নিম্ন ও নিম্ন মধ্যবিত্তের আবাসন নিশ্চিত করতে নীতি প্রণোদনার পরামর্শ নগর পরিকল্পনাবিদদের
ঢাকার আবাসন চাহিদা ও জোগানের মূল পরিকল্পনা করা দরকার নিম্ন ও নিম্ন মধ্যবিত্ত শ্রেণীকে কেন্দ্র করে। তাই স্বল্প ও মধ্যম আয়ের আবাসনকে নীতি প্রণোদনা দেবার পাশাপাশি নাগরিক সুবিধাদি নিশ্চিত করে মানসম্মত আবাসন করার পরামর্শ দিয়েছেন নগর পরিকল্পনাবিদরা।
শুক্রবার পরিকল্পনাবিদদের নিয়ে গঠিত ইন্সটিটিউট ফর প্ল্যানিং অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট (আইপিডি) এর বিশ্ব বসতি দিবস উপলক্ষ্যে আয়োজিত 'ঢাকা মহানগরীতে সকলের জন্য মানসম্মত আবাসন; প্রেক্ষিত ও করণীয়' শীর্ষক এক অনলাইন সংলাপে পরিকল্পনাবিদরা এ পরামর্শ দেন।
সংলাপে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপনে আইপিডি'র নির্বাহী পরিচালক পরিকল্পনাবিদ আদিল মোহাম্মদ খান বলেন, "ঢাকা মহানগরীর আবাসনের সংকট মূলত নিম্ন ও নিম্ন মধ্যবিত্ত শ্রেণীর জন্য অত্যন্ত তীব্র হওয়াতে আবাসন পরিকল্পনায় স্বল্প আয়ের আবাসনকে বিশেষ প্রণোদনা দেওয়া উচিত। বিভিন্ন আইন-বিধি-পরিকল্পনা প্রণয়নে ও বাস্তবায়নে অনুসৃত পরিকল্পনার স্ট্যান্ডার্ড বা মান আধুনিক নগর গড়বার সহায়ক নয়। এই পরিস্থিতি উত্তরণে নিম্ন ও নিম্ন মধ্যবিত্ত আয়ের লোকদের জন্য ভূমির সংস্থান করা ও পাবলিক প্রাইভেট পার্টনারশিপ মডেলে আবাসন উদ্যোগ গ্রহণ করা প্রয়োজন।"
এ নগর পরিকল্পনাবিদ বলেন, অপরিকল্পিত শিল্পায়ন ও অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড ঢাকার আবাসনের উপর ক্রমাগত চাপ ফেলেছে, যা একই সাথে ঢাকামুখী অভিগমনের ও অন্যতম কারণ।
"বেসরকারি খাতে নিম্ন আয়ের লোকদের আবাসন তৈরিতে নীতি প্রণোদনা দেওয়ার জন্য ঢাকা বিশদ অঞ্চল পরিকল্পনার দেওয়া প্রস্তাবনা, স্বল্প আয়ের লোকদের জন্য আবাসন জোগান বৃদ্ধি করতে পারে," বলেন তিনি।
ঢাকায় প্লট ভিত্তিক আবাসন প্রকল্পকে বন্ধ করে ফ্ল্যাট ও ব্লকভিত্তিক আবাসিক প্রকল্প তৈরি করবার জন্য বিশদ অঞ্চল পরিকল্পনার প্রস্তাবনা বাস্তবায়নের মাধ্যমে নাগরিক সুবিধাদি নিশ্চিত করে ক্রমান্বয়ে ঢাকায় মানসম্পন্ন আবাসন নিশ্চিত করা সম্ভব বলে মন্তব্য করেন এ পরিকল্পনাবিদ।
এদিকে আইপিডি'র উপদেষ্টা পরিকল্পনাবিদ অধ্যাপক ড. আকতার মাহমুদ বলেন, "ঢাকার আবাসন চাহিদা ও জোগানের আলোচনা হওয়া উচিত মূলত নিম্ন ও নিম্ন মধ্যবিত্ত শ্রেণীকে কেন্দ্র করে। প্রকৃত টার্গেটকৃত মানুষের জন্য আবাসন ব্যবস্থা করতে হবে। এজন্য বৃহৎ একটি প্রকল্প হাতে নেওয়া যেতে পারে, যার মাধ্যমে সবার হাউজিং ব্যবস্থা হবে।"
