মোহাম্মদ বিন সালমানকে প্রধানমন্ত্রী ঘোষণা করলেন সৌদি বাদশা
সৌদি বাদশাহ সালমান বিন আবদুল আজিজের নির্দেশে মন্ত্রীসভায় আনা রদবদলে যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমানকে দেশটির প্রধানমন্ত্রী হিসেবে ঘোষণা করা হয়েছে।
মঙ্গলবার (২৭ সেপ্টেম্বর) রাষ্ট্রীয় বার্তা সংস্থা সৌদি প্রেস এজেন্সির (এসপিএ) এক রাজকীয় ফরমানের (ডিক্রি) বরাত দিয়ে কাতারভিত্তিক গণমাধ্যম আল জাজিরা এ কথা জানিয়েছে।
প্রিন্স মোহাম্মদ সৌদির অঘোষিত শাসক হিসেবেই ছিলেন। এ ঘোষণার মধ্য দিয়ে বিশ্বের সবচেয়ে বড় তেল রপ্তানিকারক এ দেশটির সরকারপ্রধান হিসেবে তার ভূমিকার আনুষ্ঠানিকতা সম্পন্ন করা হলো।
নামের আদ্যাক্ষর এমবিএস হিসেবেও পরিচিত সৌদি যুবরাজ এত দিন ডেপুটি প্রধানমন্ত্রীর পাশাপাশি প্রতিরক্ষামন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালন করে আসছিলেন। এবার নতুন প্রতিরক্ষা মন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব নিতে যাচ্ছেন তার ছোট ভাই খালিদ বিন সালমান। খালিদ আগে ডেপুটি প্রতিরক্ষামন্ত্রীর দায়িত্বে ছিলেন।
রাজকীয় ফরমান অনুযায়ী অন্য সব জ্যেষ্ঠ মন্ত্রী তাদের স্বপদে বহাল থাকবেন। তাদের মধ্যে আছেন পররাষ্ট্র মন্ত্রী প্রিন্স ফয়সাল বিন ফারহান আল সৌদ, অর্থমন্ত্রী মোহাম্মদ আল জাদান এবং বিনিয়োগমন্ত্রী খালিদ আল ফালিহ।
অতীতে প্রধানমন্ত্রীর পদটি বাদশাহ নিজের হাতেই রাখতেন। এখন ৮৬ বছর বয়সী বাদশাহ ধীরগতিতে হলেও বেশ দৃঢ়ভাবেই ক্ষমতা হস্তান্তর করছেন।
মঙ্গলবার ঘোষিত রাজকীয় ফরমানে যুবরাজের এ নিয়োগের কারণ উল্লেখ করা হয়নি। তবে সৌদি প্রেস এজেন্সি (এসপিএ) জানিয়েছে দেশটির প্রধান হিসেবে এখনো বাদশাহ-ই আছেন এবং মন্ত্রীসভাগুলোতে উপস্থিত থাকলে তিনি সভাপতিত্ব করবেন।
এ বছরের মে মাসে স্বাস্থ্যপরীক্ষা এবং চিকিৎসার জন্য বাদশাহকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছিল, ওই সময়ের এক প্রতিবেদনে এ কথা জানিয়েছিল এসপিএ।
৩৭ বছর বয়সী যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমান এর আগে অর্থনীতি, প্রতিরক্ষা, তেল এবং অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তাসহ দেশটির গুরুত্বপূর্ণ বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ে দায়িত্ব পালন করে এসছেন।
ভিশন ২০৩০
২০১৬ সালের এপ্রিলে প্রিন্স মোহাম্মদ ভিশন ২০৩০-এর ঘোষণা দেন। ভিশন ২০৩০ হলো সৌদি আরবের ভবিষ্যতের জন্য একটি রূপকল্প। এ রূপকল্পের লক্ষ্য সৌদিকে আরবকে আরব দেশসহ সমগ্র ইসলামিক দেশগুলোর প্রাণকেন্দ্র হিসেবে প্রতিষ্ঠা করা, এবং তিনটি মহাদেশের সংযোগস্থল বানানো।
এ উদ্যোগের আওতায় দেশটির অর্থনীতিকে বেসরকারীকরণ ও বৈচিত্র্যকরণের পাশাপাশি এটিকে তেলের ওপর কম নির্ভরশীল করা হবে। এছাড়াও, ২০৩০ সাল নাগাদ একটি ই-গভর্নমেন্ট সিস্টেম প্রতিষ্ঠা করা হবে।
২০১৭ সালে মোহাম্মদ বিন সালমানকে সৌদি সিংহাসনের উত্তারধিকারী হিসেবে যুবরাজ ঘোষণা করা হয়।
এর আগে প্রতিরক্ষামন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালনকালীন তার উল্লেখযোগ্য পদক্ষেপগুলো হলো অপারেশন ডিসাইসিভ স্টর্ম এবং ২০১৫ সালের মার্চ মাসে শুরু হওয়া ইয়েমেনে হুতিদের বিরুদ্ধে সৌদির নেতৃত্বে যুদ্ধ।
আঞ্চলিক প্রতিদ্বন্দ্বী ইরানের প্রভাব ঠেকাতে যুবরাজ কঠোর পররাষ্ট্রনীতি অবলম্বন করছিলেন। ক্ষমতায় আসার পর থেকে তিনি সৌদি আরবকে মৌলিকভাবে বদলে দিতে শুরু করেন। তেলের ওপর নির্ভরশীলতা কমাতে অর্থনীতিতে বৈচিত্র্য আনার পাশাপাশি নারীদের গাড়ি চালানোর অনুমতি প্রদান এবং আলেমদের ক্ষমতা হ্রাস করেন তিনি।
তার এই পুনর্গঠনে ভিন্নমত পোষণকারীদের ওপর কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়। এর ফলে কতিপয় অ্যাক্টিভিস্ট, রাজপরিবারের সদস্য, নারী অধিকার কর্মী, এবং ব্যবসায়ীদের জেল খাটতে হয়েছিল।
২০১৭ সালের নভেম্বর মাসে দুর্নীতি দমন অভিযানের নামে চার জন মন্ত্রী, ১১ জন প্রিন্স এবং অনেক হাই-প্রোফাইল উদ্যোক্তাদের আটক করা হয়েছিল। এদের মধ্যে মূল লক্ষ্যবস্তু ছিলেন তার প্রত্যক্ষ প্রতিদ্বন্দ্বীরা। এতে করে যুবরাজের ক্ষমতা আরও দৃঢ় হয়ে ওঠে।
২০১৮ সালে ইস্তাম্বুলে সৌদি কলামিস্ট খাশোগির মৃত্যুর জের ধরে যুক্তরাষ্ট্র ও সৌদির মধ্যকার সম্পর্কে ভাটা পড়ে। এই দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক পুনর্গঠনে এমবিএস চলতি বছরের শুরুতে সৌদি আরবে মার্কিন রাষ্ট্রপতি জো বাইডেনের সাথে সাক্ষাৎকারের আয়োজন করেন।