
দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডের সাথে কথা বলার সময় পোশাক রপ্তানিকারকরা জানান, চলতি বছরের আগস্ট থেকে পোশাকের চালান কমার পূর্বাভাস পাওয়া গিয়েছিল কেননা বেশিরভাগ কারখানার ক্রয়াদেশ কমতে দেখা গেছে যার প্রতিফলন মিলছে রপ্তানি আয়েও।
আগামী বছরের এপ্রিল থেকে মে পর্যন্ত তা অব্যাহত থাকতে পারে বলেও আশঙ্কা করছেন তারা।
স্প্যারো গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক শোভন ইসলাম বলেন, খুচরা বিক্রেতাদের দোকানে পণ্য জমে থাকায় খাতটি মন্দার সম্মুখীন হচ্ছে।
যুদ্ধের প্রভাবে সৃষ্ট অর্থনৈতিক মন্দা্র কারণে পোশাকের চাহিদা কমেছে। তিনি দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে বলেন, 'আমাদের নিয়মিত আইটেমগুলোতে ২০ শতাংশ এবং ফ্যাশন আইটেমগুলোতে ৬ শতাংশ পর্যন্ত ক্রয়াদেশ ঘাটতি দেখা গেছে যা ছয় থেকে সাত মাস পর্যন্ত চলতে পারে।'
প্লামি ফ্যাশনের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. ফজলুল হক বলেন, দুই মাস ধরে অর্ডার ক্রমাগত কমতে থাকায় নারায়ণগঞ্জ এলাকায় কিছু নিটিং কারখানা ইতোমধ্যেই বন্ধ হয়ে গেছে।
বিজিএমইএ সভাপতি ফারুক হাসান টিবিএসকে বলেন, উচ্চ মূল্যস্ফীতি এবং ব্যাংকের সুদের হার বৃদ্ধির কারণে রপ্তানিগামী দেশগুলোতে গত দুই মাস ধরে অনেক ক্রেতা অর্ডার দিতে দেরি করছেন এবং অনেকেই চালান আটকে রাখতে বলছে। এ কারণে সেপ্টেম্বরে পোশাকের চালান নেতিবাচক প্রবৃদ্ধির সম্মুখীন হয়েছে।
ইউরোপীয় ক্রেতাদের কাছ থেকে আগস্টে কিছু নতুন অর্ডার পাওয়ায় কিছুটা আশা দেখা দিলেও তারা খুবই কম দামে পণ্য চায় বলেও জানান তিনি।
বিজিএমইএ সভাপতি বলেন, টিকে থাকতে উদ্যোক্তারা নতুন বাজার বিশেষ করে জাপান, কোরিয়া এবং ভারত থেকে নতুন ক্রয়াদেশ খুঁজছেন।
'ইউরোপীয় বাজারের ওপর নির্ভরতা কমাতে আমরা তাদের কাছে যাচ্ছি এবং আমরা ইতোমধ্যেই গত অর্থবছরে এসব বাজারে বেশ ভালো প্রবৃদ্ধি দেখেছি," বলেন তিনি।
এছাড়া বাণিজ্য টেকসইকরণ নিশ্চিত করতে পোশাক খাতে পণ্যের বৈচিত্র্যকরণ এবং হাতে তৈরি ফাইবার-ভিত্তিক কাপড় তৈরিতেও বিনিয়োগের কথা উল্লেখ করেন তিনি।