ইরানের তৈরি আত্মঘাতী ড্রোন ইউক্রেনীয় বাহিনীর আতঙ্ক হয়ে উঠেছে!
ইরানের তৈরি শাহিদ-১৩৬ ড্রোনের মোকাবিলায় ব্যাপক চ্যালেঞ্জের মধ্যে পড়েছে ইউক্রেনীয় সেনাবাহিনী। ড্রোনটি সফল আঘাত হেনে ধ্বংস করছে তাদের সাঁজোয়া যান, ট্যাংক ও আর্টিলারি সিস্টেম। এই ক্ষয়ক্ষতি বেশি হচ্ছে, উত্তরপূর্বের খারকিভ অঞ্চলে। এমনটাই জানা গেছে প্রভাবশালী মার্কিন গণমাধ্যম দ্য ওয়াল স্ট্রিট জার্নালের একটি প্রতিবেদন সূত্রে।
এই ড্রোনটি দামে সস্তা; তবে মার্কিন, ব্রিটিশ, ইসরায়েলি বা চীনা সিস্টেমের মতো অগ্রসর নয়। কিন্তু, রণাঙ্গনে কৌশলীভাবে ব্যবহার করলে শাহিদ-১৩৬ যে ইউক্রেনীয় স্থল সেনাদের প্রতি হুমকির কারণ হতে পারে– তা এরমধ্যেই প্রমাণ করছে।
ইউক্রেনে ইরানি ড্রোনের ব্যবহার তেহরানের সামরিক শিল্পের জন্য প্রযুক্তি ও ভূরাজনীতি দুই দিক থেকেই একটি বড় পদাঙ্ক। এ ঘটনা আরও প্রমাণ করে, দেশটি হয়ে উঠছে আঞ্চলিক 'পাওয়ারহাউজ' –আর সেজন্যই চীন নেতৃত্বাধীন সাংহাই কো-অপারেশন অর্গানাইজেশন (এসসিও)'র মতো বহুমাত্রিক ফোরামে গুরুত্বপূর্ণ সদস্য হিসেবে অন্তর্ভুক্ত হয়েছে।
ইরানি ড্রোনে ব্যবহার করা অনেক যন্ত্রই যুক্তরাষ্ট্রের মিত্রসহ পশ্চিমা কিছু দেশেই তৈরি। তাই এ ঘটনা উন্মোচিত করেছে বৈশ্বিক ড্রোন প্রকৌশল ও যন্ত্রাংশ বাজারের আইনি ফাঁকফোকর।
ইউক্রেনে বিধ্বস্ত হওয়া শাহিদ-১৩৬ কামিকাজি ড্রোনের একটি চিত্র পাওয়া গেছে। খারকিভের কুপিয়ানস্ক অঞ্চলে এটিকে গুলি করা ভূপাতিত করা হয়েছে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
এতে ড্রোনটির একটি ডানা দেখা গেছে, যেখানে ইংরেজিতে এম-২১৪ পরিচিতি সংকেতের সাথে সিরিলিক ভাষায় লেখা রয়েছে গেরান-২। সে সূত্রেই ইউক্রেনের লড়াইয়ে ইরানি ড্রোনের ব্যবহারের প্রথম দৃশ্যমান প্রমাণ মেলে।
ইরানের শাহিদ ড্রোনের বেশকিছু ধরন তৈরি করেছে বলে মনে করেন সমর বিশেষজ্ঞরা। অবশ্য, এনিয়ে অল্পবিস্তর তথ্যই প্রকাশ করেছে তেহরান। তবে ত্রিকোণাকৃতির এই ড্রোনের বড় ধরনগুলি অন্তত ২ হাজার কিলোমিটার পাল্লার বলে ধারণা করা হয়। ফলে দূর থেকে আঘাত হানতে এটি একটি কার্যকর অস্ত্র, যার জরুরি দরকার ছিল রাশিয়ার।
ড্রোনটি তৈরি করেছে দীর্ঘদিন ধরে ড্রোন নির্মাণের অভিজ্ঞতা-সম্পন্ন ইরানি কোম্পানি- শাহিদ এভিয়েশন ইন্ডাস্ট্রিজ। কোম্পানিটি শাহিদ-১২৯ নামের আরেকটি ড্রোন তৈরি করেছে, যা অনেকটা দেখতে আমেরিকান প্রেডিটর ড্রোনের মতো। আবার আমেরিকান রিপার ড্রোনের অনুকরণে তৈরি করেছে শাহিদ-১৪৯। এছাড়াও, রাডারকে অনেকটাই ফাঁকি দিতে সক্ষম স্টিলথ বৈশিষ্ট্যের শাহিদ-১৮১ ও ১৯১ ড্রোনের নির্মাতাও প্রতিষ্ঠানটি।