তিনি আরও বলেন, যাদের ফ্লাট কেনার সামর্থ্য নেই কিন্তু ভাড়া থাকার সামর্থ্য আছে তাদের জন্য একটি পরিকল্পনা করার দরকার।
আবাসন বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক ড. শাম্মী আকতার সেতু বলেন, "২০১৬ সালের জাতীয় গৃহায়ন নীতিমালা অনুযায়ী 'জাতীয় গৃহায়ন পরিষদ' গঠিত হবার কথা, কিন্তু অদ্যাবধি এই পরিষদ কার্যকর হয়নি; ফলে সবার জন্য আবাসন নিশ্চিত করবার প্রয়োজনীয় উদ্যোগ ও পরিকল্পনা গ্রহণ করা সম্ভবপর হয়নি।"
ড্যাপ এর প্রকল্প পরিচালক ও নগর পরিকল্পনাবিদ মো. আশরাফুল ইসলাম বলেন, বৈশ্বিক শহরগুলোর তুলনায় ড্যাপে এফএআর এর মান তুলনামূলক বেশি দেওয়া হয়েছে। এক্ষেত্রে মালয়েশিয়া, ভারত, পাকিস্তানের শহরগুলোর তুলনা তুলে ধরেন তিনি।
"মালয়েশিয়াতে প্লট কেন্দ্রিক উন্নয়নকে নিরুৎসাহিত করে ব্লক ডেভেলপমেন্ট করে একদিকে যেমন উন্মুক্ত স্থান, নাগরিক সুবিধা নিশ্চিত করা হয়েছে, পাশাপাশি নিম্ন আয়ের লোকদের জন্য আবাসন ইউনিট তৈরি করা হয়েছে। এবারের ড্যাপে এ ধরনের প্রস্তাবনা দেওয়া হয়েছে," বলেন তিনি।
আইপিডির পরিচালক পরিকল্পনাবিদ মোহাম্মদ আরিফুল ইসলাম বলেন, "আবাসনকে শুধুমাত্র 'থাকবার জায়গা' হিসেবে বিবেচনা না করে ব্যাপক অর্থে আবাসনের জন্য প্রয়োজনীয় সুযোগ সুবিধা নিশ্চিত করবার জন্য পরিকল্পনা কৌশল নির্ধারণ করা উচিত। ফলে বিশদ অঞ্চল পরিকল্পনা অনুযায়ী মানসম্মত আবাসন তৈরির প্রয়োজনীয় কর্মকৌশল নির্ধারণে আলোচনা ব্যাপৃত হওয়া উচিত।"
আলোচনায় বক্তারা বলেন, ঢাকা মহানগরীতে মানসম্মত আবাসন নিশ্চিত করতে বিভিন্ন আয়ের লোকদের আবাসন চাহিদার প্রকৃত বিশ্লেষণের পাশাপাশি আবাসনের অনুষঙ্গ হিসেবে বিদ্যালয়-হাসপাতাল-কমিউনিটি সেন্টারসহ প্রয়োজনীয় নাগরিক সুবিধাদি, অবকাঠামো, খেলার মাঠ-পার্ক সহ বিনোদন সুবিধা, মৌলিক পরিসেবা নিশ্চিত করা প্রয়োজন।
উল্লেখ্য, সকলের জন্য আবাসন ও মানসম্মত জীবনমান নিশ্চিত করতে ১৯৮৬ সাল থেকে সারা বিশ্বে প্রতিবছর অক্টোবর মাসের প্রথম সোমবার জাতিসংঘ ঘোষিত বিশ্ব বসতি দিবস পালিত হয়ে আসছে।
বাংলাদেশেও গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয় এর উদ্যোগে এ দিবসটি পালন করা হচ্ছে। এ বছর দিবসটির প্রতিপাদ্য হচ্ছে 'মাইন্ড দ্য গ্যাপ: লিভ নো ওয়ান অ্যান্ড প্লেস বিহাইন্ড'।