শেয়ার হস্তান্তর জটিলতায় এমারেল্ড অয়েলের মালিকানা পাচ্ছেনা মিনোরি বাংলাদেশ
ঋণের বিপরীতে স্পন্সরদের শেয়ার ব্যাংকে বন্ধক থাকায় জাপানি কোম্পানি মিনোরি কো লিমিটেডের অঙ্গপ্রতিষ্ঠান মিনোরি বাংলাদেশ এখনো এমারেল্ড অয়েলের মালিকানা পুরোপুরি বুঝে পায়নি।
জাপানি এ কোম্পানিটি চলতি বছরের জানুয়ারিতে ৩০ কোটি টাকা বিনিয়োগ করে স্পন্দন রাইস ব্র্যান অয়েল কোম্পানির উৎপাদন শুরু করে, বিনিয়োগের বিপরীতে স্পন্সর এবং পরিচালকদের শেয়ারের ৩০% বা প্রায় ৫০ কোটি টাকা পাওয়ার কথা কোম্পানিটির।
মেজরিটি শেয়ার না থাকায় মিনোরি বাংলাদেশ যৌথমূলধন কোম্পানি ও ফার্মসমূহের পরিদপ্তরে (আরজেএসসি) কোম্পানির মালিকানা পরিবর্তনের আবেদন করতে পারছে না।
বোর্ডের নিয়ন্ত্রণ পেতে মেজরিটি শেয়ার ধারণ নিশ্চিতে বিনিয়োগের বিপরীতে শেয়ার ইস্যু করতে নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) মতামত চেয়েছে বর্তমান পরিচালনা পর্ষদ।
টাঙ্গাইলভিত্তিক মিনোরি বাংলাদেশ প্রধানত ধান, শাকসবজি এবং ফলসহ অরগানিক ফসল নিয়ে কাজ করে। গত বছর কোম্পানিটি কার্যক্রম অচল হয়ে থাকা এমারল্ড অয়েল কিনে নেয়।
২০২১ সালের মার্চ মাসে কোম্পানিটি ব্যবসা পুনরায় চালু করতে পাঁচজন স্বতন্ত্র পরিচালক নিয়োগ করে এমারল্ড অয়েলের বোর্ডকে পুনর্গঠন করে বিএসইসি।
পরবর্তীতে, কোম্পানির পরিশোধিত মূলধনের কমপক্ষে ২% শেয়ারধারী শেয়ারহোল্ডারদের মধ্য থেকে দুজন পরিচালক নিয়োগ করা হয়।
মিনোরি বাংলাদেশ সেকেন্ডারি মার্কেট থেকে ৭.৮১% শেয়ার কিনে কোম্পানির বোর্ডে দুইজন প্রতিনিধি নিয়োগ দিয়েছে।
কোম্পানির বোর্ডে ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. আফজাল হোসেন টিবিএসকে বলেন, "শেয়ার স্থানান্তর নিয়ে জটিল অবস্থা তৈরি হয়েছে। তবে এই জটিলতা এ বছরের মধ্যেই শেষ হবে।"
কারখানা মেরামত, ঋণ নিয়মিতকরণ, কাঁচামাল, বকেয়া ফি ও অন্যান্য খাতে মিনোরি বাংলাদেশ প্রায় ৩০ কোটি টাকা বিনিয়োগ করেছে তেল কোম্পানিটি সচলের চুক্তি সই করে এর প্রধান স্পন্সর সৈয়দ হাসিবুল গণি গালিবের সাথে। বেসিক ব্যাংক থেকে ঋণ নিয়ে দুর্নীতির অভিযোগে বিচারের মুখে দেশ ছেড়ে পালিয়েছিলেন তিনি।
কোম্পানী সূত্র জানিয়েছে, হাসিবুল গণি গালিবের ২১% বা ১.২৮ কোটি টাকার শেয়ারের ১.১২ কোটি টাকা বন্ধক রেখে ব্যাংক ঋণ নেওয়ায় শেয়ার বা মালিকানা পরিবর্তন হোঁচট খেয়েছে।
কোম্পানিটির বাকি ২ জন স্পন্সর সৈয়দ মনোয়ারুল ইসলাম ও মোঃ এনামুল হক খানের আছে ১২.১০ লাখ বা ২.০৩% এবং ৩.১৭ লাখ বা ০.৫৩% শেয়ার।
আর তিনজন শেয়ারহোল্ডার প্রত্যেকে ২ শতাংশের বেশি শেয়ার ধারণ করছেন, যারা কোম্পানিটি তালিকাভুক্তির সময় শেয়ারহোল্ডার পরিচালক ছিলেন।
সর্বশেষ গত আগস্টের হিসাব অনুযায়ী, স্পন্সর-শেয়ারহোল্ডার ও মিনোরি বাংলাদেশ মিলে ৩৮.২৬% শতাংশ শেয়ারের মালিক। আর ৩.৬৭ কোটি বা ৬১.৭৬% শেয়ার ফ্রি ফ্লোট বা সাধারণ ও প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারী মালিকানায় রয়েছে।
২০০৮ সালে এমারল্ড অয়েল ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেড যাত্রা শুরু করে, ২০১১ সালে স্পন্দন-ব্র্যান্ডেড রাইস ব্র্যান অয়েলের উৎপাদন শুরু করে এবং ২০১৪ সালে শেয়ারবাজারে প্রবেশ করে। কোম্পানিটি দুই কোটি সাধারণ শেয়ার ইস্যু করে ২০ কোটি টাকা সংগ্রহ করে।
কিন্তু কয়েক বছরের মধ্যে প্রতিষ্ঠাতার ঋণ কেলেঙ্কারি প্রকাশের সাথে সাথে এর ব্যবসা এবং শেয়ার বাজারে উভয় ক্ষেত্রেই মন্দার মুখে পড়ে এবং ২০১৭ সালে কার্যক্রম বন্ধ হয়ে যায়।