রাশিয়াকে দেওয়া ইরানি আরেকটি ড্রোন হচ্ছে মোহাজের-৬, এটি চারটি আকাশ থেকে ভূমিতে নিক্ষেপযোগ্য ক্ষেপণাস্ত্র বহন করতে পারে।
মধ্যপ্রাচ্যে পশ্চিমা সমর্থনের কল্যাণে প্রচলিত সামরিক শক্তিতে এগিয়ে ইরানের শত্রু সৌদি আরব ও ইসরায়েল। সক্ষমতার এই ঘাটতি পূরণে ড্রোনের মতো সস্তা ও বিকল্প শক্তি তৈরির দিকে মনোযোগ দেয় ইরান। এর আওতায় তৈরি করেছে নানান ধরনের ব্যালেস্টিক মিসাইল, দ্রুতগামী ছোট সামরিক নৌযান ও ড্রোন।
যুদ্ধেও প্রমাণিত ইরানি ড্রোন। এর আগে ইয়েমেনের হুথি যোদ্ধারা ইরানি ড্রোন দিয়ে সৌদি আরব ও সংযুক্ত আরব আমিরাতে বেশকিছু স্থাপনায় সফল হামলা চালিয়েছে। রাষ্ট্র দুটিতে থাকা অত্যাধুনিক আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থাও যা ঠেকাতে পারেনি।
সাময়িক উপদ্রুপ নাকি স্থায়ী চ্যালেঞ্জ?
ইউক্রেনের গোলন্দাজ বাহিনীর ৯২তম মেকানাইজড ব্রিগেডের কমান্ডার কর্নেল রডইন কুলাগিনের বরাতে ওয়াল স্ট্রিট জার্নাল জানিয়েছে যে, খারকিভ অঞ্চলে ইউক্রেনীয় সাঁজোয়া যান ও কামানগুলির ওপর হামলা করছে ইরানি ড্রোন।
ড্রোনগুলি ওড়ে জোড়ায় জোড়ায়; এরমধ্যেই তারা আঘাত হেনে ধ্বংস করেছে চারটি কামান এবম্নগ একটি সাঁজোয়া যান। কর্নেল কুলাগিন জানান, ড্রোনগুলি দুটি ১৫২ মিলিমিটার স্বচালিত হাউইটজার যান (এসপিএইচ), আরও দুটি ১২২ মিলিমিটার এসপিএইচ এবং দুটি বিটিআর সাঁজোয়া যান ধ্বংস করেছে।
তিনি আরও জানান, প্রথমে আমেরিকার তৈরি একটি এম-৭৭৭ হাউইটজার ধবংসের মাধ্যমে শাহিদ ড্রোনের কার্যকারিতা পরীক্ষা করেছে রাশিয়া। সুফল প্রমাণিত হওয়ার পর এটি দিয়ে আক্রমণের মাত্রা অনেকগুণে বাড়িয়েছে।
এপর্যন্ত কেবল ইরানের খারকিভ অঞ্চলেই ইরানি ড্রোন ব্যবহারের তথ্য জানা গেছে। সেখানে এক আগ্রাসী অভিযান পরিচালনা করছে ইউক্রেনীয় সামরিক বাহিনী। ইতোমধ্যেই হাজারো কিলোমিটার ভূখণ্ড পুনরুদ্ধারের দাবিও করেছে কিয়েভ।
যুদ্ধের শুরুর দিকে এ অঞ্চলে রুশ বাহিনীর গোলন্দাজ কামান ও সাঁজোয়া যানের সংখ্যাধিক্য ছিল। এখন তা নেই, সেই ঘাটতি অনেকটা পূরণ করছে ড্রোনের ব্যবহার। এমনটাই জানান ওই কর্নেল।
যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় গত ১৪ সেপ্টেম্বর জানায়, উড্ডয়নের পর প্রতিটি শাহিদ-১৩৬ ড্রোন একবারই ব্যবহার করা যায়, এটির পাল্লা অন্তত ২,৫০০ কিলোমিটার।
আপাতত ইউক্রেনের কৌশলগত লক্ষ্যেই রাশিয়া এটি বেশি ব্যবহার করছে বলে মনে করা হচ্ছে।
- সূত্র: দ্য ইউরেশিয়ান টাইমস